ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থায় পবিত্র জীবনের জয়গান

প্রকাশনার সময়: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২০

কিছুদিন আগে সুদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল। রায়ে সরকারকে সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দিয়ে বলা হয়, ‘দেশের অর্থব্যবস্থা সুদমুক্ত করার দায়িত্ব আইনবিদ ও সরকারের। দেশের অর্থব্যবস্থা সুদমুক্ত করা সম্ভব।’ কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালতের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংক ও এস্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিল। সম্প্রতি সে আপিল তুলে নিতে পাকিস্তান সরকার আদেশ জারি করেছে। এটা বড় খুশির খবর!

এর মধ্যে এস্টেট ব্যাংক নিজেদের আপিল তুলে নিয়েছে। আশা করা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকও অতিদ্রুত তাদের পথে হাঁটবে। প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক কয়েকটি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্টে এখনো মামলা দায়ের করে রেখেছে। তাদের নিকট দৃঢ় প্রত্যাশা, তারাও নিজেদের আপিল প্রত্যাহার করবেন। নতুবা সরকারের উচিত, আপিল বহাল রাখা ব্যাংকগুলোর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করা। আর জনগণের উচিত, আপিলকারী ব্যাংকগুলো ফিরে না আসলে, তাদের বয়কট করা। এসব ব্যাংক থেকে নিজেদের একাউন্ট অন্যত্র সরিয়ে নেয়া। তবে এক্ষেত্রে ধর্মীয়-রাজনৈতিক দল ও উলামায়ে কেরামকে অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

গত সপ্তাহে ঘনিষ্ট এক মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সূত্রে জানতে পেরেছি, সুদের বিরুদ্ধে সরকারের এই মহাসিদ্ধান্তের পেছনে মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হ্যাঁ, আশ্চর্য হলেও সত্য, ইনিই সেই নওয়াজ শরিফ, ১৯৯২ সালে যার শাসনামলে সুদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালতের ফয়সালাকে সুপ্রিম কোর্টে সরকারের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল! সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা চালু করতে বাধা দেয়া হয়েছিল! সে মামলাকে আদালতে এমন ন্যক্কারজনকভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, সিদ্ধান্ত পেতে মাঝে ৩০ বছরের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে! বর্তমানে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালত পুনরায় সে ফয়সালা শুনিয়ে দিয়েছে।

যদিও বর্তমান অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার আগে থেকেই এই মামলা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু আমার জানা মতে, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেউ তাকে প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, ১৯৯২ সালে তার সেই বড় ভুলের খেসারত দেয়ার এখনই সেরা সময়।

নওয়াজ শরিফকে বলা হয়েছে, যেহেতু এখন তার দল এন-লীগের শাসন চলছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারই সহোদর ছোট ভাই, এদিকে শাহবাজ শরিফের শাসনামলে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালতের ফয়সালাকে কয়েকটি প্রাদেশিক ব্যাংক, এস্টেট ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখা হয়েছে, ফলে নওয়াজ শরিফের দায়িত্ব, তিনি নিজের মহাভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে শুধু ব্যাংকগুলোর আপিল সুপ্রিম কোর্ট থেকে ফিরিয়েই আনবেন না, বরং একথা দৃঢ় ও বিশ্বাসযোগ্য করবেন, আগামী পাঁচ বছরের ভেতরে অবশ্যই পাকিস্তান থেকে সুদি অর্থব্যবস্থা বিদায় নেবে।

সংশ্লিষ্ট মাধ্যম আমাকে আরও জানিয়েছে, নওয়াজ শরিফ অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে জোরালো আদেশ করেছেন, যেন অতিদ্রুত সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আপিল তুলে নেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা হয়। ইসহাক দারও এমন কথা বলেছেন। ইসহাক দার এখন বিচক্ষণতার সঙ্গে সামনে এগোচ্ছেন। এমন নীতিমালা প্রস্তুত করছেন, যার অধীনে সুদি অর্থব্যবস্থা খতম করতে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

পরিকল্পনায় এটাও আছে, সাবেক বিচারপতি শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানির নেতৃত্বে ইসলামি অর্থনীতিতে প্রাজ্ঞ একদল অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে একটি ট্যাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় শরয়ি আদালতের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নযোগ্য করতে কাজ করবেন। তবে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদ্যমান সেসব ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা দূর করা জরুরি, যেগুলো ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অথবা যার ভেতরে ঋণগ্রহণকারী ও ব্যাংকের কোনো প্রকার অবৈধ উপকার হবে।

সাধারণ মানুষের অনুধাবনের জন্য ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পদ্ধতি, উপকার ও প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাপকাকারে প্রচার করা আবশ্যক। সুদি অর্থব্যবস্থার সঙ্গে ইসলামি অর্থব্যবস্থার পার্থক্যগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। ইসলামি ব্যাংকিংয়ে সাধারণ ব্যাংকের মতো নাজায়েজ লাভ ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই কেন, সেসব কারণ পরিষ্কার করতে হবে। অনেক মানুষের ভেতর ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পদ্ধতির ব্যাপারে অস্পষ্টতা আছে। সেসব অস্পষ্টতা দূর করার প্রধান দায়িত্ব দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম, বিজ্ঞ ইসলামি অর্থনীতিবিদ ও সরকারের ওপর।

ইসলামি শরিয়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতর অভিশপ্ত সুদি অর্থব্যবস্থার কবর রচনার জন্য প্রথমবার প্রবল আশা জন্ম দিয়েছে। সরকার ও আদালত সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নে একমত হয়েছেন। সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এবার আমরা এই গজব থেকে মুক্তি পাব। এ ব্যাপারে যে ব্যক্তিই এখন পর্যন্ত চেষ্টা-মেহনত করেছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন, তাদের সবার জন্য ইহকালীন-পরকালীন মহাপ্রতিদানের দোয়া রইল।

ডেইলি জঙ্গ এ প্রকাশিত প্রখ্যাত পাকিস্তানি সাংবাদিকের কলাম থেকে অনুবাদ আমিরুল ইসলাম লুকমান

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ