আল্লাহ মহান ও পবিত্র। তিনি পৃথিবীর একমাত্র স্রষ্টা। তিনি সৃষ্টিজীবের ওপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি চান, মানুষ নেক আমল করে জান্নাতবাসী হোক। তারপরও মানুষ গুনাহ করে। অনেক মুসলমান গুনাহ করে অনুশোচনা বোধ করে। ভেতরে খারাপ লাগা তৈরি হয়। আল্লাহর কথা ভাবে। ভাবে আজাবের কথা। সেই ভাবনা থেকে একজন যেমন জানতে চেয়েছেন, হাদিসে এমন কোনো কথা আছে কি না যে, ব্যভিচারের গুনাহের কারণে রহমানের আরশ কেঁপে ওঠে? শুধু ব্যভিচারের গুনাহের কারণেই কি রহমানের আরশ কেঁপে ওঠে; নাকি হত্যা ও সমকামিতার গুনাহের কারণেও রহমানের আরশ কেঁপে ওঠে?
কোরআন ও সুন্নাহতে এমন কিছু বর্ণিত নেই, যা প্রমাণ করে যে, কোনো পাপ ও গুনাহতে লিপ্ত হওয়ার কারণে রহমানের আরশ কেঁপে ওঠে।
ব্যভিচার ও সমকামিতা জঘন্য পাপ ও কবিরা গুনাহ। কিন্তু এই পাপগুলো ঘটলে আরশ কেঁপে ওঠার কথা উদ্ধৃত হয়নি। শরিয়তের সহিহ ও সুস্পষ্ট দলিল ছাড়া কোনো দাবি করা জায়েজ নয়।
ইমাম জাহাবি বলেন, ‘আরশ আল্লাহর অনুগত সৃষ্টি। আল্লাহ যখন চান তখনই এটি কেঁপে ওঠে।’(সিয়ার আলামিন নুবালা : ১/২৯৭)
তবে প্রশ্নকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, এই গুনাহগুলোর ব্যাপারে আরশ কেঁপে ওঠার চেয়ে কঠিন কথা এবং অন্তর আৎকে ওঠার মতো উদ্ধৃতি রয়েছে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর চেয়ে অধিক গাইরত (প্রতিরক্ষামূলক ঈর্ষা) সম্পন্ন আর কোনো সত্তা নেই। এ জন্যই তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্ত অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। তেমনিভাবে আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রশংসা পছন্দকারীও কেউ নেই। এ কারণেই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৬৩৪)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুহাম্মাদের উম্মাতেরা, আল্লাহর চেয়ে অধিক গাইরত (প্রতিরক্ষামূলক ঈর্ষা) সম্পন্ন আর কেউ নেই যে, তিনি তাঁর বান্দাকে বা বান্দিকে ব্যভিচার করতে দেখবেন। হে মুহাম্মাদের উম্মতরা, আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তাহলে নিশ্চয় তোমরা কম হাসতে ও বেশি কাঁদতে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২১)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘গাইরতের মধ্যে এমন ঘৃণা ও ক্রোধ থাকে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি যেটা থেকে গাইরত অনুভব করে সেটাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তাআলা সেটাকে ঘৃণা করেন এবং তিনি যা কিছু নিষিদ্ধ করেছেন সে সব কিছুকে তিনি ঘৃণা করেন; যেমনিভাবে তিনি যা কিছুর নির্দেশ দিয়েছেন সে সবকে তিনি ভালোবাসেন। (কায়িদা ফিল মাহাব্বাহ : ২০০-২০১)
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ