দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও নিয়েছেন তিনি।
এরই মধ্যে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হচ্ছেন পাপন ৷ শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। যেখানে পূর্ণমন্ত্রীর তালিকায় ঠাঁই হয়েছে নাজমুল হাসান পাপনের নাম।
আর এ কারণেই এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, পাপন যদি মন্ত্রিত্ব পান, তাহলে বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না?
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক বোর্ড পরিচালক জানিয়েছেন, মন্ত্রিত্বের সঙ্গে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগেও কয়েকজন মন্ত্রী বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নাজমুল হাসান পাপনও একইভাবে চালিয়ে যাবেন। এছাড়া বিসিবি সভাপতির পদটি বোর্ডের কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত পদ। তাই বিসিবির সভাপতিত্ব ছেড়ে দেওয়ার কোনো বিষয় এখনো সামনে আসেনি।
অতীতে মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো রাজনীতিকেরা। সেই ধারাবাহিকতায় পাপনও চাইলে বিসিবির দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন।
তবে যে গুঞ্জন উঠেছে, তা যদি সত্য হয় অর্থাৎ পাপন যদি বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দেন, সেক্ষেত্রে কে হবেন তার স্থলাভিষিক্ত?
নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি আর বেশি দিন বিসিবির দায়িত্বে থাকবেন না। ২০২১ সালের আগস্টে তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর পাপনের নেতৃত্বে বোর্ডের চলতি মেয়াদও শেষ হবে ২০২৫ সালের আগস্টে।
সেক্ষেত্রে, বিসিবির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সামনে আসছে দেশসেরা অধিনায়ক এবং নড়াইল-২ আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজার নাম। সবচেয়ে বেশিই উচ্চারিত হচ্ছে এই নামটি। মাশরাফির নিজেরও এ নিয়ে আগ্রহ আছে। তাহলে ম্যাশ-ই কি হতে যাচ্ছেন পরবর্তী বোর্ড সভাপতি?
এছাড়াও সামনে আসছে আরও একটি নাম? হ্যা, সাকিব আল হাসান। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। বরং সাকিব এক্ষেত্রে মাশরাফির চেয়ে অনেকটাই বেশি আগ্রহী। সেটা রিসেন্ট পাস্টেও যেমন লক্ষ্য করা গেছে, তেমনি অতি সম্প্রতি মুখ ফুটেই বলেছেন মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে- নির্বাচিত হলে মন্ত্রিত্ব না বিসিবি সভাপতি—কোনটা বেছে নেবেন, এমন প্রশ্ন করা হলে সাকিব বিসিবি সভাপতি পদকেই বেছে নেন।
তবে বাস্তবতার দিক থেকে সাকিব অনেকটাই পিছিয়ে আছেন মাশরাফির থেকে। কেননা, সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখনো চলমান এবং তিনি তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলের অধিনায়ক। শুধু তা-ই নয়, পারফরম্যান্সের দিক দিয়েও সাকিবের অবসর নিতে এখনো অনেক সময় বাকী।
অন্যদিকে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি এখন বলা যায় পুরোপুরিই একজন রাজনীতিক ও সমাজ সেবক। পাশাপাশি ক্রিকেট উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে বাস্তবিক অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তিনি সাকিবের থেকে ঢের এগিয়ে।
তাই তো পরবর্তী বিসিবি সভাপতি হিসেবে দেশের বেশিরভাগ ক্রীড়ানুরাগী, বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক ও ভক্ত-সমর্থকরা মাশরাফিকেই দেখতে চাইছেন। যেমনটা বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং সাবেক বিসিবি সভাপতি ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
অধিনায়কত্ব থেকে বিদায়ের পর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘মাশরাফি দেশের ক্রিকেটারদের আইকন। আমরা তাকে সর্বোচ্চ জায়গায় দেওয়ার জন্যই অপেক্ষা করতেছি। মাশরাফিকে আমরা তার যোগ্য মর্যাদার স্থানেই বসাবো’।
বিসিবি এবং আইসিসি’র সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাশরাফি সবার আইকন। মাশরাফি তার জায়গাতে সব সময় সেরা। সেই অধিনায়কত্ব ছেড়েছে, এখন এমপি। তার সাথে আমাদের সবসময় যোগাযোগ ছিল, আছে। তাকে আমরা সর্বোচ্চ মর্যাদাই দেব।’
আর সেই সর্বোচ্চ সম্মানটাই হতে পারে বিসিবি সভাপতি। তবে এর সবটাই নির্ভর করছে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ওপরেই। দেখার অপেক্ষা তিনি ঠিক কোন কাজটি করেন।
নয়া শতাব্দী/এনএস/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ