ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

কী আছে পবিত্র কাবার ভেতরে

প্রকাশনার সময়: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৪:৪০

পবিত্র কাবাঘরের ভেতরে কী আছে? প্রায়শ আমাদের মনে এ প্রশ্ন জাগে। এই কালো ঘরটির অভ্যন্তরে না জানি কত কিছু লুকিয়ে আছে— এমন কৌতূহল প্রত্যেক মুসলিমের হূদয়েই উদ্রেক হয়। আসুন জেনে নেই কী লুকিয়ে আছে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে। আল-আরাবিয়া ডট নেট অবলম্বনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মুশাহিদ দেওয়ান

পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ১৮০ বর্গমিটারের পরিধিতে তিনটি কাঠের খুঁটি আছে, যা এর ছাদকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। খুঁটির কাঠগুলো এতই শক্ত প্রকৃতির যে, এর মতো বিকল্প কাঠ পাওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.) স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানের এই কাঠনির্মিত খুঁটির বয়স হয়েছে ১ হাজার ৩৫২ বছর। হালকা কালো রঙের এই খুঁটিগুলোর আয়তন ১৫০ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৪৪ সেন্টিমিটার। প্রত্যেকটি খুঁটি একটি কাঠনির্মিত চৌকা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যাতে কাঠ খোদাই করে সুন্দর কারুকার্য করা হয়েছে। তিনটি খুঁটির মাঝে লম্বা করে একটি দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেটিতে পবিত্র কাবার জন্য হাদিয়াস্বরূপ প্রেরিত মূল্যবান তাম্র-রুপা ও কাঁচের তৈরি কিছু প্রদীপ (যা প্রাচীনকালে আমির-বাদশাহগণ প্রেরণ করেছিলেন) ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

মেশ্ক, আম্বর (সুগন্ধিদ্রব্য) ও ঊদের (এক প্রকার সুগন্ধিকাষ্ঠ) সুরভিত ঘ্রাণ পবিত্র কাবার অভ্যন্তরকে মোহনীয় করে রেখেছে। কাবা অভ্যন্তরের ঠিক মধ্যভাগে রাখা সাদা মার্বেল পাথরের একটি বাক্সে গোসলের বিভিন্ন সামগ্রী রাখা হয়েছে। প্রতিবছর একবার কাবাকে সাবান-পানি ও সুগন্ধি দিয়ে ধৌত করা হয়। এ বছর গত সোমবার যা অনুষ্ঠিত হয়।

হারামাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে ডানপাশের রুকনে শামি ছাদে ওঠার সিঁড়ি সংযুক্ত করেছে। এটা সমকোণী চতুর্ভুজ একটি ভিত্তি যা জানালা ব্যতীত অবরুদ্ধ কক্ষের ন্যায়। এর বিশেষ চাবিবিশিষ্ট একটি দরজা আছে। একে স্বর্ণ-রুপা খচিত (কোরআনের আয়াতগুলো) লিপিমালায় কারুকার্য ও নকশাকৃত একটি রেশমের সুন্দর পর্দা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, পবিত্র কাবাঘরের ফ্লোর (মেঝে) শ্বেতমর্মর (মার্বেল) পাথর দিয়ে সুসজ্জিত। এর অধিকাংশ সাদা আর বাকিটুকু রঙিন। আর কাবার ভেতরের দেয়াল দামি রঙিন মর্মর পাথর ও দৃষ্টিনন্দন নকশায় অলংকৃত। দেয়ালের অভ্যন্তরণীয় অংশকে গোলাপি লাল রঙের রেশমি কাপড়ের পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়েছে। এসব পর্দায় সাদা সুতা দিয়ে সাত/আট স্তরে শাহাদাতাইন (দুই কালিমা) ও কিছু আসমাউল হুসনা (আল্লাহর পবিত্র নামসমূহ) কারুকার্য করে বুনন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই পর্দা দিয়ে পবিত্র কাবার ছাদকেও ঢাকা হয়েছে।

কাবার অভ্যন্তরে মোট নয়টি মার্বেল পাথরের ফলক আছে। এর মধ্যে আটটিতে খত্তে সুলুছে (সুলুছ লিপিরীতি) শিলালিপি অঙ্কন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট একটি কুফি লিপিরীতিতে অঙ্কিত। চতুষ্পদী কুফি লিপিরীতিতে লিখিত এই ফলকের হরফগুলো রঙিন মূল্যবান মার্বেল পাথরের টুকরা দিয়ে অঙ্কিত এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সঙ্গে সংযুক্ত। উল্লেখ্য, এসব শিলালিপি হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীর পরে লেখা হয়েছে।

এ ছাড়া কাবাঘরের অভ্যন্তরে পূর্বপার্শ্বস্থ দেয়ালে কাবার দরজা এবং বাবুত তওবার মাঝে খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ কর্তৃক মর্মর পাথরে খোদাইকৃত একটি নথিপত্র আছে, যা তার আমলে কাবার ব্যাপক পুনঃসংস্কারের তারিখ নির্দেশ করে। এ ফলক নিয়ে কাবার অভ্যন্তরে অবস্থিত মোট শিলালিপির সংখ্যা দশটি হয়, যার সবকটিই সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ