ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ব্রাজিলের চাই সেমির টিকিট

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৭

পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল এবারও ফেভারিট দলগুলোর একটি। রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করার অভিযানে তাদের পরের চ্যালেঞ্জ গত আসরের রানারআপ ক্রোয়েশিয়া। যে দলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত অপরাজিত লাতিন আমেরিকানরা। আজ শুক্রবার সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তিতের দল। আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু মাঠের লড়াই।

আদতে লড়াইটা দুই দলের। তবে এর মাঝেও থাকে ছোট ছোট অনেক লড়াই। আসছে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও যেমন আছে। এই দ্বৈরথটা দেইয়ান লভরেন ও নেইমারের। আরও একবার মুখোমুখি হচ্ছেন পুরনো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ফেভারিট ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্রোয়েশিয়া। প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন ক্রোয়াট ডিফেন্ডার লভরেন। এখনও পর্যন্ত তিনবার নেইমারের মুখোমুখি হয়ে সবগুলোতেই হেরেছেন ৩৩ বছর বয়সী লভরেন। তার দলের বিপক্ষে নেইমার গোল করেছেন চারটি।

ওই তিন ম্যাচের মধ্যে ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-১ গোলে হারায় ব্রাজিল। ঘরের মাঠে আসরের ম্যাচটিতে নেইমার করেন জোড়া গোল। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহখানেক আগে অ্যানফিল্ডে দুই দলের প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে জেতে ব্রাজিল। সেবার নেইমার গোল করেন একটি। নেইমারের বিপক্ষে লভরেনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়তো ২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে। গ্রুপ পর্বের ফিরতি দেখায় লভরেনের লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারায় পিএসজি। ফরাসি দলটির দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার।

প্যারিসের সেই রাতে মাস্টারক্লাস পারফরম্যান্স কঝলে ধরেন নেইমার। তাকে আটকে রাখতে হিমশিম খেতে হয় লভরেনকে। ওই মৌসুমে শেষ হাসি যদিও লিভারপুলই হেসেছিল চ্যাম্পিনস লিগ জিতে। তবে লভরেন জায়গা হারিয়ে ফেলেন একাদশে। পিএসজির বিপক্ষে হারের পর প্রতিযোগিতাটিতে বাকি ম্যাচগুলোর আর একটিতে শুধু তাকে শুরুর একাদশে রেখেছিলেন কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।

লিভারপুল ছেড়ে লভরেন এখন খেলেন রাশিয়ার ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গে। শুক্রবার শুধু নেইমারকে আটকানোর চ্যালেঞ্জই নয় তার সামনে; রিশার্লিসন, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, লুকাস পাকেতাকে থামানোর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে তাকে। শেষ ষোলোয় ভয়ঙ্কর সুন্দর ফুটবল খেলে দক্ষিণ কোরিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে ওই চারজনই পান জালের দেখা। লভরেন সাধারণত ডান দিকে সেন্টার-ব্যাক হিসেবে শুরু করেন। তাকে সহায়তা করার জন্য আছেন লাইপজিগের ইয়োস্কো গাভারদিওল। বিশ্বকাপে ২০ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডারের পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত উজ্জ্বল। বেশ কয়েকটি দারুণ ট্যাকল করে দলকে রক্ষা করেছেন তিনি।

চলতি আসরে ক্রোয়েশিয়া এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে গোল হজম করেছে স্রেফ দুটি। তবে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে এবারই হয়তো সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে গত আসরের রানার্সআপরা। দল দুটি এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে চারবার। ২০০৫ সালে প্রথমটি ড্র হওয়ার পর টানা তিনটি জিতেছে ব্রাজিল। এবার ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার যেমন একটি জয়ের আক্ষেপ ঘোচানোর লড়াই, তেমনি নেইমারের বিপক্ষে প্রথম জয়ের আরেকটি সুযোগ লভরেনের সামনে।

একমাত্র দল হিসেবে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে খেলেছে ব্রাজিল। তবে সবশেষ ২০০২ সালে শিরোপা জেতার পর আর ফাইনালে যেতে পারেনি তারা। এ নিয়ে বিশ্বকাপে ষষ্ঠ আসর খেলছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্ব সেরার মঞ্চে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য চার বছর আগে রানার্সআপ হওয়া। রাশিয়া আসরের ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হেরে যায় তারা। বিশ্বকাপে নিজেদের সবশেষ ১১ ম্যাচের ১০টিতে অপরাজিত ক্রোয়েশিয়া। তাদের একমাত্র হার ফ্রান্সের বিপক্ষে, ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে (৪-২)।

এবার দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে অপরাজিত থেকে কাতারে আসে ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর নিজেদের শেষ ম্যাচে ১-০ গোলে হেরে যায় তারা ক্যামেরুনের কাছে। এবার নিয়ে সবশেষ আট বিশ্বকাপেই অন্তত কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলছে ব্রাজিল। এর মধ্যে ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে শিরোপা ঘরে তোলে তারা। ১৯৯৮ সালে হয়েছিল রানারআপ। ২০০২ সালের পর কেবল একবার সেমি-ফাইনালে খেলেছে ব্রাজিল। ঘরের মাঠে ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে সেবার তারা হারে ৭-১ গোলে।

এবারের আসরে এখন পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচের মধ্যে কেবল একটিতে ৯০ মিনিটের মধ্যে জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে পায় ৪-১ গোলের জয়। মরক্কো ও বেলজিয়ামের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে দলটি। শেষ ষোলোয় জাপানের বিপক্ষে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় ১-১ সমতায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে জেতে ৩-২ ব্যবধানে। চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে জালের দেখা পান নেইমার। শেষ ষোলোয় দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলে জেতা ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন ব্রাজিলের এই তারকা। ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-১ গোলে হারানোর ম্যাচে দুটি গোল করেছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনবার টাইব্রেকারের পরীক্ষা দিতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। প্রতিবারই সফল হয়েছে তারা। ২০১৮ সালে শেষ ষোলোয় ডেনমার্কের পর কোয়ার্টার-ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়াকে হারায় দলটি। এরপর গত সোমবার একইভাবে জেতে তারা জাপানের সঙ্গে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আগের চার দেখায়ই অপরাজিত ব্রাজিল। জিতেছে তিনটি, আরেকটি ড্র। বিশ্বকাপে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ হয়েছে দুবার। ২০০৬ সালে ১-০ গোলে এবং ২০১৪ সালে ৩-১ গোলে জেতে ব্রাজিল।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ