টেস্ট ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ মুর্হূতে বারবার ছোট-ছোট ভুল না করা এবং এ্যাপ্রোচে পরিবর্তন আনার উপড় জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। প্রথম চার দিন সমানে-সমান লড়াই করার পরও ঘরের মাঠে শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের হারের পর এমন মন্তব্য করেন ডোমিঙ্গো। ঢাকা টেস্টে হারের কারণে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এর আগে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিলো।
ঢাকা টেস্ট শেষে শুক্রবার (২৭ মে) ডোমিঙ্গো বলেন, ‘ কিছু পরিবর্তন আনতে হলে। আমরা একটি বা দু’টি ব্যাপার দেখতে পারি। দুই ইনিংসেই যথাক্রমে ২৪ রানে ৫ উইকেট ও ২৩ রানে ৪ উইকেট পতনের পর টেস্ট জয় সম্ভব নয়। আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। গত ৬-৮ মাসে এটি অনেকবার ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চার দিন লড়াই করেছি এবং একটি সেশনে খারাপ করার কারণে ফেরার উপায় ছিলো না। আমি নিশ্চিত, এটি খেলোয়াড়দের জন্যও সমান হতাশাজনক। তারা লড়াইয়ে ফিরছে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ে খেলা থেকে ছিটকে পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীলংকার ছয় উইকেট পতনের পরও, তারা শেষ পর্যন্ত ড্র (প্রথম টেস্ট) করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪শ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ফেলে। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও গুরুত্বপুর্ন মুহুর্তে কিছু ছোট ছোট ভুল করেছি।’
২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ঘুড়ে দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান করে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। ১৭৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মুশফিক। আর লিটনের ব্যাট থেকে আসে ক্যারিয়ার সেরা। তবে প্রথম ইনিংসে ৫০৬ রান করে ১৪১ রানের লিড পায় শ্রীলংকা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও খারাপ ব্যাটিংয়ের কারনে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ফলে মাত্র ২৯ রানের টার্গেট পায় শ্রীলংকা। যা সহজেই স্পর্শ করে ফেলে তারা।
দুই ইনিংসে ব্যাটারদের ব্যর্থতার পরও বোলারদের দোষ দিচ্ছেন ডোমিঙ্গো। তার মতে, যেভাবে বোলিং করা উচিত সেভাবে বল করেনি বোলাররা। উইকেট ৫শ করার মত ছিলো না, কিন্তু বাংলাদেশের খারাপ বোলিংয়ের কারনে বড় স্কোর করতে পেরেছে শ্রীলংকা। তিনি বলেন, ‘আমরা এবাদত, শরিফুল, তাসকিন ও মিরাজকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতেছি। এই টেস্টে আমরা শুধুমাত্র এবাদতকে পেয়েছি। এটি সম্পূর্ণ নতুন বোলিং আক্রমন। আমাদের যেভাবে করা উচিত ছিলো, সম্ভবত সেভাবে ভালো বল করতে পারিনি।’
ডোমিঙ্গো বলেন, ‘কোচ হিসেবে আমার ক্যারিয়ারে, আমি কখনও দেখিনি মিড উইকেট ও ফাইন লেগে এত রান হতে পারে। তারা সোজা বল করেছে, রান করার জন্য যা অনেক সহজ ছিলো। এটি ৫শ রানের উইকেট ছিল তেমনটা আমি মনে করি না। ম্যাচে দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে আমরা ভালো বোলিং করতে পারিনি। আমরা তাদের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারিনি। এমন ছোট বিষয়গুলো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে’
ডোমিঙ্গোর মতে দল মেহেদি হাসান মিরাজের সার্ভিস মিস করেছে। কারণ তার বদলি হিসেবে খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অফ-স্পিনার হিসাবে ভালো করতে পারেননি। ইনজুরির কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েন মিরাজ। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘মোসাদ্দেককে খেলানোর কারণ ছিল যাতে পঞ্চম বোলার হিসেবে বোলিং করতে পারে, এমন একজনকেই আমাদের দরকার ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, দিনে ১৫ ওভার বল করতে পারবে সে। চার বোলার নিয়ে বল করার পক্ষে নই আমি। আমরা আশা করেছিলাম, সে বোলিং করবে, তবে মোসাদ্দেক ভালো বল না করায় আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম, বোলিং দিয়ে মিরাজের কাজটি সে করতে পারবে। মিরাজকে হারানোটা বড় ক্ষতি ছিলো, সে অনেক ওভার বল করতে পারে, উইকেট নিতে পারে এবং ব্যাটও করতে পারে।’
ডোমিঙ্গোর মতে , বাংলাদেশে অনেক স্পিনার আছে, কিন্তু এই মুহুর্তে নাইম-মিরাজ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য ভালো মানের অফ-স্পিনার তাদের নেই। তিনি বলেন, ‘ওয়ানডেতে আমাদের অনেক অফ-স্পিনার আছে। আমরা টি-টোয়েন্টি স্পিনার মাহেদির কথা বলছি। তারা ব্যাটার, যারা পার্ট-টাইম স্পিনও করতে পারে। কিন্তু মিরাজ-নাইমের জায়গায় খেলতে পারে এমন অফ-স্পিনার নেই।’
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ