এবার সাংবাদিকদের ওপর ‘ক্ষেপেছেন’ আলোচিত মরিয়ম মান্নান। সাংবাদিকদের বিষোদগার করে ‘দালাল’ আখ্যা দিয়ে মায়ের জন্য করা আন্দোলনের জন্য যে চোখের জল পড়েছে তার দাম চেয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে।
গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হইচই মরিয়ম মান্নানের মায়ের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে। মরিয়ম নিজেই দিয়ে আসছিলেন নানা আপডেট। একপর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়। এক পোস্টে বলেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এইমাত্র।’
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর মৃতদেহের পোশাক দেখে তাকে নিজের মা দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। তবে পরদিন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে মরিয়াম জানান, তার মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, খুলনার পুলিশ সুপার তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন।
পুলিশের অভিযানে জীবিত মাকে উদ্ধারের পর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে মরিয়ম মান্নান তার মাকে খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তবে পোস্টটির কমেন্টে তিনি বেশ আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন।
প্রথমদিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজের আন্দোলনে এই মাধ্যমে লাইক, কমেন্টে শেয়ার করে ভার্চুয়ালি সঙ্গে ছিলেন, এখন তাদের অনেকেই মরিয়মের পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘আবেগ ফেরত চাই’।
পুলিশের অভিযানে জীবিত মাকে উদ্ধারের পর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে মরিয়ম মান্নান তার মাকে খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তবে পোস্টটির কমেন্টে তিনি দেন বেশ আক্রমণাত্মক বক্তব্য।
এতে তিনি লিখেছেন, ‘দালাল সাংবাদিকরা যে যা দিল সব বিশ্বাস করে নিলেন এত সহজে? আর আমি আমার মায়ের জন্য এত সংগ্রাম করেছি, এত চোখের জল পড়েছে, সেটার কী দাম নেই?
‘আপনারা স্রোতে গা ভাসালেও আমি ভাসাই না, অপেক্ষা করছি শিগগিরই আপনারা সব জানবেন।’
মাকে খোঁজার পোস্টে যারা তার প্রতি ইতিবাচক ছিলেন, তাদের অনেকেই তার এই পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করেন। ‘হা হা’ রিয়্যাক্ট দিয়েছেন বহু ফেসবুক ব্যবহারকারী।
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। পরের দিন দৌলতপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী। রহিমা নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার হন মরিয়ম মান্নানসহ তার অন্য মেয়েরা।
২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহকে রহিমা বেগমের বলে দাবি করেন তার মেয়েরা। ওই রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক এক পোস্টে বলেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এইমাত্র।’
মরিয়ম মান্নান সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘২৭ দিন ধরে আমার মা নিখোঁজ। আমরা প্রতিনিয়ত মাকে খুঁজছি। এরই মধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও ছবিতে আমার মায়ের শরীর, কপাল ও হাত দেখে মনে হয়েছে, এটাই আমার মা।’
সেদিন ফেসবুকে মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘লাশটা পচাগলা অবস্থায় পেয়েছেন তারা। আমি এবং বাকি সবাই অফিশিয়ালি প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত, আমার মায়ের শরীর সব চেনা এসব নিয়ে আমি কিভাবে ভুল করি!’
এরপর আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়েছে! এখন রিপোর্ট এলেই নিশ্চিত হয়ে যাব আর খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দিব! ’
রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর পোস্ট দিয়ে মরিয়ম বলেছেন, ‘মা এই তিরিশ দিন কোথায় ছিল, কিভাবে ছিল, সেটা আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন। মাকে খুঁজে পাওয়ার লড়াই ছিল আমার। আপনারা সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের সহযোগিতায় আজকে আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ!’
ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনায় আসা মরিয়ম মান্নানের মাকে উদ্ধার নিয়ে শনিবার গভীর রাতে খুলনার দৌলতপুর থানায় ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, রহিমা বেগম ফরিদপুরে আছেন। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের নির্দেশে আমাদের দক্ষ কিছু কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।’
রহিমার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল না জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সব ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল। তাকে আমরা কোনোভাবেই ট্র্যাক করতে পারছিলাম না।
‘গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে তিনি বসে গল্প করছিলেন, তবে আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধারের পর কোনো কথার জবাব দেননি। সেই থেকে তিনি নির্বাক রয়েছেন।’
পুলিশের ভাষ্য, জমিসংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা-মেয়েরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ