আল্লাহতায়ালার ৯৯টি নাম। আল্লাহর সব নামই অতি নান্দনিক। সেগুলো সৌন্দর্যে সর্বশীর্ষে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক।’ (সুরা আল-আরাফ : ১৮০)
কারণ তা পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিসম্পন্ন, যাতে কোনোভাবেই কোনো ধরনের অপূর্ণতা নেই, না সম্ভাব্য কোনো অপূর্ণতা, না অব্যক্ত কোনো অপূর্ণতা। এর উদাহরণ আল-হাইউ তথা ‘চিরঞ্জীব’—আল্লাহর নামসমূহের একটি, যা এমন পূর্ণাঙ্গ জীবনকে নির্দেশ করে যা অস্তিত্বহীনতার পর্ব পেরিয়ে আসেনি এবং যাকে কখনও অস্তিত্বহীনতা স্পর্শ করবে না। যে জীবন সব পূর্ণাঙ্গ গুণাবলির ধারক, যেমন : জ্ঞান, ক্ষমতা, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় উদাহরণ: আল আলিম তথা ‘সর্বজ্ঞ’—আল্লাহর নামসমূহের একটি, যা পরিপূর্ণ জ্ঞানকে নির্দেশ করে, যে জ্ঞান কোনো অজ্ঞতার পর্ব পেরিয়ে আসেনি এবং যে জ্ঞানকে কোনো বিস্মৃতি স্পর্শ করে না। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘মুসা বলল, ‘এর জ্ঞান আমার রবের কাছে কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না।’ (সুরা তাহা: ৫২)
সুপরিব্যাপ্ত জ্ঞান যা সবদিক থেকে সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, হোক তা আল্লাহতায়ালার কর্মাদি বিষয়ক অথবা মাখলুকের কর্মাদি বিষয়ক। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোনো পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং জমিনের অন্ধকারে কোনো দানা পড়ে না, না কোনো ভেজা এবং না কোনো শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।’ (সুরা আল-আনআম: ৫৯)
‘আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল [এখানে আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর সমাধিস্থল দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের আগে পিতৃমেরুদণ্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে]। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে [লওহে মাহফুজে]। (সুরা হুদ : ৬)
‘আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ অন্তরসমূহে যা কিছু আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা আত-তাগাবুন: ৪)
তৃতীয় উদাহরণ : (আর রাহমান) ‘পরম করুণাময়’— আল্লাহর নামসমূহের একটি যা পরিপূর্ণ রহমতকে শামিলকারী, যে রহমত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘এই নারী তার সন্তানের প্রতি যতটুকু করুণাশীল আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের প্রতি এর থেকেও অধিক করুণাশীল।’ (বুখারি : ৫৯৯৯); মুসলিম : ২৭৫৪)
হাদিসটি রসুলুল্লাহ (সা.) একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন। আর তা হলো, এক যুদ্ধ শেষে এক নারী তার শিশুকে যুদ্ধবন্দিদের ভিতরে পেল। সে তাকে তুলে নিল, পেটের সঙ্গে লাগাল এবং তাকে দুধ পান করাল। তা দেখে রসুলুল্লাহ (সা.) ওই হাদিসটি ব্যক্ত করলেন। রহমান শব্দটি আল্লাহ তায়ালার ওই ব্যাপক দয়া-করুণাকেও শামিল করে আছে যে সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন : ‘আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত রয়েছে।’ (আল আরাফ: ১৫৬)
এই রহমতের ইঙ্গিত মুমিনদের জন্য ফেরেশতাদের প্রার্থনার মধ্যেও ব্যক্ত হয়েছে যা আল্লাহতায়ালা নিম্নবর্তী আয়াতে উল্লেখ করেছেন। ‘হে আমাদের রব, আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী।’ (সুরা গাফের : ৪০: ৭)
আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে সৌন্দর্য প্রতিটি নাম আলাদা থাকা অবস্থায় যেমন পাওয়া যায়, অনুরূপভাবে একটি নামকে অন্যটির সঙ্গে একত্র করার সময়ও পাওয়া যায়। আর একটি নামকে অন্যটির সঙ্গে একত্র করলে পরিপূর্ণতার পর আরও অধিক পরিপূর্ণতা অর্জিত হয়।
এর উদাহরণ : আল-আজিজুল হাকিম ‘সর্বশক্তিমান অধিক প্রজ্ঞাময়’। আল্লাহতায়ালা আল কোরআনের বহু জায়গায় এ দুটি নামকে একত্র করে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় প্রতিটি নাম একদিকে তার নিজস্ব পূর্ণাঙ্গতাকে বুঝায়। যেমন ‘আল আজিজ’ নামে ‘ইজ্জত’ অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ শক্তি এবং ‘আল হাকিম’ নামে পূর্ণাঙ্গ হিকমত ও প্রজ্ঞাকে বুঝায়। আর এ দুটিকে একত্র করলে অন্য আরেকটি পূর্ণাঙ্গ গুণকে বুঝায়। আর তা হলো আল্লাহতায়ালার শক্তি হিকমতপূর্ণ। ফলে আল্লাহতায়ালার শক্তি কোনো জুলুম-অন্যায় ও অপকর্মকে দাবি করে না, যেমনটি হতে পারে সৃষ্টিজীবের মধ্যে যারা শক্তিধর তাদের ক্ষেত্রে। কেননা সৃষ্টিজীবের মধ্যে যে শক্তিমান সে হয়তো গুনাহ গোপন রাখার জন্য তার শক্তিমত্তাকে ব্যবহারে উদগ্রীব হয়ে ওঠতে পারে। ফলে সে জুলুম-অন্যায় ও অপকর্ম করতে শুরু করবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর বিচার ও হিকমত পূর্ণাঙ্গ শক্তিমিশ্রিত, সৃষ্টিজীবের বিচার ও হিকমতের বিপরীত; কেননা সৃষ্টিজীবের বিচার ও হিকমতে নীচুতা ও অজ্ঞতা মিশ্রিত হয়।
আরবি থেকে ভাষান্তর— ড. শামসুল হক সিদ্দিক।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ