ফাউলের ছড়াছড়ি আর সমানতালে মারামারির প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা করেছিলেন লাটিন ফুটবলের ভক্তরা। তবে এবারো আশাহত হয়েছেন তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের চিত্র না পাল্টালে আর কোনো দলই প্রত্যাশিত গোলের দেখা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে সেলেসাওদের আশা গুঁড়িয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল উরুগুয়ে।
আজ রোববার (৭ জুলাই) কোয়ার্টার-ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জেতে উরুগুয়ে।
লাস ভেগাসে প্রথমার্ধের শুরুতে সেভাবে আক্রমণে যেতে পারেনি সেলেসাওরা। অন্যদিকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে বেশ চাপে রেখেছিল উরুগুয়ে।
৭৪ মিনিটে মিডফিল্ডার নাহিতাস নান্দেজ লাল কার্ড দেখায় উরুগুইয়ানরা দশজনের দলে পরিণত হয়। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে ব্যর্থ দরিভাল জুনিয়রের ব্রাজিল। শেষপর্যন্ত গোলশূন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে এডার মিলিটাও এবং ডগলাস লুইসের দুটি ব্যর্থ শটে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ব্রাজিলের, বিপরীতে সেমিফাইনালে উঠেছে উরুগুয়ে।
লাস ভেগাসের অ্যালিজেন্ট স্টেডিয়াম পেনাল্টিতে উরুগুয়ের হয়ে প্রথম শট নেন ভালবার্দে। তাতেই বল জালে জড়ান তিন। আর ব্রাজিলের হয়ে প্রথম শট নেন মিলিতাও। প্রথম শটই জালে জড়াতে পারেননি তিনি। দুর্দান্ত দক্ষতায় বল ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোচেত। পরে ব্রাজিলের হয়ে ডগলাস লুইস ও উরুগুয়ের হয়ে গিমিনেজ মিস করলে জমে ওঠে লড়াই। তবে, শেষমেশ মারতিনেল্লির গোলে জয় নিশ্চিত হয় উরুগুয়ের।
এর আগে ম্যাচের ১২তম মিনিটে গুইমারেজকে ফাউলের সুবাদে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তবে, বারের অনেক ওপর থেকে মেরে দেন রাফিনিয়া। অবশ্য গ্রুপপর্বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে একই পজিশন থেকে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। পরের শটে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেন পেরেইরা। পরবর্তীতে উরুগুয়ের হয়ে গিমিনেজ ও ব্রাজিলের হয়ে ডগলাস মিস করেন। তবে, জয় পেতে সমস্যা হয়নি উরুগুয়ের।
১৭তম মিনিটে কর্নার থেকে নুনিজের হেড ঠেকিয়ে দলকে রক্ষা করেন দানিলো। ২২তম মিনিটে আরও একটি ফ্রি-কিক পায়। তবে, এবারও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি সেলেসাওরা। ২৭তম মিনিটে একক প্রচেষ্টায় ডি-বক্সে ঢুকে যান এন্ড্রিক। পাস বাড়িয়ে দিলেও সেখানে ছিল না কোনো ব্রাজিলিয়ান। রাফিনিয়া দৌড়ে গেলেও উরুগুয়ের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
৩৪তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ করে ব্রাজিল। প্রতি আক্রমণ থেকে এগিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি রাফিনিয়া। এমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় ফের হতাশ হতে হয় সমর্থকদের। ৩৭তম মিনিটে আরও একটি ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। এবার রাফিনিয়ার পরিবর্তে রদ্রিগো শট নেন। তবে, তিনিও বল জালে জড়াতে পারেননি। এরপর যোগ করা সময়ে ফের দারুণ সুযোগ পায় ব্রাজিল। এবার এন্ড্রিকে সুযোগ হাতছাড়া করায় হতাশ হতে হয় সেলেসাওদের।
৪৭তম মিনিটে ভালো সুযোগ পেয়েছিল উরুগুয়ে। ফেডরিকো ভালবার্দের দূরপাল্লার শট সহজেই প্রতিহত করেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। এরপর ৫২তম মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ করে উরুগুয়ে। ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে শট করেন ডারউইন নুনেজ। তবে, দানিলোর গায়ে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৬তম মিনিটে আরাউহো ডি-বক্সের বেশ খানিকটা দূর থেকে শট করলেও তা লক্ষ্যে ছিল না। ৬২তম মিনিটে ভালবার্দের দূরপাল্লার আরেকটি শট বারের ওপর দিয়ে চলে গেলে হতাশ হতে হয় উরুগুয়ের সমর্থকদের।
ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে রদ্রিগোকে ফাউল করায় প্রথমে হলুদ কার্ড ও পরবর্তীতে ভিআরের সাহায্য নিয়ে লাল কার্ড খেয়ে মাঠ ছাড়েন উরুগুয়ের নাহিতান নান্দেজ। যার ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় উরুগুয়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একের পর এক আক্রমণ করে ব্রাজিল। ৮৪তম মিনিটে এন্ড্রিকের গড়ানো শট সহজেই তালুবন্দী করেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোচেত। ৮৬তম মিনিটে ফ্রি-কিকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় ভালবার্দে। তবে, বারের ওপর দিয়ে মেরে দেন তিনি। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ