চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। এবার বোলারদের নৈপুণ্যে ডাচদের হারিয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভ্যালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৪ রানের বেশি নিতে পারেনি ডাচরা। এতে ডাচদের ২৫ রানে হারিয়ে সমীকরণ সহজ করল টাইগাররা। ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকে ডাচরা। তবে শান্তর কৌশলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই উইকেট হারায় দলটি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন। তার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লেভিট। তাসকিনের পর বল হাতে দারুণ খেলেন তানজিম। তার বলে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাক্স ও’ডাউড। তবে দারুণ রিফ্লেক্সে ফিরতি ক্যাচ নেন তানজিম। এতে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় ডাচরা।
ইনিংসের সপ্তম ওভারেই দলীয় ৫০ পূর্ণ করে ডাচরা। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বিক্রমজিৎ সিং ও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। এরপর তাদের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বলে ১৬ বলে ২৬ রান করে আউট হোন বিক্রম। এরপর ব্যাট হাতে দারুণভাবে এগিয়ে যান এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেখট। তবে এবার হুমকি হয়ে দাঁড়ান রিশাদ আহমেদ। তার অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করা বলে লাইন মিস করেন এঙ্গেলব্রেখট। লেগ খেলতে গিয়ে আউটসাইড-এজড ক্যাচ তুলে দেন। কাভারে সহজ ক্যাচ নেন তানজিম। এতে এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ভাঙে তার ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি। ২২ বলে ৩৩ রানে ফেরেন এঙ্গেলব্রেখট।
এক বল ব্যবধানেই বাস ডি লিডিকে ফেরান এই স্পিনার। রিশাদের টার্নে পরাস্ত হন ডি লিডি। লিটনের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন এই ব্যাটার। রিশাদের জোড়া আঘাতের পর সাকিবের ওভারে মাত্র ৫ রান নিয়েছিল ডাচরা। এরপর ডেথ ওভারে এসে ডাচদের ভোগান মোস্তাফিজ। তার বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন স্কট এডওয়ার্ডস। এই ওভার থেকে আসে মাত্র ১ রান। শেষ ১২ বলে ৩৬ রান দরকার ছিল ডাচদের। তবে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি তারা। এতে ২৫ রানের জয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রিশাদ। তাছাড়া তাসকিন ২ টি এবং মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর একই পথেই হাঁটেন লিটন। তিনে নেমে ২ বলে ১ রানে আউট হন তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আরিয়ানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন। মিডউইকেটে ছুটে গিয়ে ড্রাইভে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান এঙ্গেলব্রেখট। এতে দলীয় ২৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান সাকিব আল হাসান এবং তরুণ ওপেনার তানজিদ। এই দুই ব্যাটারের দাপুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তুলে লাল-সবুজেরা। কিন্তু ভালো শুরুর পরই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ। ২৬ বলে ৩৫ রানে থামলে ভাঙে সাকিবের সঙ্গে তার ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি। তানজিদের বিদায়ে কমে বাংলাদেশের রানের গতি। ইনিংসের সপ্তম ওভারেই ৬৬ রান তোলা বাংলাদেশের পুঁজি ১০ ওভার শেষে দাঁড়ায় ৭৬ রান।
এরপর ২৭ বল পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেন সাকিব। তবে অন্যপ্রান্তে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হৃদয়। টিম প্রিঙ্গলের আন্ডার-কাটে জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাট লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে বল। এতে ১৫ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন হৃদয়।
পরে সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ ম্যাচে ৩৮ বল খেলে ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি করেন সাকিব। তবে সাকিবের ফিফটির পরই সাজঘরে ফেরেন রিয়াদ। এর আগে ২১ বলে ২৫ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সাকিবের ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ এবং জাকের আলির ৭ বলে ১৪ রানের ক্যামিওতে ১৫৯ রানের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে ২টি করে উইকেট শিকার করেন আরিয়া দত্ত ও পল ফন ম্যাকেরেন।
নয়া শতাব্দী/এসআ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ