কত স্বপ্ন, কত আশা। একে একে সব যেন নিভে গেল। পাল্লা ভারি হলো ব্যর্থতায়। দুবাই থেকে ঢাকা, দীর্ঘশ্বাসে ভারি আকাশ-বাতাস। দিন শেষে কেউ যেন হিসাব মেলাতে পারছে না। ঘরের মাঠে টানা দুটি ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপে এমন ভরাডুবি? এমন তো কথা ছিল না।
বৈশ্বিক মঞ্চে এমন ভরাডুবির পর মাঠের খেলা কিংবা টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে দলের ভাবনা সবাই পড়ে গেছে প্রশ্নের মুখে। আলোর রেখা নেই খুব একটা। বিশ্বকাপে নিজেদের সবশেষ ম্যাচটা খেলে ফেলার পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বললেন, ব্যর্থতার কারণ জানা নেই তারও। নিজেও খুঁজছেন অনেক প্রশ্নের উত্তর।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ব্যাটিং। অথচ বেশিরভাগ ম্যাচে একাদশে ছিল নয় ব্যাটসম্যান। অন্তত আটজন ছিল প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি কেউই। একটা ম্যাচেও বাংলাদেশ পাওয়ার প্লে কাটাতে পারেনি বিনা উইকেটে। বরং পাওয়ার প্লেতে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট হারানো দল বাংলাদেশই (১৮টি)।
ব্যাটসম্যানরা ধুঁকেছে বাউন্ডারি পেতে, ভুগেছে রানের চাকা সচল রাখতে। ৩০ ছাড়াতে পেরেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১২০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট কেবল মাহমুদউল্লাহর। চরমভাবে ব্যর্থ সৌম্য সরকারের মতো অভিজ্ঞ ও আফিফ হোসেনের মতো তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। লিটন দাসের ব্যর্থতা আলোচিত ছিল বিশ্বকাপজুড়ে। বড় ইনিংস যেমন খেলতে পারেননি, তার স্ট্রাইক রেট মোটে ৯৪.৩২!
দেড়শ’র বেশি বল খেলতে পারেন কেবল মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ৭ ম্যাচে বাঁহাতি এই ওপেনার করেন দলের সর্বোচ্চ রান, ১৭৪। তার সমস্যা আবার স্ট্রাইক রেট, স্ট্রাইক রোটেশন। ভুল সময়ে বারবার ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে আউট হন মিডল অর্ডারে সবচেয়ে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম। প্রত্যাশিত ধারাবাহিকতা ছিল না সাকিব আল হাসানের ব্যাটে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৯ রান করলেও মাহমুদউল্লাহ রাখতে পারেননি প্রভাব।
বোলিংয়ে তুলনামূলক একটু ভালো। সাকিব যথারীতি ছিলেন নির্ভরযোগ্য। ৬ ম্যাচে তার শিকার ১১ উইকেট। ৭ ইনিংসে ৮ উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান। এই অফ স্পিনারের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে বিশ্বক্রিকেটের অনেকের।
চোট পাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব একটা খারাপ করেননি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। সীমিত সুযোগে সামর্থ্যরে ঝলক দেখান শরিফুল ইসলাম। আরো কার্যকর হয়ে ওঠার আভাস দেন তাসকিন আহমেদ। গতি, আগ্রাসন ও স্কিল মিলিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরমার হয়তো এই ফাস্ট বোলারই। ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন তিনি প্রায় নিয়মিতই।
কিন্তু পেস বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হওয়ার কথা ছিল যার, সেই মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন ধারহীন। বাংলাদেশের হয়ে ১০ ওভারের বেশি করা বোলারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে খরুচে। ২৪ ওভারে ৮ উইকেট নিতে দেন ২২২ রান। ওভার প্রতি ৯.২৫ করে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরো বিশ্বকাপ অভিযানে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন। অথচ বিশ্বকাপের আগে তারা দেখিয়েছিলেন বাঁক বদলের আশা। সেটা প্রথম হোঁচট খায় প্রস্তুতি ম্যাচে। দুটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। পরে হার দিয়ে শুরু করে প্রাথমিক পর্ব। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওই হারে শঙ্কা জাগে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়েরও। পরে ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জয়ে দল জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে। সেখানে সঙ্গী হয় এক রাশ হতাশা।
অবশ্য, বছরের পর বছর মিরপুরের উইকেটে খেলে সেটা কঠিনও। মন্থর ও নিচু উইকেটে খেলে না খোলে ব্যাটসম্যানদের হাত, না বোলারদের মাথা। ব্যাটসম্যানরা পারেন না বড় শট খেলে অভ্যস্ত হতে। জানেন না চার-ছক্কার মালা গেঁথে ইনিংস সাজাতে। উইকেটই যখন সব করে দেয়, খুব কম বোলারই মাথা খাটিয়ে বোলিংয়ের কাজটা করেন। এর বেশ চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিজস্ব ঘরানা তৈরির যে চেষ্টা এতদিন ছিল, সেটা মোটামুটি ভেস্তে যেতে বসেছে দুঃস্বপ্নের এক বিশ্বকাপে।
আবার বিশ্বকাপে ১১টি ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সুযোগ হাতছাড়া করায় দিতে হয়েছে চড়া মাশুল। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা।’
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ