ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সংসার ভাঙার আগে একটু ভাবুন

প্রকাশনার সময়: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৯
প্রতীকী ছবি

ইদানিংকার দীনি বিয়েগুলোতে খুব অবাক হয়ে দেখছি, বিবাহিত জীবনের ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই বেশিরভাগ কাপল বিবাহিত জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে আগের জীবনে ফিরে যেতে চাচ্ছে। কী পরামর্শ দেব এদের?

কয়দিন পরপরই এক কথা- এরচে আগের জীবনই ভালো ছিল, এক পরীক্ষা থেকে আরেক বড় পরীক্ষায় এসে পড়লাম। আবার এরাই বিয়ের আগে চিন্তায় খাবি খেয়েছে, বিয়ে কেন হচ্ছে না?

ভাবছি, এখন থেকে বোনদের পরামর্শ দেব- বাপের বাড়ি চলে যেতে। আর ভাইয়েরাও বউরে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে একা থাকেন। কিছুদিন দুজনেই প্রি-ডিভোর্সড লাইফ কাটিয়ে আসেন, বিয়ের পর বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়ার ওই জীবনটা আরও কত মধুর (!) হয়, একা থাকা কত সুখের, এটাও কিছুদিন বুঝে আসা দরকার!

কার দোষ, তা নিয়ে এই লেখায় বলছি না। আমাদের দীনি ভাইদের আজকাল দ্বীনদারিতা বা দীনি গাইরত যে কোনো তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বেশিরভাগের দীন যে লেবাসসর্বস্ব, তা সংসার করতে গিয়েই দীনি মেয়েরা টের পাচ্ছে। অন্যদিকে দীনি বোনদের সবর ও মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও যে কত কম, কেবল সার্টিফিকেট আর দীনি জ্ঞান যে তাদের এই গুণটা শেখাতে পারেনি, বাস্তবতায় পা দিয়ে তাও তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যা হোক, সেসব বলা উদ্দেশ্য না।

আমার কথা হচ্ছে, সমস্যার সমাধানে পরামর্শ চাওয়া এক কথা, কিন্তু ডিভোর্স বা তালাক বিষয়টা সমাজের বড় একটা অংশের কাছে এত ইজি হয়ে গেসে কেন, আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। বিয়ে করার পর প্রথম প্রথম বিশাল আবেগ, এর কিছুদিন পর বিয়েটা করে ভুলই করেছি কিনা- এই বিষয়গুলো কোনো না কোনো মুহূর্তে মাথায় আসে নি, এমন কোন কাপল আছে? কিন্তু ডিভোর্স বা তালাক দিয়ে দেব- এই চিন্তাটা এত সহজে মাথায় কেন আসবে? সারাজীবন একসঙ্গে চলার একটা কমিটমেন্ট, একটা কালেমার বন্ধন কি এতই ঠুনকো? এত ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে যে বিয়েটা হলো, সেই বিয়েটা তালাক দিয়ে দেয়ার চিন্তা এতই সহজ? তাহলে আপনারা বিয়ের আগেই বিবাহিত জীবনের উত্থান-পতন নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনা করেন নি কেন? তালাকের পরের জীবনটা কি খুব সুখের হয়? না মেয়ের জন্য, না ছেলের জন্য? একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন না ডিভোর্সড দুই-একটা ভাইবোনের কাছে- কত সুখের সাগরে কাটছে তাদের জীবন!

এই লেভেলের ম্যাচুরিটি নিয়ে তাহলে ভাইবোনেরা বিয়ে করছে আজকাল? প্রজন্মটা যে আসলেই বিয়ে নামক চরম মিথ্যা একটা ফ্যান্টাসিতে ভুগছে, বিয়ে নিয়ে প্র্যাক্টিক্যাল পড়াশোনা বা চিন্তাভাবনা কিছুই করছে না, এতে কোনো সন্দেহ নাই। বিয়ের পর দুয়ে দুয়ে চার না মিললেই ভাবতেছে তালাক/ডিভোর্স দিয়ে নিজের সুখ খুঁজে নেই! ভাইবোন, তাহলে বলি, বিয়ে নিয়ে লুতুপুতু মার্কা কথাবার্তা আজই বন্ধ করুন।

‘দুনিয়ার জীবনটা একটা বিশাল পরীক্ষাগার- তা বিয়ের আগেও পরীক্ষা, বিয়ের পরেও পরীক্ষা, সন্তান হলেও পরীক্ষা, না হলেও পরীক্ষা, সর্বাবস্থায় পরীক্ষা’— এই চিন্তাটা মাথায় সেট করে নেন। নচেৎ বিয়ের পর স্পাউজকে সঙ্গে নিয়ে তাহাজ্জুদে দাঁড়ানো আর খুনসুটির অলীক স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে আপনার মাত্র দুই-চারমাসের অপেক্ষা।

আল্লাহর কসম, আমি কারোর জীবনের পরীক্ষাকে ছোট করে দেখছি না, সেই দুঃসাহস আমার নেই। সবার জীবনের পরীক্ষা একরকম হয় না, যার ঘা তারই ব্যথা; আপনার কষ্টকে ছোট করে দেখার কোনোরকম ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মা-বাবাদের জেনারেশন আমাদের থেকে দুই তিনগুণ সবরের পরীক্ষা দিয়েও সংসারের হাল ছাড়েননি। আমাদের নানি-দাদিদের জেনারেশনের সবরের পরীক্ষা ছিল তারও চেয়ে কঠিন। সবাই যদি এত সহজে রণে ভঙ্গ দিতো, তাহলে সমাজ-সংসার টিকে থাকতো কি করে?

প্রত্যেকে যার যার ইগো ধরে না রেখে খোলাখুলি কথা বলুন, নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করার চেষ্টা করুন। তা না পারলে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। তাতেও কাজ না হলে প্রোফেশনাল কাউন্সেলিং নিন। কিন্তু শুরুতেই ডিভোর্স কেন? এই সংসার ছেড়ে আরেকটা নতুন সংসার শুরু করলে আপনি নিজেকে আবার যেভাবে প্রস্তুত করবেন, সেই চেষ্টাটা এখানেই করুন, প্লিজ।

অন্যথায় হতে পারে, এই একই অনুতাপ আপনাকে বার বার করতে হবে, সেই সঙ্গে আজীবন বদনামের বোঝা টেনে নিয়ে বেড়াতে হবে, যেটা এখন হচ্ছে না। সমাধানের সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেই কেবল ডিভোর্সের কথা ভাবুন, তার আগে না।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ