ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুরআন কেন উট দেখতে বলে

প্রকাশনার সময়: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩১

আল-কুরআনুল কারিমের ৮৮ নম্বর সূরাটি হলো আল-গাশিয়াহ (বিহ্বলকর ঘটনা)। এই সুরার ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তবে কী তারা দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?’ সুবহানাল্লাহ। মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে তাঁর কৃতজ্ঞতায় ফিরিয়ে আনতে কেন উটের দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে এই জীবের কিছু ব্যতিক্রমধর্মী আলামত পেশ করা হলো যার মধ্যে তাদের মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক ও অভিযোজনের অদ্ভুত এক সম্মিলন নজর কাড়ে।

১. পা: পায়ের খুর বড় ও সংকোচনশীল বিশেষ মাংসপিণ্ড বা প্যাডে আবৃত যা দ্রুত মরুভূমির বালু কেটে সামনে চলতে সাহায্য করে। খুরটি পায়ের পাতার পেশির সামনের দিকে হাতের আঙ্গুলের ন্যায় বিভক্ত যা আর কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অন্যান্য খুরওয়ালা প্রাণী খুরে ঢাকা পায়ের পাতার ওপর ভর করে চলে।

২. কুঁজ: তন্তুময় টিস্যু ও চর্বি দিয়ে তৈরি। চর্বি বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে শক্তি জোগায়। কুঁজের ব্যাপক পরিমাণ চর্বি মরুভূমির উষ্ণ আবহাওয়ায় তাপ নিরোধে অত্যধিক সহায়ক। কারণ কুঁজে অনেক বেশি চর্বি থাকার ফলে সারা শরীরে আর বেশি চর্বি থাকার প্রয়োজন হয় না। ফলে সারা শরীর তুলনামূলকভাবে অনেক ঠাণ্ডা থাকে। যখন তারা অনাহারে থাকে তখন এই অতিরিক্ত চর্বি থেকেই শরীরে শক্তি নেয়। এখানে কোনো পানি জমা রাখে না।

৩. নাসারন্ধ্র: নাকটি দুটি কাটা অংশে বিভক্ত যা দিয়ে নাসারন্ধ্র প্রয়োজনে প্রায় বন্ধ করে ফেলতে পারে। ফলে তারা মরুভূমির ধূলিঝড় থেকে বেঁচে যায়। বিশেষ ধরনের নাকের ছিদ্র শ্বাস গ্রহণের সময় বাতাস ভিজিয়ে ভিতরে নেয় এবং নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় জলীয়বাষ্প আটকিয়ে রাখতে পারে।

৪) চোখের পাতা: হাড়সদৃশ চোখের পাতা সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাদের আছে চোখের তৃতীয় একটি স্বচ্ছ পাতা। যা ব্যবহার করে তারা ধূলিঝড়ের সময় সামনে দেখতে পারে।

৫) কান : ছোট গোলাকার কানের উপরে থাকা অসংখ্য লোম ধূলিঝড় থেকে রক্ষা করে।

৬) ঠোঁট: পরস্পর কামড়ে থাকা ঠোঁটের উপরের অংশটি দুই ভাগে বিভক্ত।

৭) দাঁত: ছেদন ও কুকুরের মতো দাঁত সারা জীবন গজাতে থাকে।

৮) প্রচণ্ড শুষ্ক আবহাওয়ায় সহায়ক শারীরিক বৈশিষ্ট্য

ক. অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত কণিকা গোলাকার, সেখানে উটের লোহিত কণিকা ডিম্বাকার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি পড়লে এই কণিকা দ্রুত প্রবাহিত হয়ে শরীর কর্মক্ষম ও চলৎশক্তি সম্পন্ন রাখে।

খ. যে কোনো প্রাণীর চেয়ে উটের মূত্র অনেক ভারি। তাই প্রসাবের সঙ্গে দেহ থেকে পানির ক্ষয় হয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

গ) বিষ্ঠা শুষ্ক হওয়াতে বিষ্ঠা ত্যাগেও পানি বের হয়ে যায় কম।

ঘ) কিডনি ও অন্ত্র পানি ধরে রাখতে বিশেষভাবে পারঙ্গম।

ঙ) প্রায় সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীর থেকে ১৫% পানি বের হয়ে গেলে তারা মৃত্যুবরণ করে, অথচন উটের শরীরের মোট ওজনের ৩০% ওজনের সমপরিমাণ পানি ক্ষয়ে/ঝরে গেলেও তাদের শরীর ভেঙে পড়ে না।

চ) বন্য ব্যাকট্রিয়ান উট (গৃহপালিত নয়) মিঠা পানির অভাবে লবণাক্ত কাদাপানি পান করতে পারে।

৯) অতিরিক্ত গরমে অভিযোজন ক্ষমতা: দিনে যেমন মরুভূমির তাপমাত্রা থাকে অতি উচ্চ ঠিক তেমনি রাতে এখানে নেমে আসে ভয়াবহ শীত। এরা হিমাঙ্কের নিচের ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে হিমাঙ্কের উপরের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। এদের ঘাম ঝরে কম, গরুর চেয়ে ৭৫% কম ঘামের গ্রন্থি এদের শরীরে বিদ্যমান। এদের শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে শুধু তাপমাত্রা যখন ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে ওঠে। লম্বা পা শরীরকে বালুর তাপ থেকে দূরে রাখে।

১০) উটের দুধ: এর দুধ পান করে হজম হয়ে গেলে তা মানবদেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ACE (Antigiotensin-Converting Enzyme)-কে দমিয়ে রাখে ফলে শরীর ক্যান্সারসহ নানা কঠিন রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।

তথ্যসূত্র : San Diego Zoo ‰lobal Library

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ