প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে গোলের দেখা পেল আর্জেন্টিনা। গোল করেছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ডানপ্রান্ত থেকে মোলিনা ক্রস থেকে আলতো পা ছুঁয়ে লক্ষ্যভেদ করেন অ্যালিস্টার। দেশের জার্সিতে এটি তার প্রথম গোল। ৪৭ মিনিটে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেল ১-০ গোলে।
মেসির পেনাল্টি মিস, অসাধারণ সেজেসনিতে লড়াইয়ে পোল্যান্ড
৩৮ মিনিটে মেসিকে ডি বক্সের ভেতরে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। বল ফেরাতে গিয়ে সেজেসনির হাতের সঙ্গে মেসি ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেসি। রেফারি ভিএআরের সহায়তা নিয়ে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি দেয়। কিন্তু মেসির শট ঠেকিয়ে নায়ক হয়ে গেছেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সেজেসনি। পোলিশ এই গোলরক্ষক গ্রুপ পর্বের আরেক ম্যাচে সৌদি আরবের নেওয়া পেনাল্টি শটও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
৪ মিনিট পর সেজেসনি আরেকবার আর্জেন্টিনাকে হাতাশায় ডোবান। ডি বক্সের বাইরে থেকে আলভেরেজের নেওয়া শট ফিস্ট করেন। ফিরতি বল পেয়েছিলে আকুনা। কিন্তু তার নেওয়া শটে জোর না থাকায় জায়গায় দাঁড়িয়ে বল পেয়ে যা সেজেসনি।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে গোল পায়নি কোনো দল। আর্জেন্টিনা ম্যাচের ৬৫ শতাংশ বল দখল করেও গোল করতে পারেনি। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও তা রুখে দিয়েছে পোল্যান্ড। অন্যদিকে ড্র করলেই যথেষ্ট এমন ম্যাচে পোল্যান্ডকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আক্রমণে কোনো প্রাণ নেই। গোল করার তেমন চেষ্টাও তারা করেননি। নিষ্প্রভ রয়েছেন দলের সেরা তারকা লেওয়ানডোস্কি।
গোল পেতে মরিয়া আর্জেন্টিনা
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে জিততেই হবে। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে মেসির দল আক্রমণে যাবে এটাই স্বাভাবিক। শুরু থেকেই তাদের খেলায় আক্রমণের মিছিল। মেসি ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে একাধিক শট নিয়েছেন। ডি মারিয়া বল নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছেন একাধিকবার। কিন্তু পোলিশ দূর্গ এখনও ভাঙতে পারেনি দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে গোলের সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছিল তারা। ডানপ্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে মেসি আলতো ছোঁয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ডিফেন্ডার বল নাগালে পেয়ে ক্লিয়ার করেন। এরপর আকুনা কোনাকুনি শট নিলেও পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক আর্জেন্টিনা
একটু এদিক সেদিক হলেই মেসির নেয়া শটটা জালে ঢুকে যেত। ম্যাচের দশম মিনিটে বামপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকেছিলেন মেসি। ভালো অবস্থানে গিয়ে শটও নিয়েছিলেন। সেখানে পোল্যান্ডের গোল রক্ষক সেজেসনি তার নেয়া শট জায়গায় দাঁড়িয়ে ফিরিয়ে দেন। এর আগে একাধিকবার পোল্যান্ডের রক্ষণদূর্গে আক্রমণ চালিয়েছেন মেসি, ডি মারিয়া, ওটামেন্ডিরা। ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে না থাকায় আক্রমণ পূর্ণতা পায়নি। ১৬ মিনিটে আকুনাও ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর থেকে তার নেওয়া শট পোস্টের অনেক উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড
কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষেলো নিশ্চিত করতে পোলান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে হারলেই আর্জেন্টিনাকে বিদায় নিতে হবে। জিতলে নিশ্চিত হয়ে যাবে রাউন্ড অব সিক্সটিন।
আবার গ্রুপের অন্য ম্যাচে সৌদি আরব-মেক্সিকো ড্র করলে পোলিশদের সঙ্গে ড্র করেও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরব জিতলে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে, মেক্সিকো জিতলে ও আর্জেন্টিনা ড্র করলে আসবে গোল পার্থক্যের হিসাব।
নানা সমীকরণের বেড়াজালে আটকে থাকা এই ম্যাচকে ঘিরে উন্মাদনার শেষ নেই। বিশেষ করে লিওনের মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই।
ম্যাচটি হচ্ছে স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ।
হেড টু হেড
বিশ্বকাপে এর আগে দুবার পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে স্টুর্টগার্টে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ৩–২ গোলে হেরেছিল লাতিন আমেরিকার দলটি। চার বছর পর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে সে হারের প্রতিশোধ নেয় আর্জেন্টিনা। কেম্পেসের জোড়া গোলে ২–০ ব্যবধানে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। আজ তৃতীয় দফা মুখোমুখিতে জিতবে কে? এর বাইরে নয় মুখোমুখিতে আর্জেন্টিনার জয় পাঁচটিতে, পোলান্ডের দুটিতে। ড্র হয়েছে দুই ম্যাচ।
আর্জেন্টিনা একাদশ (৪-২-৩-১)
এমিলিয়ানো, মোলিনা, রোমেরো, ওটামেন্ডি, আকুনা, দি পল, এনজো, ম্যাক অ্যালিস্টার, মেসি, আলভারেস, দি মারিয়া।
পোল্যান্ডের একাদশ (৪-৪-২)
সেজেসনি, কামিল গ্লিক, জ্যাকব কিভিওর, বার্তোস বেরেসজিনস্কি, গ্রজেগর্জ ক্রাইচোয়াক, ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক, পিওতর জিলিনস্কি, প্রজেমিস্লাও, ফ্রাঙ্কোস্কি, ম্যাটি ক্যাশ, রবার্ট লেওয়ানডোস্কি ও কারল সুয়েডেস্কি।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ