ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

যাদের পায়ের জাদুতে মাতবে বিশ্ব

প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২২, ১০:১৪

বিশ্বকাপ এলে যে কয়েকটি ‘কমন’ প্রশ্ন চায়ের কাপে, আলোচনার টেবিলে তর্ক-বিতর্কের ঝড় তোলে, তার মধ্যে একটি-এবারের বিশ্বকাপ মাতাবেন কারা? কাতারের আসরের ‘গোল্ডেন বুট’ উঠবে কার হাতে? এই তালিকায় স্বাভাবিকভাবে আছে সময়ের সেরা ফরওয়ার্ড লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, কিলিয়ান এমবাপেরা। বিস্ময়কর মনে হতে পারে, কিন্তু বাজিকরদের কাছে এদের চেয়েও এগিয়ে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন! কাতারে আজ উঠবে বিশ্বকাপের পর্দা। দলীয় লড়াইয়ের ভেতরে চলবে সোনার জুতো জয়ের লড়াইও। সেখানে এই চেনামুখগুলোর থেকে নাকি অন্য কেউ হুট করে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসে জিতে নেবে গোল্ডেন বুট, তা সময়ই বলে দেবে।

লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা

গোল তার কাছে নস্যি। যেন চাইলেই মেলে। কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, এরনান ক্রেসপো, সার্জিও আগুয়েরো, গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় পেছনে ফেলেছেন অনেক আগেই। সবশেষ ‘গাবিগোল’ খ্যাত বাতিস্তুতার ৫৬ গোলের মাইফফলক পেরিয়ে তিনি বসেন সিংহাসনে। বর্তমানে এ চূড়াকে রীতিমতো সপ্তাকাশে তুলে নিয়েছেন। আকাশি নীল-সাদা জার্সিতে খেলা ১৬৫টি ম্যাচে ৯১ গোল এই মহাতারকার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন মেসির চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল আলি দাইয়ি (১০৯টি) ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর (১১৭টি)। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে আর্জেন্টিনার কাতারে যাওয়ার পেছনে দারুণ অবদান মেসির।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পর্তুগাল

ইদানীং সময়টা ভালো যাচ্ছে না মোটেও। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মাত্র একবার জালের দেখা পেয়েছেন। ইউরোপা লিগে মাত্র দুইবার। তিনি পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, ১৯১টি। কেবল পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতাই নন, আন্তর্জাতিক গোলের হিসাবেও রোনালদো চূড়ায়। গত বছর জুনে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে ফ্রান্সের জালে জোড়া গোল করে ছুঁয়েছিলেন আলি দাইয়ির ১০৯ গোলের রেকর্ড। ওই বছর সেপ্টেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দলের ২-১ ব্যবধানে দুই গোলই করেছিলেন রোনালদো; প্রথম গোলে এককভাবে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। পরের পথচলায় এই সংখ্যাটাকে ১১৭-তে আপাতত উন্নিত করেছেন তিনি।

নেইমার জুনিয়র, ব্রাজিল

ব্রাজিল দলে সবার আগে আসবে নেইমার জুনিয়রের নাম। অসাধারণ এক প্রাপ্তির হাতছানিও আছে ৩০ বছর বয়সি এই ফরওয়ার্ডের সামনে। সেলেসাওদের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ৭৫ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নেইমার। মাত্র ২ গোল বেশি নিয়ে তার ওপরে কেবল কিংবদন্তি পেলে। তাছাড়াও রেকর্ড পাঁচ বিশ্বকাপের সর্বশেষটি ২০০২ সালে জেতা ব্রাজিল এবার মুখিয়ে ষষ্ঠ শিরোপার স্বাদ পেতে। সম্প্রতি পিএসজিতে এমবাপের সঙ্গে নানা ইস্যুতে বিরোধের কারণে শিরোনামে আসা নেইমারও উন্মুখ হয়ে আছেন বিতর্কের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সাফল্যের আলোয় ভাসতে। এখন যদি শরীরটা ফিট থাকে ঠিকঠাক, ব্রাজিলের পথচলা যদি গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পেরিয়ে ছুটতে থাকে, তাহলে সোনার জুতো জুটতে পারে নেইমারের ভাগ্যেও।

করিম বেনজেমা, ফ্রান্স

আলোচিত সেই ‘সেক্স টেপ’ কাণ্ডে যদি পাঁচটি বছর হারিয়ে না যেত, ফরাসি দলে ব্রাত্য হয়ে না থাকতে হতো, তাহলে রাশিয়ার আসরেই হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারতেন বেনজেমা। যে স্বাদ মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাওয়া হয়ে গেছে কিলিয়ান এমবাপের! কাতারে বিশ্বকাপের মুকুট ধরে রাখার মিশনে আসা ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশমের মূলত এমবাপে ও বেনজেমার কাছে প্রত্যাশা থাকবে বেশি। এ মুহূর্তে দুজনে আছেনও দারুণ ছন্দে। তাছাড়া বেনজেমার বয়সও ৩৫ ছুঁইছুঁই করছে, কাতারের আসরই বলা যায় তার শেষ বিশ্বকাপ। তবে এই বয়সেও যে পায়ে গোল আছে, তা তিনি গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেই দেখিয়েছেন। ফ্রান্সের পথচলা শেষ ষোলোয় থেমে গেলেও ৪ গোল নিয়ে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপের ‘গোল্ডেন বুটে’র দাবিদারের তালিকায় থাকবেন বেনজেমাও।

হ্যারি কেন, ইংল্যান্ড

গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে যে দল যতদূর যেতে পারবে, তাদের খেলোয়াড়দের গোল্ডেন বুট জয়ের সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই থাকবে বেশি। এর ব্যতিক্রমও যে হবে না, তা নয়। কেননা, এমন অনেক গোলমেশিন আছে, যারা অল্প ম্যাচেই সেরে রাখতে পারেন নিজেদের কাজ। এই তালিকায়, স্পেনের আলভারো মোরাতা, পোল্যান্ডের রবার্ট লেভানদোভস্কি, বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু, নেদারল্যান্ডসের মেম্ফিস ডিপাইরা ঠাঁই পাবেন অনায়াসে। এবং তাদের সঙ্গে অবশ্যই থাকবেন ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার হ্যারি কেন।

কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফ্রান্স

মাত্র ২৩ বছরে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের তকমা পেয়েছেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে জিতেছেন বিশ্বকাপ। কিংবদন্তি পেলের পর দ্বিতীয় কিশোর হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার রেকর্ড তার দখলে। পেলের পর এমন কিছু করে দেখাতে শুধু পেরেছেন তিনিই। ২০১৮ বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছেন পিএসজির এই ফরওয়ার্ড। কাতার বিশ্বকাপেও তাই ফ্রান্সকে পথ দেখাতে পারেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। ১৮ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল, এর পাশাপাশি নামের পাশে আছে ১২টি অ্যাসিস্ট।

রবার্ট লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড)

মেসি-রোনালদোর পর আরও একজন তারকা রয়েছেন। তিনি ৩৪ বছর বয়সি রবার্ট লেভানদোভস্কি। জার্মান বুন্দেসলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চার বছর, পরে বায়ার্ন মিউনিখের আট বছর নীরবে গোল করে গেছেন লেভানদোভস্কি। সম্প্রতি বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার আগে ডর্টমুন্ড ও মিউনিখের হয়ে ৩৮৪টি ম্যাচে ৩১২ গোল করেছেন লেভানদোভস্কি। পোল্যান্ডের অধিনায়ক লেভানদোভস্কি দেশের হয়ে ১৩৪টি ম্যাচে রেকর্ড ৭৬টি গোল করেছেন। এরমধ্যে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নয়টি। বিশ্বকাপে এখনও গোল করতে পারেননি লেভানদোভস্কি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল পোল্যান্ড।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ