অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন দেশটির টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পেইন।
২০১৭ সালে এক নারী সহকর্মীকে অশালীন বার্তা ও ছবি পাঠানোর দায়ে তদন্তের মুখে পড়েছিলেন পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া এই উইকেটকিপার। তদন্ত শেষে মুক্তি মিলেছিল তার। কিন্তু ভাবেননি পুরনো সেই ‘যৌন কেলেঙ্কারি’ বিতর্ক ফের সামনে চলে আসবে।
সামনের মাসেই শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার লড়াই অ্যাশেজ। ঘরের মাঠের সিরিজের প্রথম দুই টেস্টের জন্য পেইনকে অধিনায়ক করে দলও ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কিন্তু পুরনো বিতর্ক সামনে চলে আসায় স্থানীয় সময় শুক্রবার এক লিখিত বিবৃতিতে টেস্টের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই উইকেটকিপার।
ঘটনাটা ২০১৭ সালের। সাত বছর অস্ট্রেলিয়া দলের বাইরে থাকা পেইন সেসময় এক নারী সহকর্মীকে আপত্তিকর বার্তা ও ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। গুরুরত বিষয়টির যৌথ তদন্তে নেমেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ক্রিকেট তাসমানিয়া। যদিও তদন্তে এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যাতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আচরণবিধি ভেঙেছিলেন এই উইকেটকিপার। ফলে ‘মুক্তি’ পাওয়া পেইন মাসখানেক পরই দীর্ঘ দিন পর ফেরেন অস্ট্রেলিয়া দলে। এরপর ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে বল টেম্পারিং কাণ্ডে স্টিভেন স্মিথ নিষিদ্ধ হলে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পান তিনি।
চার বছর আগে সেই বিতর্ক ‘মীমাংসা’ হলে গেলেও নতুন করে সামনে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার এক টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে। অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ায় যাকে ডাকা হচ্ছে ‘সেক্সটিং স্ক্যান্ডাল’। আচমকা পুরনো বিতর্ক সামনে আসায় অ্যাশেজ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন পেইন।
হোবার্টে সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নাভেজা কণ্ঠে পেইন বলেছেন, ‘আজকে আমি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি। এটা ভীষণ কঠিন সিদ্ধান্ত, তবে আমার নিজের, পরিবার ও ক্রিকেটের জন্য এটাই সঠিক। আমার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট প্রায় চার বছর আগের এক ঘটনায়। তখনকার এক সহকর্মীর সঙ্গে আমি বার্তা আদান-প্রদান করেছিলাম। ওই সময় ওই ঘটনার জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তদন্ত ইউনিট কাজ করেছিল, যেখানে আমি পুরোপুরি ও খোলামেলাভাবেই অংশগ্রহণ করেছিলাম।’
ওই তদন্তে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কোড অব কন্ডাক্ট ভাঙার কিছু পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে পেইন যোগ করেছেন, ‘ওই ঘটনার জন্য ওই সময় আমি অনুশোচনা করেছিলাম, এখনও করছি। আমার স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে ক্ষমা করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম ঘটনাটা হয়তো অতীত হয়ে গেছে, তাই আমি আমার পূর্ণ মনোযোগ রেখেছিলাম ক্রিকেটে। যা আমি গত তিন-চার বছর ধরে করে আসছি।’
নতুন করে ওই বিতর্ক সামনে আসায় সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী উইকেটকিপার, ‘সম্প্রতি জানতে পারলাম এই ব্যক্তিগত টেক্সট আদান-প্রদানের বিষয়টি জনসম্মুখে চলে এসেছে। ২০১৭ সালে আমি যা করেছিলাম, সেটি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নেতৃত্বের মানদণ্ড কিংবা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যায় না। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, যে ব্যথা আমি দিয়েছি আমার স্ত্রী, আমার পরিবার এবং অন্যান্যদের। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তিতে কোনও ক্ষতি করে থাকলে সেজন্যও দুঃখপ্রকাশ করছি।’
পেইনের কাছে মনে হয়েছে, বর্তমান অবস্থায় নেতৃত্ব ছাড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত, ‘আমি বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব ছাড়াই আমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি চাইনি সামনের অ্যাশেজের আগে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দলে কোনও প্রকার প্রভাব ফেলে। অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দেওয়া বিশাল বড় সম্মানের। সতীর্থদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা যেভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছে একসঙ্গে দারুণ কিছু অর্জনের পথে।’
নেতৃত্ব ছাড়লেও অ্যাশেজে যে খেলছেন, তা পেইনের এই কথায় স্পষ্ট, ‘অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নিবেদিনপ্রাণ সদস্য হিসেবে থাকবো। অ্যাশেজের উত্তেজনাকর লড়াইয়ে দিকে তাকিয়ে আছি।’
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ