নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া দুই দলের জন্যই। সে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও অন্তত তৃতীয় হয়ে শেষ করতে চাইবে দুই দলই। ম্যাচটা অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার হলেও ছেড়ে কথা বলবে না কেউই। বিশ্বকাপের শেষ বেলায় এসে আরও একটি জমজমাট প্রত্যাশা করতেই পারেন সমর্থকরা।
দীর্ঘ বিশ্বকাপ শেষে চোট সমস্যা দেখা দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া শিবিরে। নিয়মিত মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ ও ডিফেন্ডার জোসিপ জুরানোভিচ ভুগছেন ইনজুরিতে। ব্রোজোভিচের চোট তেমন মারাত্মক না হলেও তাকে খেলানোর ঝুঁকি নাও নিতে পারেন দালিচ। মরক্কো শিবিরেও আছে একই সমস্যা, নৌসাইর মাজরাউইন ও নায়েফ আগুয়ের্ড পুরোপুরি সেরে উঠেননি এখনও। অধিনায়ক রোমেইন সাইস চোট নিয়েই নেমেছিলেন সেমিফাইনাল, ফলে এই ম্যাচে তাকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হয়েছিল দলদুটি। সে লড়াইয়ে জিততে পারেনি কেউই। গোলশূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল তারা। কিন্তু এবার এমন কিছুর সুযোগ নেই। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ফলাফল না হলে ম্যাচ গড়াবে টাই-ব্রেকারে। আর সেখানে নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট ক্রোয়েশিয়া। আসরে যে কখনোই এ ভাগ্য পরীক্ষায় হারেনি দলটি।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে মরক্কো। ম্যাচের ফলাফল জানা যাবে ম্যাচ শেষেই, তবে তার আগে একাদশ ও ফর্মেশন দেখে নেয়া যাক-
মরক্কো: (৪-৩-৩) ইয়াসিন বুনো (গোলরক্ষক), জাওয়াদ এল ইয়ামিক, আশরাফ হাকিমি, আশরাফ দারি, ইয়াহিয়া আত্তিয়াত আল্লাহ, সোফিয়ান আমরাবাত, সেলিম আমাল্লাহ, আজজেদিন ওনাহি, সোফিয়ান বোফাল, ইউসেফ এন-নেসিরি ও হাকিম জিয়েশ।
ক্রোয়েশিয়া: (৪-৩-৩) দমিনিক লিভাকোভিচ (গোলরক্ষক), জোসিপ স্ট্যানিসিচ, দেজান লোভরেন, জোসিপ সুতালো, বোর্না সোসা, লুকা মদ্রিচ, মাতেও কোভাচিচ, ক্রিস্তিয়ান জ্যাকিচ, ইভান পেরিসিচ, আন্দ্রেজ ক্রামারিচ ও নিকোলা ভ্লাসিচ।
তৃতীয় স্থান নিশ্চিতের এই ম্যাচে নজর থাকবে যাদের ওপর-
সাফল্য পেতে গোল করার বিকল্প নেই মরক্কোর। তার জন্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে হাকিম জিয়েশকে। আক্রমণ গড়ার পাশাপাশি গোল করার দিকেও মনোযোগী হতে হবে চেলসি ফরোয়ার্ডকে। সেই সঙ্গে ফিনিশিংটা ঠিকমতো করতে হবে সোফিয়ান বোফাল-ইউসেফ এন নেসিরিকেও। রক্ষণের নেতৃত্ব থাকবে আশরাফ হাকিমির কাঁধেই, পাশাপাশি ডান প্রান্ত থেকে সফল আক্রমণ গড়তেও পিএসজি তারকার ওপর নির্ভর করবে মরক্কানরা।
তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করতে ক্রোয়েশিয়াকে খেলার ধরণ বদলে হতে হবে আক্রমণাত্মক। কাউন্টার অ্যাটাকের ভরসায় না থেকে প্রতিপক্ষ গোলমুখে একের পর এক আক্রমণ চালাতে হবে ইভান পেরিসিচ-আন্দ্রেজ ক্রামারিচদের। মাঝমাঠে লুকা মদ্রিচের উপস্থিতিও হতে হবে প্রাণবন্ত। গোল হজমের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে দমিনিক লিভাকোভিচকেও থাকতে হবে সেরা ছন্দে।
মরক্কো বনাম ক্রোয়েশিয়ার অন্যান্য পরিসংখ্যান-
১. এখন পর্যন্ত মাত্র দুইবার মুখোমুখি হয়েছে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। যার একটি এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে। দুই দলের প্রথম ম্যাচটি হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। কিং হাসান টু আন্তর্জাতিক কাপের সেমিফাইনালের সেই ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৭-৬ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ক্রোয়াটরা (তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া)।
২. প্রথম আরব ও আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে মরক্কো। প্রথম আরব ম্যানেজার হিসেবে কোন দলকে ফুটবলের মহাযজ্ঞের সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে রেকর্ড গড়েছেন ওয়ালিদ রেগরাগিও।
৩. সেমিফাইনালের আগে কাতার বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ কোনো দলের কাছে গোল হজম করেনি মরক্কো। ফ্রান্সই প্রথম সক্ষম হয় আরবদের জালে বল রাখতে। এর আগে গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে তাদের হজম করা গোলটি ছিল নায়েফ আগুয়ের্ডের দেওয়া আত্মঘাতী গোল।
৪. এর আগেও বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল দলটি।
৫. সর্বশেষ চারটি বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করা দলগুলোর সবকটিই ছিল ইউরোপের। ২০০২ সালে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে ইউরোপের বাইরের কোনো দল হিসেবে শেষবার এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল মূলত এশিয়ার দল হিসেবে পরিচিত তুরস্ক।
৬. গত ১৯টি ফিফা বিশ্বকাপ ধরে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ গড়ায়নি টাইব্রেকারে। এর মধ্যে অতিরিক্ত সময়ে এই ম্যাচ একবারই গড়িয়েছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম ম্যাচে।
৭. এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ছয়টি গোল করেছেন ইভান পেরিসিচ। আর একটি গোল করলেই দাভোর সুকারকে টপকে এই প্রতিযোগিতায় ক্রোয়াটদের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যাবেন ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ