পাবনা শহরের কালাচাঁদ পাড়া এলাকায় রয়েছে কালের সাক্ষী জোড় বাংলা মন্দির। ব্রজমোহন ক্রোড়ী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব পরিবারের তহশীলদার। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তথ্য মতে, আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে এর নির্মাণ। মন্দিরের অভ্যন্তরে শিলালিপি না থাকায় এর সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি।
মন্দিরটি যেমন
মন্দিরের ছাদটি দুটি পাকা দোচালা সংযুক্ত করে নির্মিত হয়েছে বলে এটি জোড় বাংলা নামে পরিচিত। ছাদের মধ্যভাগ বেশ উঁচু হলেও ছাদের ধার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে গেছে। মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে একটি উঁচু বেদির ওপরে। বর্তমানে মন্দিরটি ৭.০১ মিটার উঁচু। পশ্চিমমুখী মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি কক্ষ এবং এর পেছনে রয়েছে আরেকটি কক্ষ। মন্দিরটির তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে যেগুলো ২টি স্তম্ভের সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরটিতে দুদিকে ৮টি করে ১৬টি স্তম্ভ রয়েছে।
কারুকাজে ইতিহাস
মন্দিরের প্রবেশপথ এবং এর সংলগ্ন দেয়াল টেরাকোটার কারুকার্যে পূর্ণ। এই মন্দিরের দেয়ালের নকশা এবং টেরাকোটার কাজ দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বহুজ ভাঁজ বিশিষ্ট খিলান দরজার ওপরে রামায়ণ ও মহাভারতে বর্ণিত যুদ্ধের চিত্র এবং পৌরাণিক কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। মন্দিরের স্তম্বগুলোর ভিত্তিমূলে পৌরাণিক ও সামাজিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
খবর রাখেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর
তখন ১৮৯৭ সাল। ভূমিকম্প হয়েছিল পাবনায়। সেসময় মন্দিরটির ক্ষতি হয়। সংস্কার আর হয়নি। ১৯৬০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় মন্দিরটি সংস্কার করা হয়। বর্তমানে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রক্ষণাবেক্ষণে আছে।
বর্তমানে মন্দিরটিতে পূজার অর্চনা হয় না। আগে পূজা হতো। ঘণ্টার ধ্বনি বাজত। তখন এখানে গোপীনাথের মূর্তি, রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি ছিল। কেউ কেউ বলেন, এখানে কখনোই পূজা হত না।
দর্শনার্থীরা যা বললেন
প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা মন্দিরটি দেখতে আসেন। রেজোয়ান হৃদয় বললেন, জোড় বাংলা মন্দির পাবনা জেলার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী দেখে পুরনো স্থাপত্যশৈলীর ধারণা পাওয়া যায়। ইতিহাসের খোঁজ করতেই মূলত এই মন্দিরটি দেখতে আসা। মন্দিরটি ছোট হলেও এর কারুকার্যগুলো অনেক সুন্দর।
‘শহরের মধ্যে এই ধরনের স্থাপত্য খুব বেশি দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসি। এখানে এলে সময়টা যেমন ভালো কাটে, তেমনি ইতিহাসের ভেতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।’ বললেন আরেক দর্শনার্থী আশিক-উর-রহমান।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ