ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের বিষোদগার ছিল চোখে পড়ার মতো। ইউরোপের ১১ দেশের অধিনায়করা সোচ্চার ছিলেন কাতার নীতি নিয়ে।
২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে ইউরোপিয়ানরা ফিফার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের চোখে ছোট্ট এ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটি একটা ভয়ংকর স্থান। বিশেষ করে নারীদের জন্য দেশটিকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছিল না তারা।
সৌদি আরবের ফ্যান ডালিয়া আবু সুল্লিয়াহ। ছবি : আল-জাজিরা
বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়া কাতারের মানবাধিকার পরিস্থিতি, নারীর পোশাকের স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছে, প্রকাশ করা হয়েছে নানা রকম শঙ্কা। বিশ্বকাপ শুরুর ক্ষণেও দর্শকদের মধ্যে কাতার নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে যতই দিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে সেই ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। কাতারের ইসলামি সংস্কৃতি ও মুসলিম নীতিতে মুগ্ধ পশ্চিমারা।
ইংল্যান্ড থেকে খেলা দেখতে আসা এলি মলোসন কাতারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বলেন, আমি মনে করেছিলাম কাতার মেয়েদের জন্য খুবই ভয়ংকর একটা জায়গা। আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এখানে আসার পর যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে আমি যা ভেবেছি, সেটি ঠিক ছিল না। নারী হিসেবে কাতারে ঘুরে আমি নিরাপদবোধ করেছি।
কামিলা ফারিরা । ছবি : আল-জাজিরা
মলোসন নিজে ‘হার গেম টু’ নামের একটি নারীবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যে সংগঠন ফুটবলে নারী দর্শকদের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করে থাকে। তিনি জানিয়েছেন, কাতার আসার আগে তার বাবা এতটাই অস্বস্তিতে ছিলেন যে তিনি শেষ পর্যন্ত এখানে তার সঙ্গী হয়েছেন।
মাঠে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকাটাকেও ইতিবাচক বিবেচনা করে মলোসন বলেন, মাঠে যেকোনো ধরনের অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকাটা ভালো হয়েছে। এতে গ্যালারির পরিবেশ ভালো থাকছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে হই-হুল্লোড় পছন্দ করি। উদ্দামতায় আমার আপত্তি নেই। তবে কাতারের স্টেডিয়ামগুলোর পরিবেশ অনেক ভালো, শান্ত। বেশ পারিবারিক।’
২১ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন নারী দর্শক আরিয়ানা গোল্ড বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রায় একই কথা বলেছেন, কাতারে আসার আগে আমি ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। ভেবেছিলাম এখানকার পরিবেশটা খুবই কট্টর হবে। ভেবেছিলাম এই দেশটা খালি পুরুষদের, মেয়েদের জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু না, আমি এই দেশে খুব আনন্দে আছি, স্বস্তিতে আছি।
ইংল্যান্ডের শেফিল্ড থেকে আসা ৩৩ বছর বয়সী এমা স্মিথও গলা মিলিয়েছেন মলোসন ও আরিয়ানার সঙ্গে, আমি এখানে খুবই নিরাপদবোধ করছি। কোনো সমস্যা নেই। অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকাটা বরং নারীদের জন্য অনেক নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছে।
লুসাইল স্টেডিয়ামে হাজার হাজার ব্রাজিলিয়ান ভক্তের মাঝখানে বসেছিলেন কুয়েতি ফুটবল ভক্ত হনুফ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, কাতার বিশ্বকে দেখিয়েছে যে অ্যালকোহল ছাড়াই ফুটবল উপভোগ করা যায় এবং নারীরা তাদের নিরাপত্তার জন্য ভয় না পেয়ে এটি উপভোগ করতে পারে।
রয়টার্স ও আল-জাজিরা অবলম্বনে
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ