আগামী জুলাইয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকের আসর। বিশ্বের বৃহত্তম এই ক্রীড়া আসরে ইভেন্ট হিসেবে থাকছে ফুটবলও। সেই ইভেন্টের জন্য এই মুহূর্তে চলছে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্ব। দুই ধাপের বাছাই পর্ব পেরিয়ে লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে মাত্র দু’দলই চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অংশ নিতে পারবে।
কনমেবল প্রি-অলিম্পিক টুর্নামেন্ট নামের দুই ধাপের বাছাই পর্বের প্রথম পর্বের খেলা শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। যেখানে দুই গ্রুপে পাঁচটি করে মোট ১০টি দল নিজেদের মধ্যে মোকাবেলা করেছে। দুই গ্রুপ থেকেই শীর্ষ দুই দল জায়গা করে নিয়েছে চূড়ান্ত বাছাই পর্বে। এখানে চারটি দল একে অপরের সঙ্গে তিনটি করে ম্যাচ খেলবে। এরপর টেবিলের শীর্ষ দুটি দল প্যারিস অলিম্পিকে খেলার টিকিট কাটবে।
প্রথম পর্বে বেশ দাপটের সঙ্গেই লড়াই করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। তাই তো তারা নিজ নিজ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে চূড়ান্ত বাছাই পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। গ্রুপ ‘এ’ থেকে ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করে ব্রাজিল। তাদের সঙ্গী ৮ পয়েন্ট পাওয়া ভেনেজুয়েলা। অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’তে ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ৭ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সঙ্গী প্যারাগুয়ে।
গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চার দলই চূড়ান্ত পর্বের প্রথম ম্যাচে খেলতে মাঠে নামে। যেখানে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল প্যারাগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ভেনেজুয়েলা।এদিন খেলার চেয়ে মাঠে শক্তি প্রদর্শনই করে চারটি দল। যার ফলে আর্জেন্টিনা-ভেনেজুয়েলার ম্যাচে ৩২টি ফাউল কাউন্ট করা হয় এবং দু’দলের ৩ জনকে লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য হন রেফারি। অন্যদিকে প্যারাগুয়ে-ব্রাজিল ম্যাচে লাল কার্ড খাওয়ার মতো বিষয় না ঘটলেও ৩৫টি ফাউল কাউন্ট করা হয়।
আর্জেন্টিনা ইনজুরি টাইমের শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে পড়ে ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়লেও প্রতিপক্ষ ব্রাজিল ১-০ গোলে হেরে যায় প্যারাগুয়ের কাছে। যদিও ম্যাচটি ফল অন্যরকম হতে পারত যদিন না এনদ্রিকে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ না হতেন। লাতিনের দুই পরাশক্তির এমন পরিস্থিতিতে জমে উঠেছে বাছাই পর্ব। তাই তো অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বের আগেই দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা পড়েছে বাদের শঙ্কায়।
বাছাইপর্বের চূড়ান্ত পর্বের প্রথম ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে প্যারাগুয়ে। ১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ভেনেজুয়েলা। গ্রুপ পর্বের অ্যাগ্রিগেটে পিছিয়ে থাকায় ভেনেজুয়েলার সমান পয়েন্ট পেয়েও আর্জেন্টিনা রয়েছে তৃতীয় স্থানে। চার নম্বরে থাকা ব্রাজিলের ঝুলিতে নেই কোনো পয়েন্ট তাই তারা রয়েছে টেবিলে শেষ দল হিসেবে। তাই তো অলিম্পিকে খেলতে হলে অবশ্যই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে শীর্ষ দুইয়ের মধ্যে থাকতেই হবে।
উভয় দলের হাতে ম্যাচ আছে আর ২টি করে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। একই দিনে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি শেষ ম্যাচে নিজেদের মুখোমুখি হবে এই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। নিজ নিজ ম্যাচে দুই দল প্যারাগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জয় পেলে শেষ ম্যাচটি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জন্য ফাইনাল।
ব্রাজিলকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট পাওয়া প্যারাগুয়ে রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। হাতে থাকা দুই ম্যাচ তেকে তাই একটি ম্যাচে জিততে পারলেই তারা টেবিলের শীর্ষ দল হয়ে অলিম্পিকের টিকিট কাটবে। তবে যদি ১ বা ২ পয়েন্টও অর্জন করতে পারে, তারপরেও চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে তাদের সামনে। আর আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল যদি তাদের বাকি দুই ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট করে অর্জন করতে পারে। তবে অলিম্পিকের বিমানের টিকিট কাটতে পারবে।
তবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা উভয় দলের জন্য ৬ পয়েন্ট অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারণ দু’দলেই যে একটি ম্যাচে একে অপরের প্রতিপক্ষ। এই দুই ম্যাচের একটিতে জয় ও নিজ নিজ ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করলে আর্জেন্টিনার সংগ্রহ দাঁড়াবে ৫, আর ব্রাজিলের ৪। প্যার্যাগুয়ে-ভেনেজুয়েলা ম্যাচে প্যারাগুয়ে জয় পেলে বাদ পড়বে ব্রাজিল। কিন্তু ভেনেজুয়েলা জয় পেলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মতো তাদের সংগ্রহও দাঁড়াবে ৪ পয়েন্ট করে। আর ম্যাচটি ড্র হলে প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পয়েন্ট হবে সমান ৪।
পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে সামনে আসবে হেড টু হেড ফলাফল এবং গোল ব্যবধান। সে ক্ষেত্রেও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কোনো এক দলের বাদ পড়ার শঙ্কা থেকেই যায়।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ