ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

আর্জেন্টিনার চোখ শেষ চারে

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪৩

বিশ্ব সেরার মঞ্চে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর লক্ষ্যে ছুটে চলেছে আর্জেন্টিনা। আর প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে মরিয়া নেদারল্যান্ডস। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এই দুই দল। লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে লড়বে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি। বিশ্ব মঞ্চে দুই দল এরই মধ্যে পরস্পরের বিপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে সমানে-সমান অবস্থানে তারা। এবার সমতা ভাঙার লড়াইয়ে নামবে দল দুটি।

সৌদি আরব, মেক্সিকো ম্যাচে রড্রিগো ডি পলের পারফরম্যান্স ছিল বড্ড সাদামাটা। পোল্যান্ড ম্যাচে দেখালেন কিছুটা ঝলক। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরলেন চেনা রড্রিগো ডি পল। উপহার দিলেন আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স। কাতার বিশ্বকাপের পথচলায় ২৮ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার ফিরে পেতে শুরু করেছেন নিজের হারানো ছন্দ; ফিরছেন পুরান আস্থার জায়গায়। তাতে স্বস্তির সুবাতাস বইছে আর্জেন্টিনা শিবিরেও।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শুক্রবার সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচের আগে অবশ্য চাউর হয়েছে ডি-পলের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের খবর। আতলেতিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন সুখবর—সবকিছু আছে ঠিকঠাক। গ্রুপ পর্বের শুরুর দিকে অবশ্য ঠিকঠাক ছিল না তার পারফরম্যান্স। সৌদি আরবের বিপক্ষে লিওনেল মেসি দশম মিনিটে দলকে এগিয়ে নিলেও মাঝমাঠে পায়ের নিচে যেন মাটি খুঁজে পাননি ডি-পল। লেয়ান্দ্রো পারেসেদের সঙ্গে জমেনি তার জুটি। তাই মধ্যমাঠের লাগামটা ঠিক থাকেনি আর্জেন্টিনার মুঠোয়। দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে সৌদি আরবের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়ে মাঠ ছাড়ে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়েও মাঝমাঠের মধ্যমণি হতে পারেননি ডি-পল। আক্রমণ শুরুর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বারবার তাল কেটে যাওয়ায় আর্জেন্টিনার গোল পাওয়ার অপেক্ষা বিরতি পেরিয়ে চলে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। তবে মেসি ও এনসো ফার্নান্দেসের গোলে জিতে স্কালোনির দল। জয়ের আনন্দ আর সৌদি ম্যাচের হারে জেগে ওঠা শঙ্কার মেঘ কেটে যাওয়াটা কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দেয় ডি-পলের বিবর্ণতা।

লিওনেল মেসি ছন্দে থাকলে তাকে থামানো প্রায় অসম্ভব। এমনকি তিনি সেরা রূপে না থাকলেও কাজটা সহজ নয়। তবে কঠিন সেই চ্যালেঞ্জ ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভালোভাবেই সামলেছিল নেদারল্যান্ডস। পরে যদিও টাইব্রেকারে কপাল পোড়ে ডাচদের। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আবারও লড়াইয়ের সুযোগ পেয়ে সেই হারের বদলা নিতে চান নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন খাল। বললেন, এবার জয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী তার দল।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দুই দলের ম্যাচটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয়। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে জিতে ফাইনালের টিকিট পায় আর্জেন্টিনা। পুরো ম্যাচে মেসিকে সফলতার সঙ্গে আটকে রাখে নেদারল্যান্ডস, ওই সময়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দলটির কোচ ছিলেন ফন খাল।

বৈশ্বিক আসরে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে নাম লেখানোর অপেক্ষায় আছেন লিওনেল মেসি। স্রেফ একটি গোল প্রয়োজন সময়ের সেরা এই ফরওয়ার্ডের। হাইভোল্টেজ লড়াইটির আগে দুই দলের আরও কিছু পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাক।

বিশ্বকাপে এ নিয়ে ষষ্ঠবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। আগের পাঁচ দেখায় দুটি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দল। আরেকটি ড্র। বিশ্ব মঞ্চে দুই দলের প্রথম দেখায় হারের তেতো স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৭৪ সালে জার্মানির গেলসেনকেইশেনে ৪-০ গোলে জেতে নেদারল্যান্ডস। সেবার বৈশ্বিক আসরে প্রথমবার ফাইনাল খেলে পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে যায় ডাচ্রা। ১৯৭৮ সালের আসরে আবারও দেখা হয় আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের। ফাইনাল ম্যাচে ৩-১ গোলের দারুণ জয়ে সেবার নিজেদের প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে লাতিন আমেরিকার দলটি।

১৯৯৮ সালে বৈশ্বিক আসরে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারায় নেদারল্যান্ডস। ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে গোলশূন্য ড্র হয় তাদের ম্যাচ। ২০১৪ আসরে সাও পাওলোর সেমিফাইনালে গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জেতে আর্জেন্টিনা। সবশেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ পড়ার পর টানা ১৯ ম্যাচে অপরাজিত নেদারল্যান্ডস। আর্জেন্টিনার ৩৬ ম্যাচের অপরাজেয় পথচলা থামায় সৌদি আরব। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার-ফাইনালে লিওনেল মেসির দল।

১৯৮৬ সালে নিজেদের দ্বিতীয় ও সবশেষ বিশ্ব সেরার ট্রফি ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। সেবার ফাইনালে তারা পশ্চিম জার্মানিকে হারায় ৩-২ গোলে। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালের পর ২০১০ সালেও ফাইনাল খেলে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু প্রতিবারই তাদের সঙ্গী হতাশা। সবশেষ বার তাদের ১-০ গোলে হারায় স্পেন। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ২৩ ম্যাচ খেলে লিওনেল মেসির গোল ৯টি। এ নিয়ে পঞ্চম বৈশ্বিক আসরে খেলছেন তিনি। বিশ্ব সেরার মঞ্চে আর্জেন্টিনার হয়ে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সর্বোচ্চ ১০ গোলের রেকর্ড ছুঁতে স্রেফ আর একটি চাই মেসির।

বিশ্বকাপে এর আগে তিনবার টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে দুইবারই হেরেছে নেদারল্যান্ডস। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে এবং ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনার কাছে। পেনাল্টি শুটআউটে তাদের একমাত্র জয় ২০১৪ সালে, কোস্টারিকার সঙ্গে। সব মিলিয়ে মোট ৯ বার সাক্ষাৎ হয়েছে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের। যেখানে ৪ ম্যাচ জিতে এগিয়ে ডাচ্রা। মূল ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয় ১টি; তবে আরও দুবার তারা মূল ম্যাচ ড্রয়ের পর জিতেছে টাইব্রেকারে। বাকি দুই ম্যাচ ড্র।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ