মাঠে গড়িয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ। বৈশ্বিক এ ক্রিকেট আসরের রোমাঞ্চটা এমনিতেই বেড়ে গেছে। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া এখন কাঁপছে ক্রিকেট জ্বরে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের মহাযজ্ঞের উত্তেজনা আর উন্মাদনা আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে।
চির বৈরী প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের লড়াই মানেই মহারণ। ক্রিকেট দুনিয়ার মহাযুদ্ধ। স্নায়ুচাপ আর শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ। আর খেলাটা যদি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে তাহলে তো কথাই নেই। ক্রিকেট শিহরণে যেন ভেসে যায় ক্রিকেট দুনিয়ার তাবত অনুরাগীরা। কেননা বৈশ্বিক মঞ্চ ছাড়া যে দু’দলের লড়াইটা উপভোগের এখন যে কোনো সুযোগই মেলে না। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে আইসিসির টুর্নামেন্টে কেবল দু’দল মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায়। যে কারণে দু’দেশের ম্যাচ নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহের শেষ নেই। যেটা প্রমাণ করে টিকিট বিক্রির রেকর্ড। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট অনলাইনে ছাড়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট শেষ হয়ে যায়। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতকে তিন ম্যাচ হারালেও এখনো পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিততে পারেনি পাকিস্তান। হারাতে পারেনি বিরাট কোহলিদের। বাবর আজমরা তাদের হারাতে পারেনি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও। সেই দুর্ভাগ্যটা ঝেরে ফেলতে আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নামছে পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে ক্রিকেট দুনিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তান। যার চারটি ম্যাচই জিতে নিয়েছে ভারতীয়রা। বাকি একটি ম্যাচ ছিল টাই। সেটাও পরে টাইব্রেকারে হেরে যায় পাকিস্তান।
তবে ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে পাকিস্তান। তার মধ্যে ছয়টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত। মাত্র একটি জিতেছিল পাকিস্তান। সেও আবার ২০১২ সালে ভারত সফরে। বেঙ্গালুরুতে স্বাগতিকদের ২ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ধরাশায়ী করে উৎসবে মেতেছিল পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। ওটাই প্রথম এবং ওটাই শেষ। এরপর আর ভারতের বিপক্ষে জয়ের দেখা পায়নি তারা। একটি টাই হলেও সেটা অবশ্য জিতেছিল ভারতই। সেই সুখ স্মৃতি নিয়েই ভারত বধের মিশনে নামবে আজ পাকিস্তান। তবে আরো একটি পরিসংখ্যান ও তথ্য অনুপ্রেরণা যোগাবে বাবর আজমদের। দুবাইয়ের যে মাঠে হবে দু’দলের লড়াই সেই ভেন্যুতে ২০১৬ সাল থেকে ছয় ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচও হারেনি পাকিস্তান।
পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ মানেই শুধু মাঠের লড়াই নয়। লড়াই হয় মাঠের বাইরেও। যেটা চলে ম্যাচের আগে ও পরে। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ নিয়ে কথার লড়াই জমিয়ে তুলেছেন হরভজন সিং ও শোয়েব আখতার। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একবারো ভারতকে হারাতে না পারায় পাকিস্তানকে নিয়ে রসিকতা করেন হরভজন সিং। তিনি বলেন, ‘আমি শোয়েবকে বলেছি তোমরা ওয়াকওভার নিয়ে নাও। তোমরা আবার খেলবে, আবার হারবে, আবার হতাশ হবে। তোমাদের কোনো সুযোগ দেখছি না আমি। আমাদের খুবই শক্তিশালী একটি দল রয়েছে। ওরা তোমাদের দলকে উড়িয়ে দেবে।’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে হরভজনের সঙ্গে তোলা একটি ছবি দিয়ে টুইটারে লেখেন শোয়েব লেখেন, ‘মি. আমি সব জানির সঙ্গে।’ শোয়েবের টুইটটি শেয়ার করে ভাজ্জি ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘যখন তোমার ৪০০-এর বেশি টেস্ট উইকেট থাকবে নিশ্চিতভাবেই তুমি ২০০-এর কম উইকেট নেয়া কারো চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখো।’
পাকিস্তানের সাবেক লিজেন্ড ইনজামাম দুনিয়া তোলপাড় করা এ ম্যাচকে দেখছেন ফাইনালের আগে ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে, ‘গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচ ফাইনালের আগে আরেকটি ফাইনাল। অন্য কোনো ম্যাচ এমন উন্মাদনা তৈরি করতে পারে না। এমনকি ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তানের যাত্রা শুরু হয়েছিল তাদের মুখোমুখি লড়াই দিয়ে, শেষটাও হয়েছিল এই দুই দলের ম্যাচ দিয়ে। দুটি ম্যাচকেই মনে হয়েছিল ফাইনালের মতো। এই ম্যাচে যে দল জিতবে, তারা মানসিকভাবে অনেক চাঙা থাকবে।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের প্রায় একদিন আগে একরকম চূড়ান্ত একাদশ ঘোষণা করে দিয়েছে পাকিস্তান। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা।
এর আগে গতকাল ১২ জনের স্কোয়াড দিয়েছে পাকিস্তান। তাতে জায়গা পেয়েছেন বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), ফখর জামান, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, আসিফ আলি, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, হাসান আলি, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ ও হায়দার আলি।
বিশ্বকাপে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি পাকিস্তান। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা ১২ ম্যাচে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানকে। নিজেদের সঙ্গে সেঁটে থাকা এই লজ্জার রেকর্ড থেকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি চায় তারা। তাই আজকের ম্যাচের জন্য বাড়তি কোনো অনুপ্রেরণা দরকার ছিল না বাবর আজমদের।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ