এপ্রিলেই অবসরে যাচ্ছেন তিনবারের আইসিসি বর্ষসেরা আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস। চলমান অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজটাই হতে যাচ্ছে এলিট প্যানেলের আম্পায়ার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকানের শেষ এসাইনমেন্ট।
আর অবসরে যাওয়া ইরাসমাসের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিতে যাচ্ছেন তিনি। ওই এপ্রিলেই যুক্ত হবেন এলিট প্যানেলে।
গত অক্টোবরেই আইসিসিকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান ৬০ বছর বয়সী ইরাসমাস। আর তারপরই গেল মাসে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে সুযোগ পান সৈকত।
বিষয়টা অনুমান করা যাচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার হোম টেস্টে আম্পায়ারিং করাটা কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে না! তাও আবার ডে-নাইট টেস্টে। আসলে আইসিসি ওই টেস্টের মাধ্যমেই সৈকতের একটা ‘পরীক্ষা' নিয়ে নেয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৩০-৩৫ হাজার দর্শকের সামনে ডে-নাইট টেস্টে প্রথমবার আম্পায়ারিং করার চ্যালেঞ্জটা দারুণভাবেই উতরে গেছেন সৈকত।
ম্যাচে সৈকতকে চ্যালেঞ্জ করা চারটি সিদ্ধান্তের মাত্র একটি ডিআরএস-এর সহায়তায় ওভার-টার্ন করতে হয়। যে সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, সেটাও ছিল ম্যাচে তার প্রথম ওভারে। এরপর পুরো ম্যাচে আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেননি বাংলাদেশের সেরা এই আম্পায়ার।
ব্রিসবেন টেস্ট শেষ করেও কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন সৈকত। কারণ, তার সহধর্মিণী ব্রিসবেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য গবেষণার কাজ করছেন। সেজন্য পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি আম্পায়ারদের একটি কর্মশালায়ও অংশ নেন তিনি। যে কারণে বিপিএলের বেশিরভাগ সময়ে তাকে মাঠে দেখা যায়নি।
তবে প্রথমবারের মতো বিপিএল ফাইনালে বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে দেখা যায় সৈকতকে। যা এর আগে কোনো বিপিএল ফাইনালে দেখা যায়নি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, মারাইস ইরাসমাসের টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় এই বাংলাদেশের মাটিতেই। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের মাটিতে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টের মধ্য দিয়ে।
সেইসঙ্গে শরফুদ্দৌলার আইসিসির এলিট প্যানেলে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অথবা ক্রিকেট সম্পর্কিত ঘটনাবলীর মধ্যে অন্যতম বড় একটি ঘটনা হতে যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই।
নানান কারণেই বিশ্ব মঞ্চে পিছিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের আম্পায়াররা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল কমিউনিকেশন গ্যাপ। সম্প্রতি এনামুল হক মনি বলেন, সৈকতের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ অনেক ভালো। তিনি বিদেশি আম্পায়ার এবং রেফারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। আগে বাংলাদেশের আম্পায়াররা সিরিজ চলাকালীন বেশিরভাগ রুমের মধ্যে সময় কাটালেও সৈকত নাকি ব্যতিক্রম। তিনি বিদেশি রেফারি এবং আম্পায়ারদের সঙ্গে আড্ডা দেন, ঘুরতে যান। যার ফলে আইসিসির আম্পায়ারিং কমিটিতে বেশ ভালো ইমপ্রেশন রয়েছে সৈকতের। আর বিসিবির পক্ষ থেকেও সৈকতকে নানাভাবে সহায়তা করা হয়েছে বিগত কয়েক বছরে।
৪৭ বছর বয়সী সৈকতের জন্ম ১৯৭৬ সালের ১৬ অক্টোবর, ঢাকায়। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির উচ্চতার এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ক্রিকেটে ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার ও বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। একজন ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারায়, ক্যারিয়ার সাজান আম্পায়ার হিসেবে।
ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১০টি টেস্ট, ৬১টি ওয়ানডে ও ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন সৈকত। এর বাইরে নারীদের ১৩ ওয়ানডে ও ২৮ টি-টোয়েন্টিতেও আম্পায়ারিং করেন বাংলাদেশের এই গর্ব।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ