মুশফিকুর রহিম তার আলোচিত ‘আয়না তত্ত্ব’ নিয়ে কথা বলার এক ফাঁকে বলেছিলেন, ভালো করলে সবাই তালি দিবে আর খারাপ করলে গালি! কথাটি যে নেহায়েত কোন কথার কথা নয়, সেটির প্রমাণ পাওয়া গেল চলমান চট্টগ্রাম টেস্টে। ধারাবাহিকভাবে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন লিটন কুমার দাস। তবে টেস্টে ফিরেই বাজিমাত করেছেন তিনি।
খারাপ করে বাদ পড়া, ফেরা, ভালো পারফর্ম করা- এগুলো তো ক্রিকেটেরই অংশ, তবে লিটনকে নিয়ে মাঠের বাইরে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে মুণ্ডুপাত হয়েছে, সেটি বাড়াবাড়ি বললেও একেবারেই কম বলা হবে। এখন আবার সেই লিটনকে নিয়েই মাতোয়ারা গোটা দেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম উত্তাল, ‘লিটন, লিটন’ ধ্বনিতে। হবেই বা না কেন? তার ব্যাটে চেপেই যে টেস্টে প্রথমবার পাকিস্তান বধের খোঁজে বাংলাদেশ দল।
প্রথম ইনিংসে দলকে টেনে তোলা লিটন খেলেন ইনিংস সর্বোচ্চ এবং নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১১৪ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেই লিটনেই রক্ষা স্বাগতিক শিবিরের। এবার লিটনের ব্যাটে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৯ রান। প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদশ দল ৪৪ রানে লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর বোর্ডে তুলেছে ১৫৭ রান। সব মিলিয়ে টাইগারদের সংগ্রহ ২০১ রান। চট্টগ্রাম টেস্ট জিততে ২০২ রান করতে হবে পাকিস্তানকে।
৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ দল। রাব্বি মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে লিটন ৩২ ও সোহান শূন্য রানে অপরাজিত থেকে আবার ব্যাটিংয়ে নামেন।
বিরতি থেকে ফিরেই অ্যাপ্রোচে খানিকটা পরিবর্তন আনেন দুই ব্যাটসম্যান। আরও একটু আক্রমণাত্মক হয়ে লিডটা দ্রুত বাড়িয়ে নেওয়াই ছিল লক্ষ্য। তাতে কিছুটা সফলতাও মিলেছে বৈকি! দ্বিতীয় সেশনের প্রথম সাত ওভারে তুলে ফেলে ৩৩ রান। মাঝে লিটন ফিফটির দেখা পান লিটন। প্রথম ইনিংসের দারুণ সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াকু এক ফিফটি তুলে নেন তিনি।
লিটনের অর্ধশতকের পর অতি আক্রমণাত্মক হয়েই উইকেট খোয়া গেল সোহানের। সাজিদ খানকে লং অন দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েছেন বদলি হিসেবে নামা এই ব্যাটসম্যান। ফেরেন ১৫ রান করে। পরে ৪ রানের ব্যবধানে লিটন ৫৯ রান করে আর সাজিদ খানের শিকার হলে তাইজুল ইসলাম, আবুদ জায়েদ রাহি, এবাদতরা স্কোর বোর্ডে আর কোন রান যোগ করতে পারেননি। এতে ১৫৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ।
সাগরিকায় প্রথম ইনিংসে লিটনের ১১৪ ও মুশফিকের ৯১ রানের কল্যাণে ৩৩০ রান করে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের হয়ে হাসান আলি নেন ৫ উইকেট। পরে নিজেদের ইনিংস শুরু করতে নামা পাকিস্তানকে ২৮৬ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। আবিদ আলি সর্বোচ্চ ১৩৩ রান করে। টাইগার স্পিনার তাইজুল ইসলাম নেন ৭ উইকেট। পরে ৪৪ রানে লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ১৫৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৫৯ রান। শাহীন শাহ আফ্রিদি নেন ৫ উইকেট। জয়ের জন্য সফরকারীদের চাই ২০২ রান।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ