শান্তির ধর্ম ইসলামেও ভ্রমণের নির্দেশনা রয়েছে। ভ্রমণ হতে পারে ইবাদত, বিনোদন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে। ভ্রমণকে বলা হয় জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। হাজার কর্মব্যস্ততার মাঝে শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে দেশভ্রমণ প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন।
আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি বিস্ময়কর। তিনি কত রূপে, কত আঙ্গিকে এই সুন্দর পৃথিবীকে সৃষ্টি ও সুসজ্জিত করেছেন এর বর্ণনা দেয়া দুরূহ। তার অপরূপ সৃষ্টিকে সচক্ষে দেখার জন্য তিনি মানুষকে ভ্রমণের আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ভ্রমণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক তথা কর্মজীবনের দায়-দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই মানসিক শান্তির পাশাপাশি আল্লাহর সৃষ্টি অবলোকন করার জন্য মানুষ চায় কোথাও না কোথাও ঘুরে বেড়াতে। দেখতে চায় আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন। আল্লাহর নিদর্শন দেখায় কুরআনের কথাগুলো তুলে ধরা হলো : আল্লাহ বলেন, ‘(হে রসুল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কীভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম’ (সুরা আনকাবুত: ২০)।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন, অর্থাৎ ‘তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কী হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৭-১৩৮)।
ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলে থাকেন, পর্যটন হলো জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন তথা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য ভ্রমণ করা খুবই উপকারী। এজন্যই বিখ্যাত কবি ও দার্শনিক শেখ শাদি (রহ.) বলেছেন, দুনিয়াতে দুই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী- ১. ভাবুক বা চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং ২. দেশ সফরকারী ব্যক্তি।
বস্তুত পক্ষে পর্যটনের ধারা আদম (আ.)-এর সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা যা নবী ও রসুলগণের বাস্তব জীবনে ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। রসুল (সা.)-এর ইসরা বা মিরাজও এই পর্যটনের অন্তর্ভুক্ত। তাই তো পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, নবী-রসুলের নাম পাওয়া যায়, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে ভ্রমণ-ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। যার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে কারিমায়।
ভ্রমণের উপকারিতা
ক. মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও আত্মার প্রশান্তি লাভ। খ. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা লাভ। গ. প্রাকৃতিক তথা জীববৈচিত্র্যের স্বভাব-চরিত্রের ধারণা। ঘ. সৃষ্টির সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জন। ঙ. ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালীকরণ। চ. সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে নানামুখী জ্ঞান অর্জন। ছ. সর্বোপরি আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ ও নৈকট্য অর্জন।
ভ্রমণে করণীয়
১). আল্লাহর সাহায্য কামনা করে ভ্রমণে বের হওয়া। ২) একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে ভ্রমণ করলে একজনকে দলনেতা বানানো। ৩). ভ্রমণে ইবাদতের নিয়ম কানুন জেনে নেয়া। ৪) রাস্তার হক তথা পর্দা মেনে চলা। ৫) অবৈধ ও গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা। ৬). সর্বোপরি দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।্ল
ভ্রমণে বর্জনীয়
১) রুচিবহির্ভূত পোশাক পরিহার করা। ২) বৈধ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণে বের না হওয়া। ৩) ভ্রমণে অপচয় না করা। ৪) আল্লাহর নিদর্শন বহন করে তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনকারী জিনিস নষ্ট না করা। ৫) সব ধরনের অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া। ৬) নিষিদ্ধ ও অবৈধ কথাবার্তা, আচার-আচরণ পরিহার করা।
আল্লাহতায়ালার প্রত্যক্ষ নির্দেশের কারণেই ‘ভ্রমণ’ একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভ্রমণকালীন ইসলামের বিশেষ কিছু বিধানের দিকে তাকালে। আল্লাহতায়ালা ভ্রমণের সময় নামাজ এবং রোজার ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজে দুই রাকাত মাফ করেছেন এবং সুন্নত নামাজ ইচ্ছাধীন করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা ভ্রমণে থাক, তখন নামাজ সংক্ষেপ করলে কোনো দোষ নেই।’ (সুরা নিসা: ১০১)।
আমরা ভ্রমণ করব আর ভ্রমণের অঙ্গীকার হোক— আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তা অবলোকন করে ঈমান ও আমলকে মজবুত করা। দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। ভ্রমণের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহর আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ