ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজান এলো যেভাবে

প্রকাশনার সময়: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫৪

আজান শুধুমাত্র একজন সাহাবির স্বপ্নের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছে বিষয়টি এমন নয়; বরং কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রবর্তিত হওয়ার প্রমাণও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তোমরা নামাজের দিকে আহ্বান কর তখন তারা একে হাসি-ঠাট্টায় পরিণত করে।’ (সুরা মায়িদা: ৫৮)

আরেক আয়াতে আছে, ‘জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেয়া হয়।’ (সুরা জুময়া: ৯) রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন নামাজের সময় হবে তখন তোমাদের একজন আজান দেবে আর তোমাদের মধ্যে বড় ব্যক্তি নামাজ পাড়াবে।’ (বুখারি: ৬২৮)

আজানের সূচনা হয়েছে মদিনায়। তবে হিজরি সন হিসেবে কোন বছর হয়েছে তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। গ্রহণযোগ্য মত হলো প্রথম বছরেই আজানের সূচনা হয়।

আজানের প্রয়োজনীয়তা : মদিনায় হিজরত করার পর মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে রাসুল (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে ‘নামাজে ডাকার ব্যাপারে’ পরামর্শ করেন। কেউ বললেন, একটা পতাকা গেড়ে দেয়া হবে। মুসলমানরা তা দেখে একে অপরকে অবহিত করে মসজিদে চলে আসবে। অনেকে শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দিলেন।

রাসুল (সা.) এটা অপছন্দ করে বললেন, এটা তো ইহুদিদের তরিকা। কেউ আবার ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দিলেন। বললেন, ‘এটা তো খ্রিষ্টানদের রীতি। অনেকে এ প্রস্তাব দেন যে আগুন জ্বালালে কেমন হয়। যা দেখে দূর থেকে মুসল্লিরা নামাজের জন্য ছুটে আসবে। এটাও নাকচ করে দেন, কারণ এটাতো অগ্নিপূজকদের উপাসনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উমর (রা.) বলেন, ‘নামাজে ঘোষণা দেয়ার জন্য কাউকে পাঠানো যেতে পারে।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘বেলাল, যাও, নামাজের প্রতি আহ্বান করো।’

স্বপ্নে পাওয়া আজানের শব্দাবলি: নামাজের আহ্বান সংক্রান্ত পরামর্শ সভা শেষ হলে সাহাবিরা বাড়ি চলে যান। আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বিন আবদে রাব্বি নামাজের প্রতি আহ্বানের পদ্ধতির ব্যাপারে খুব চিন্তিত ছিলেন। রাতে তিনি ঘুমিয়ে গেলে স্বপ্নে তাকে আজানের পদ্ধতি দেখানো ও শেখানো হয়। তার মুখে শুনে আসা যাক সেই স্বপ্নের কথা, ‘আমি সপ্নে দেখি, সবুজ পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি একটা ঘণ্টা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। ‘আমি তাকে ডেকে বললাম আল্লাহর বান্দা, তুমি কি আমার কাছে ঘণ্টাটি বিক্রি করবে?

সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এটি দিয়ে কী করবে?’ বললাম, ‘এটি দিয়ে নামাজের ঘোষণা করব।’ বলল, ‘আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি শিখিয়ে দেব।’ বললাম কেন নয়? তাড়াতাড়ি বলো।’ বলল, তুমি এই বাক্যগুলো বলবে। তখন আজানের সতেরটি বাক্য শিখিয়ে দেন। সঙ্গে ইকামতও। আমি ভোরে নবীজি (সা.)-এর কাছে গিয়ে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় নিশ্চয় ‘সত্য স্বপ্ন’। সুতরাং তুমি বেলালকে স্বপ্নে যা শিখেছ তা ওকে শিখিয়ে দাও। সে সেভাবে আজান দেবে। কেননা সে তোমার চেয়ে উঁচু আওয়াজের অধিকারী।’

সামাজিক জীবনে আজানের গুরুত্ব : মুসলমানদের এ আজান সামাজিক জীবনে সব ধর্মের লোকদের অনেক উপকারে আসে। সময় নির্ধারণের একটা মাধ্যম হিসেবে আজানের প্রতি সব শ্রেণির লোকেরা লক্ষ রাখে। কর্মব্যস্ত মানুষ অধিকাংশ সময় বলে থাকে, জোহরের আজান দিয়ে দিয়েছে অথবা বলে আসরের আজানের পর ওখানে যাব, অমুক কাজটি করব। মিনার হতে মুয়াজজিনের আজানের সুমধুর ধ্বনি যখন ভেসে আসে মুমিন হূদয়ে ভিন্ন রকম এক অনুভূতি জেগে উঠে। কবি কায়কোবাদের আজান কবিতার চমৎকার দুটি পংক্তি রয়েছে,

কি যে সুধা আছে সেই মধুর আজানে।

নদী ও পাখির গানে তারি প্রতিধ্বনি

মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর।

আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী!

লেখক: খতিব, মদিনা জামে মসজিদ, রায়পুরা, নরসিংদী

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ