প্রতি ৪ বছর পরপর মাঠে গড়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। এ বছরের আগে পেরিয়ে গেছে ২১টি আসর। কিন্তু এবারের আসরটি একেবারেই ভিন্ন। বদলে গেছে ইতিহাস। খরচ কিংবা আধুনিকায়ন সব দিক থেকেই ২০২২ বিশ্বকাপ আলাদা। এসবের ভিড়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পবিত্র কুরআনের কথা। ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে কাতার। ৯২ বছরের ইতিহাসে এই নজির সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়েছে দেশটির ২০ বছর বয়সী যুবক ঘানিম আল মুফতাহর নাম। বিশেষভাবে সক্ষম এ যুবক মানবদরদি হিসেবেই পরিচিত।
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো আর্থের’ ২২তম আসরে ২০ নভেম্বর জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলো কেড়েছেন ঘানিম। জন্ম থেকেই পা নেই ঘানিমের। কডাল রিগ্রেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু সেসব প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে ঘানিম কাতারের জনপ্রিয় ইউটিউবার, একজন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার ও মানবসেবী।
আল মুফতাহ প্রথমবার বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হন ২০১৮ সালে, ১৬ বছর বয়সে। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত টেডএক্সের অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানে তিনি তার কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম নিয়ে কথা বলেন। যে রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরের নিচের অংশ বৃদ্ধি পায় না।
কোরআন তেলাওয়াতের ছাড়াও ঘানিম এবারের বিশ্বকাপে ফিফার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন। ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঘানিম জানান, ফিফা বিশ্বকাপের একজন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমি আশার, শান্তির এবং মানুষের মধ্যে ঐক্যের বার্তা পাঠাতে চাই।
ঘানিম তার পরিবারের সাহায্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেছেন। তার মতো যারা পায়ে চলাচল করতে পারেন না, সংস্থাটি থেকে তাদেরকে হুইলচেয়ার উপহার দেওয়া হয়। মানবদরদি কাজের জন্য তিনি সারা পৃথিবীতেই পরিচিত। ২০১৪ সালে কুয়েতের আমি শেখ শাবাহ আল আহমদে আল শাবাহ তাকে ‘শান্তির দূত’ নামে অভিহিত করেন।
ফুটবল ঘানিমের পছন্দের খেলা। স্কুলজীবন থেকেই হাতে ভর দিয়ে বিশেষভাবে ফুটবল খেলে আসছেন তিনি। তার ইচ্ছে প্যারালিম্পিয়ানে খেলা। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি ফুটবল খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে রোববার (২২ নভেম্বর) মাঠে গড়িয়েছে ২২তম বিশ্বকাপের আসর। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে প্রথমবার মধ্যপ্রাচ্যে আয়োজিত ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো ন আর্থে’র।
=
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে আলোর রোশনাইয়ে সাজানো হয়েছে কাতারের পার্ল আইল্যান্ড। এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড বিটিএসের গায়ক জাংকুক ও কাতারের ফাহাদ আল–কুবাইশি বিশ্বকাপের অফিশিয়াল গান ‘ড্রিমারস’–এ পারফর্ম করবেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে শীতকালে এটাই প্রথম আসর। আরব বিশ্বেও এই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। ৬০ হাজার আসনবিশিষ্ট আল বায়ত স্টেডিয়ামে ছড়ানো হবে আলোর রোশনাই। চোখ ধাঁধানো আতশবাজির জন্য উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানটি স্থানীয় সময় রাতে করা হচ্ছে।আল বায়ত স্টেডিয়ামে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শক। এর মধ্যে সিংহভাগই কাতার ও ইকুয়েডরের সমর্থক। স্টেডিয়ামের একাংশ হলুদ এবং অন্য অংশে সাদা রংয়ের ঢেউ। বিশ্বকাপ ট্রফি মাঠে একটি শোকেসের মধ্যে রাখা হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ