ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাবাঘরের অবস্থান কোথায়?

প্রকাশনার সময়: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৮:২৬
ছবি - সংগৃহীত

কাবাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তা পৃথিবীর প্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কা নগরীতে অবস্থিত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

পবিত্র কাবাঘর পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত কি না, এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ বলছেন, কাবার অবস্থান পৃথিবীর কেন্দ্রে না হলেও ‘ভৌগোলিক কেন্দ্রে’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু পৃথিবী গোলাকার, সেহেতু পৃথিবীর কেন্দ্র বলে আপাতদৃষ্টিতে কিছু নেই।

গবেষকরা জানান, পৃথিবীর কেন্দ্র ত্রিমাত্রিক একটি কনসেপ্ট হলেও ‘ভৌগোলিক কেন্দ্র’ একটি দ্বিমাত্রিক কনসেপ্ট। এই বিন্দুকে দ্বিমাত্রিক পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করা যায়। আর এই বিন্দুটি কোথায় হবে, তা পৃথিবীর ভরের ডিস্ট্রিবিউশনের ওপর নির্ভরশীল।

হাইজেনবার্গ হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, এটি তুরস্কের একটি স্থানে অবস্থিত। অপরদিকে আরেকজন বিজ্ঞানীর হিসাবমতে, এটি মিসরের কোনো এক স্থানে অবস্থিত। সব পর্যবেক্ষণেই দেখা গেছে, পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্র হিসেবে যত স্থান পাওয়া গিয়েছে, তার কোনোটিই মক্কা থেকে বেশি একটা দূরে নয়। আবার প্রাপ্ত ফলাফলগুলো যে শতভাগ সঠিক, তা-ও বেশ জোর দিয়ে বলা যায় না।

তাই কাবা যেমন পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্রে অবস্থিত প্রমাণ হয়নি, তেমনি কাবা যে পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্রে অবস্থিত নয়–সেটিও জোর দিয়ে বলা যায় না।

মুসলমানদের কিবলা কাবাঘর

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ পবিত্র কাবাকে তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলাস্থল হিসেবে কবুল করেছেন । দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের কিবলা এ কাবাঘর।

পৃথিবীর প্রথম মসজিদ

এই বায়তুল্লাহ নির্মাণে সুদূরপ্রসারী এক ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসবেত্তারা বলেন, পবিত্র ও সম্মানিত কাবা শরিফের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে সম্পাদিত হয়েছে। তাফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লার স্থানকে সমগ্র ভূপৃৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, বিশ্বের প্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম তথা বায়তুল্লাহ।

কাবার ইতিহাস

পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ-পুনঃনির্মাণে বিভিন্ন যুগে আদম (আ.), ইবরাহিম (আ.), ইসমাইল (আ.) এবং আখেরি নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী ইবরাহিমের (আ.) আমল থেকেই মূলত পবিত্র কাবা আয়তক্ষেত্র আকৃতির ছিল।

ইসলামের আগমনের আগে কুরাইশরা যখন পবিত্র কাবাকে পুনঃনির্মাণ করে তখন তহবিলের অভাবে পবিত্র কাবা শরিফের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। যে স্থানটি তখন নির্মাণ করতে পারেনি সেই স্থানটিকে বলা হয় ‘হাতিমে কাবা’। এটি কাবারই অংশ। এ কারণে হাতিমে কাবাকে তাওয়াফে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। যা একটি ছোট্ট গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত।

হাজরে আসওয়াদ

পবিত্র কাবার এক কোণে সংযুক্ত ‘হাজরে আসওয়াদ’ কালো পাথরটি আগে আকারে বড় ছিল। বর্তমানে এ পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত। যা একটি সিলভার রংয়ের ফ্রেমে একত্র করে কাবা শরিফের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে লাগানো। পাথরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যাসহ অনেকবার চুরি ও জালিয়াতির চেষ্টার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজরে আসওয়াদের প্রথম সিলভার ফ্রেমটি তৈরি করেছিলেন আবদুল্লাহ বিন জুবাইর।

কাবার চাবি

প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত কাবা শরিফের চাবি একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে। সম্মানিত এ পরিবারটি হলো বনু তালহা গোত্র। এ গোত্র ১৫ শতাব্দী ধরে এ দায়িত্ব পালন করছে। এটি ওই পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সদস্যরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা

বছরে দু’বার এর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। প্রথমবার করা হয় শাবান মাসে আর দ্বিতীয় বার করা হয় জিলকদ মাসে। এ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বনু তালহা তথা আলশিবি পরিবারের লোকেরাই করে থাকেন।

পবিত্র জমজমের পানি, তায়েফ গোলাপ জল এবং বহু মূল্যবান ‘ঊড’ তৈল দিয়ে একটি পরিস্কার মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই পবিত্র কাবা শরিফ পরিস্কার করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কার গভর্নর এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানান।

কাবাঘর ঘিরে হজ

ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হয়। পরের বছর ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হজ আদায় করেন। তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর ৮-১৩ জিলহজ মক্কা মুকাররমা এবং এর আশপাশের এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই পবিত্র হজ পালিত হয়ে আসছে।

কাবাঘর পৃথিবীর ঠিক কেন্দ্রতেই অবস্থিত বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারের ফলে এই বিষয়টি নিয়ে নানা অভিমত রয়েছে। পবিত্র কোরআন কিংবা বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, কোনো কিছুতেই এখনো সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ