ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ জয়ের বিশ্বরেকর্ডটি দীর্ঘ করেই চলছিল ভারত। টানা একযুগ ধরে ভারতকে নিজেদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারাতে পারছিল না কোনো দল। অবশেষে মেন ই ব্লুদের সেই যাত্রা থামলো। নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে করে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে স্পিননির্ভর পিচ তৈরি করেছিল ভারত। তবে সেই ফাঁদে নিজেরাই আটকে গেছে স্বাগতিকরা। কিউইদের বিপক্ষে তাদের জিততে হতো ৩৫৯ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে ইতিহাস গড়ে। রোহিত শর্মার ভারত থেমেছে ২৪৫ রানে। এতে ১১৩ রানে হেরে ঘরের মাঠে সিরিজ খোয়াল এক যুগ পর। কিউইদের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করেছেন স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
২০১২ সালের পর প্রথম কোনো দল হিসেবে কিউইরা ভারতে টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়লো। এর আগে, ভারতের মাটিতে শেষবার ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড। এরপর ২০১৩ সাল থেকে নিজের ঘরে মোট ৫৪ টেস্ট খেলেছে ভারত। যেখানে ছিল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। ৭৮ শতাংশ সাফল্য পাওয়া রোহিত-কোহলিরা ওই সময়ে ৪২টি জয়, ৫ হার ও ৭টি টেস্ট ড্র করেছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪৫ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেটিও ১৯৬৯ সালে অকল্যান্ডে। তাই এই ম্যাচ জিততে হলে ভারতকে এদিন রেকর্ড গড়ে জিততে হতো। শনিবার (২৬ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে অলআউট হওয়ার আগে টম ল্যাথামের নিউজিল্যান্ড ২৫৫ রান করে। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১০৩ রানের লিড মিলিয়ে তাদের পুঁজি দাঁড়ায় ৩৫৮। সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছেন অধিনায়ক ল্যাথাম। এ ছাড়া গ্লেন ফিলিপস ৪৮ ও টম ব্লান্ডেল ৪১ রান করেন।
ভারতের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার মিকার ১১ উইকেঠ। এ ছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা ৩ এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন ২টি উইকেট শিকার করেন।
চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা যেমন দরকার ছিল, তেমনই করেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। যদিও অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৮) আউট হয়ে যান দলীয় ৩৪ রানে। এরপর বড় জুটি গড়তে না পারার মাশুল গুনেছে ভারত। দ্বিতীয় উইকেটে জয়সওয়াল ও শুভমান গিল ৬২ রানের জুটি গড়েন। গিলকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মিচেল স্যান্টনার। ৭৭ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে জয়সওয়াল আউট হওয়ার পরই ভারতের স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে। ৬৫ বলে ৯ চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান এই তরুন ব্যাটার।
ভারতের ভরসা হতে পারতেন মিডল অর্ডারে বিশ্বস্ত ব্যাটার রিষভ পান্ত। কিন্তু তিনি আউট হন দুভার্গ্যের রানআউটের ফাঁদে পড়ে। কোহলি-পান্ত ফিল্ডারের হাতে বল রেখে প্রান্ত বদল করতে গিয়ে কপাল পুড়েছেন। রানের খাতা খোলার আগেই আউট এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ কোহলিও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ১৭ রান করে তিনি স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লু হন। টপ অর্ডারের চারটি উইকেটই গেছে বাঁ-হাতি এই স্পিনারের দখলে।
সরফরাজ খান (৯) ও ওয়াশিংটন সুন্দরও (২১) আউট হয়েছেন পরপর। ১৬৭ রানে ভারতের ৬ উইকেট পতন নিশ্চিতভাবেই হারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এরপর সেই ক্ষণ কেবল দীর্ঘ করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে তিনি ৪২ রান করেন। যা কেবলই হারের ব্যবধান কমিয়েছে ভারতের।
নয়াশতাব্দী/ইএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ