আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে এসেছেন পাঁচজন। এর মধ্যে চারজনই অভিষেকের অপেক্ষায়। সর্বশেষ সিরিজের স্কোয়াড থেকে বাদ গেছেন সাতজন। এর কয়েকটির কারণও বেশ যৌক্তিক, কিছু জায়গা নিয়ে তোলা যায় প্রশ্ন।
সোমবার ঘোষিত স্কোয়াডে মিলিয়ে দেখা যায় আগের সিরিজে দলে ছিলেন তাদের মধ্যে নাঈম শেখ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, নুরুল হাসান সোহান, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও রুবেল হোসেন নেই এবার।
ওয়ানডে স্কোয়াডে প্রথমবার এসেছেন ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় ও পেসার ইবাদত হোসেন। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও ইয়াসির আলি রাব্বি এর আগেও ওয়ানডে স্কোয়াডে ছিলেন; কিন্তু ওয়ানডেতে এখনো অভিষেক হয়নি তাদের। ইয়াসির খেলেছেন কেবল টেস্ট, নাসুম টি-টোয়েন্টি। সব সংস্করণেই খেলার অভিজ্ঞতা থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকেও ফেরানো হয়েছে।
সাত জনকে বাদ দেওয়ার কারণ কি?
পেস অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই আছেন চোটে। সমপ্রতি ইংল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এসেছেন তিনি। তার মাঠে ফিরতে লাগবে আরও অনেকটা সময়।
বাকিদের মধ্যে একেকজনের বাদ পড়ার কারণ একেক রকম। জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে স্কোয়াডে নাঈমকে নেওয়া হয়েছিল বিকল্প ভাবনায়। ২ ওয়ানডেতে কেবল ১ রান করা নাঈম চলমান বিপিএলেও ছিলেন খুবই বিবর্ণ। যে কোনো সংস্করণেই আপাতত তার দলে থাকাই হবে বরং বিস্ময়ের।
জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডেতে মিডল অর্ডারে খেলেছিলেন মিঠুন। কিন্তু তার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। তিন ম্যাচে করেছিলেন ১৯, ২ ও ৩০ রান। ওই সিরিজে ক্রিজে ভীষণ নড়বড়ে দেখিয়েছে এই ব্যাটসম্যানকে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটেও আলো ছড়াতে পারেননি মিঠুন। তার জায়গায় ছন্দে থাকা ইয়াসির আলি চৌধুরীর দলে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলবার সুযোগ নেই।
এরমধ্যে টেস্ট অভিষেকে নিজেকে প্রমাণ করা ইয়াসির বিপিএলেও ছিলেন রানের মধ্যে। মিডল অর্ডারে বেশ অনেকদিন ধরেই যোগ্য বিকল্প হওয়ার দৌড়ে এই ব্যাটার।
তাইজুল ইসলামের বাদ পড়াও ছিল অনুমিত। মূলত লাল বলের ক্রিকেটেই বিবেচিত হন তাইজুল। জিম্বাবুয়েতে করোনাভাইরাসের কারণে স্কোয়াডে বাড়তি সদস্য নেওয়ায় দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি। নুরুল হাসান সোহান তার সব শেষ ওয়ানডেতে করেন ৩৯ বলে ৪৫ রান। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে তিনি মূলত খেলেছেন মুশফিকুর রহিমের বিকল্প হিসেবে। মুশফিক ফেরায় তার বাদ পড়া অনুমিত হয়ে যায়। সেইসঙ্গে এই কিপার ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও বিপিএলেও ছিলেন মলিন। টি-টোয়েন্টি দলেও তার জায়গা এখন প্রশ্নের মুখে।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে দলে না রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে দুই ইনিংসে ব্যাট করে করতে পেরেছিলেন মোটে ১০ রান। কিন্তু এরপর ঘরোয়া লিস্ট-এ টুর্নামেন্ট বিসিএলে নিজের ঝলক দেখান। বিসিএলের ওয়ানডে আসরে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন এই অলরাউন্ডার। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পারফরম্যান্সই মূল্যায়ন করেছেন তারা। মোসাদ্দেককে নিয়ে এমনকি কোন আলোচনাই হয়নি।
বাদ পড়াদের মধ্যে আরেকজন রুবেল হোসেন। অনেক অভিজ্ঞ এই পেসারের ধারাবাহিকতা নিয়ে আছে প্রশ্ন। তাকে নানা সময় স্কোয়াডে নিলেও সেভাবে খেলানোও হয়নি। ৩২ পেরুনো এই পেসারকে হয়ত আর আগামীর চিন্তায় রাখছেন না নির্বাচকরা। নির্বাচকদের ভাবনায় ফেলার মতো কোন পারফরম্যান্সও ঘরোয়া ক্রিকেটে করে দেখাতে পারেননি তিনি। পাঁচজনকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যা কী? যে পাঁচজন নতুন করে ওয়ানডে দলে এসেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক ইবাদত হোসেন। সমপ্রতি নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জিতিয়ে বাংলাদেশকে সেরা সাফল্য এনে দিয়েছেন এই পেসার। কিন্তু এতদিন তাকে বিবেচনা করা হচ্ছিল কেবল লাল বলেই।
প্রধান নির্বাচক দল ঘোষণা দেওয়ার পর জানালেন, সাদা বলেও ইবাদতের রঙিন সাফল্যের আভাস পাচ্ছেন তারা, সেকারণেই নেওয়া হয়েছে ওয়ানডে দলে, ‘ইবাদত আমাদের টেস্ট বোলার, ওকে আমরা ওয়ানডের জন্যও চিন্তা-ভাবনা করছি। সার্বিকভাবে ও যেভাবে কাজ করছে আমাদের ফাস্ট বোলিং ইউনিটের সঙ্গে, ওরা যথেষ্ট ইমপ্রেসড, আমরাও যথেষ্ট খুশি ওর পারফরম্যান্সে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে আমরা দেখছৃি ওর নিয়ন্ত্রণ সাদা বলের ক্রিকেটে যথেষ্ট ভালো। এজন্য ওকে বিবেচনা করা হয়েছে।’
প্রথমবার ওয়ানডে দলে আসা আরেক মুখ জয়কে টেস্ট খেলিয়ে সাফল্য পাওয়ার পর নির্বাচকদের মনে বেড়েছে আশা। নিউজিল্যান্ডে এই তরুণের পারফরম্যান্স, খেলার ধরণে তাকে মিডল কিংবা টপ যেকোনো জায়গায় বিকল্প দেখছেন তারা, মিনহাজুলের কথা মিলল সেই আভাস, ‘ও যে স্টাইলে ব্যাটিং করে, আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী (ওকে নিয়ে)। আমাদের মিডল অর্ডারে, যখন যেখানে টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করৃেআমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। ও যে স্টাইলে ব্যাটিং করৃেঅনেক নিভর্রযোগ্য ও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করে। যদি এভাবেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করে, তাহলে অনেক দিন দেশকে সার্ভিস দিতে পারে।’
টি-টোয়েন্টিতে ভালো করা নাসুমের ওয়ানডে দলে আসায় প্রশ্ন থাকছে না। প্রশ্ন থাকছে না ছন্দে থাকা ইয়াসিরের দলভুক্ত হওয়াতেও। তবে তেমন কিছু না করেই কেন ওয়ানডে দলে নাজমুল হোসেন শান্ত?
মূলত বাংলাদেশের টেস্ট দলে নিয়মিত মুখ শান্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ব্যাপক পালাবদলের স্রোতে ঢুকে পড়েন টি-টোয়েন্টিতেও।
কিন্তু সেখানে তার পারফম্যান্স আহামরি ছিল না। সমপ্রতি বিপিএলেও খুব একটা ঝলক দেখাতে পারেননি বাঁহাতি শান্ত। যে সংস্করণে তাকে নেওয়া হয়েছে সেই ওয়ানডেতে শান্তর পরিসংখ্যান খুবই বিবর্ণ। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে কেবল ১১.৬৩ গড়ে করতে পেরেছেন মোটে ৯৩ রান। শান্ত সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ভাল করতে না পারায় বাদ পড়েন। আবার তাকে ফেরানোর প্রসঙ্গে দায়টা টিম ম্যানেজমেন্টের উপর দিলেন প্রধান নির্বাচক, ‘শান্তকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওয়ানডে ফরম্যাট নিয়ে তাকে নিয়ে আমরাও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। সে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের নিয়মিত খেলোয়াড়। আশা করছি ৫০ ওভারের ফরম্যাটেও সে ভালো করবে।’
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ