ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রসুল (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি

প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১০:১০

মহানবী (সা.) হলেন শ্রেষ্ঠতম ও মহত্তম মহামানব। তাঁর চরিত্রমাধুরীকে মানবতার সর্বকালের সেরা আখ্যায়িত করেছেন খোদ সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে তিনি এরশাদ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই আপনি মহত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম: ৪)

মহানবীর (সা.) মহানতম চরিত্র মুগ্ধ হয়ে তাঁর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁর ঘোর শত্রুরা। তাঁর চরিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন সবযুগের সেরা মহামানবরা। তাঁর চরিত্রমাধুরীর বর্ণনা কোনো প্রবন্ধে সম্ভব নয়। তথাপি সংক্ষেপে তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য তুলে ধরা হলো:

আল্লাহর সঙ্গে শিষ্টাচারিতা : আব্দুল্লাহ বিন শিখখির বলেন, একদা আমরা বললাম, আপনি আমাদের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বললেন, প্রকৃত নেতা হলেন বরকতময় মহিয়ান আল্লাহ। আমরা বললাম, আপনি মর্যাদার দিক থেকে আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দানের বিশালতায় আপনি মহান। তিনি বললেন, তোমাদের এ কথা তোমরা বলতে পারো, অথবা তোমাদের এরূপ কিছু বলায় কোনো সমস্যা নেই। তবে শয়তান যেন তোমাদেরকে তার প্রতিনিধি না বানায়।

অমিত বীর-বিক্রম : আলী (রা.) বলেন, যুদ্ধের আগুন জলে উঠে যখন প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হতো, আমরা তখন রাসুল (সা.) এর আড়াল গ্রহণ করতাম। কেউ তাঁর চেয়ে বেশি শত্রুর কাছাকাছি হতো না।

তাকওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, শোনো আল্লাহর কসম আমি তোমাদের চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি, তাঁর ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশি রাখি।

পত্নীদের প্রতি সদাচারী : নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’

লজ্জাশীলতা : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) পর্দানশীল কুমারী মহিলার চাইতেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। আর যখন তিনি কোনো জিনিসকে অপছন্দ করতেন আমরা তাঁর মুখাবয়ব হতে তা বুঝতে পারতাম।’

সৌকর্য : আয়েশা (রা.) বলেন , নবী (সা.)-কে যখনই (আল্লাহর নিকট থেকে) দুটো কাজের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হতো, তখন তিনি দুটোর সহজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না সেটা গুনাহর কাজ হতো। যদি সেটা গুনাহর কাজ হতো তাহলে তিনি তাত্থেকে বহু দূরে থাকতেন।

প্রতিশোধ অগ্রহণকারী : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনও তাঁর ব্যক্তিগত কারণে কোনো কিছুর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যতক্ষণ না আল্লাহর হারামসমূহকে ছিন্ন করা হতো। সেক্ষেত্রে আল্লাহর জন্য তিনি প্রতিশোধ নিতেন।

খাবারের নিন্দা না করাম : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো সময় কোনো খাদ্যকে মন্দ বলেননি। কোনো খাদ্য প্রিয় হলে খেয়েছেন আর পছন্দ না হলে ছেড়ে দিয়েছেন।’

উপঢৌকন গ্রহণকারী : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং তার প্রতিদানও দিতেন।’

দান-দক্ষিণা না খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি কী জান না যে, মুহাম্মাদের বংশধর (বনু হাশিম) সদকা ভক্ষণ করে না।’

বিনয়-নম্রতা : উক্ববা বিন আমের (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট এল। তিনি লোকটির সঙ্গে কথা বলেন। তার কাঁধের গোশ্ত (ভয়ে) কাঁপছিল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি শান্ত হও, স্ব্বাভাবিক হও। কারণ আমি কোনো রাজা-বাদশা নই, বরং আমি শুকনো গোশ্ত খেয়ে জীবনধারিনী এক মহিলার পুত্র।’

পত্নীসেবা : আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ (রা.) বলেন, আমি আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ‘ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। (অর্থাৎ স্ত্রীদের সহায়তা করতেন) আর সালাতের সময় হলে সালাতের জন্য চলে যেতেন।’

সেবকের সঙ্গে অমায়িক আচরণ : আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি দশ বছর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করেছি। আল্লাহর শপথ তিনি কখনো আমাকে ‘উহ্’ শব্দও বলেননি এবং কোনো সময় আমাকে ‘এটা কেন করলে’, ‘ওটা কেন করনি’ তাও বলেননি।’

জীবিকায় অল্পেতুষ্টি : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওফাত পর্যন্ত মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারবর্গ একাধারে দুদিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি।’

দুনিয়াবিমুখতা : নবী (সা.) বলেন, ‘আমার নিকট এ উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ হোক, আর তা ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দেয়া ছাড়া একটি দিনারও তা থেকে আমার কাছে জমা থাকুক আর এ অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হোক তা আমাকে আনন্দ দিবে না। বরং আমি তা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এভাবে বিলিয়ে দেব।’

সুশীল ভাষী : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী ছিলেন না, অশ্লীল ব্যবহারও করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হট্টগোল করতেন না এবং অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন।’

কোনো অপরিচিতার হাতের তালু স্পর্শ করতেন না: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তালু কোনো দিন কোনো (অপরিচিতা) মহিলার তালুর স্পর্শ লাগেনি।’

অনাড়ম্বর বাসস্থান ও জীবনযাত্রা: উমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রবেশ করলাম। সে সময় তিনি খেজুরপাতায় বানানো একটি চাটাইয়ের ওপর কাত হয়ে শোয়া ছিলেন। আমি সেখানে বসে পড়লাম। তিনি তাঁর চাদরখানি তাঁর শরীরের ওপরে টেনে দিলেন। তখন এটি ছাড়া ঁতার পরনে অন্য কোনো কাপড় ছিল না আর বাহুতে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি স্ব্বচক্ষে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামানাদির দিকে তাকালাম। আমি সেখানে একটি পাত্রে এক সা’ (আড়াই কেজি পরিমাণ) এর কাছাকাছি কয়েক মুঠো যব দেখতে পেলাম। অনুরূপ বাবলা জাতীয় গাছের কিছু পাতা (যা দিয়ে চামড়ায় রং করা হয়।) কামরার এক কোণায় পড়ে আছে দেখলাম। আরও দেখতে পেলাম ঝুলন্ত একখানি চামড়া যা পাকানো ছিল না।

তখন তিনি বলেন, এসব দেখে আমার দু’ চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি (সা.) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র কিসে তোমার কান্না পেয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী কেন আমি কাঁদব না। এই যে চাটাই আপনার শরীরের পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। আর এই হচ্ছে আপনার কোষাগার। এখানে সামান্য কিছু যা দেখলাম তাছাড়া তো আর কিছুই নেই। পক্ষান্তরে ওই যে রোমক বাদশাহ ও পারস্য সম্রাট, কত বিলাসব্যাসনে ফলমূল ও ঝরণায় পরিবেষ্টিত হয়ে আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করছে। আর আপনি হলেন আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তি। আর আপনার কোষাগার হচ্ছে এই। তখন তিনি বললেন, হে খাত্তাবতনয়, তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাত আর তাদের জন্য দুনিয়া (পার্থিব ভোগবিলাস)। আমি বললাম, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ