আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিবো, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধনসম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন যা তোমরা পছন্দ করো। (তা হলো) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।’ (সুরা সফ্ফ: ১০-১৩)
রাসুল (সা.) থেকে বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর পথে জিহাদ করা।’ কলবে ঈমান প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র অত্যপ্রত্যঙ্গ সৎকর্ম সম্পাদনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। জবান পরিবেশন করে উৎকৃষ্ট বাক্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই দেহে একটি মাংসপিণ্ড আছে। সেটি সংশোধন হলে সমগ্র দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সেটি নষ্ট হয়ে গেলে সমগ্র দেহ নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রাখো, তা হচ্ছে কলব।’ সুতরাং ঈমান শুধু আশা ও ভূষিত হওয়ার নাম নয়। বরং অন্তরে যা স্থির হয়েছে এবং কর্ম তা বাস্তবায়ন করেছেন তার নাম। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় তাঁর কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় রবের প্রতি ভরসা স্থাপন করে। (তারা) সে সমস্ত লোক যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তারাই হলো প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় রবের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিজিক।’ (সুরা আনফাল: ২-৪) সুতরাং যে এমন গুণে গুণান্বিত হবে তার অন্তরে ঈমানের ভালোবাসা প্রবেশ করবে, প্রচণ্ড তাপদাহে পিপাসার্ত ব্যক্তির কাছে ঠান্ডা পানির ভালোবাসার ন্যায়। ঈমান থেকে বের হওয়া তার হূদয়ে আগুনে ঝাঁপ দেয়া থেকেও বেশি অপছন্দনীয় হবে। আগুনে ধৈর্যধারণ থেকেও বেশি তিক্ত মনে হবে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ করা। জিহাদের অর্থ হলো, যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে মানুষকে আল্লাহ ও রাসুলের পথে আহ্বান করার পর তলোয়ার বর্শা দিয়ে আহ্বান করা। ‘যতক্ষণ না ফেতনা নির্মূল হয় এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।’ (সুরা আনফাল: ৩৯) (জিহাদের প্রকার থেকে) অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যে নফসের জিহাদ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুজাহিদ হলো যে আল্লাহর পথে নফসের জিহাদ করে।’ কতক সাহাবি বলেছেন, যাদেরকে যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ‘তুমি নিজের নফস দিয়ে শুরু করো। তার সঙ্গে জিহাদ করো।’
তন্মধ্যে (তথা নফসের জিহাদের) অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর ঘর জিকির ও ইবাদতে আবাদ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে সালাত ও আদায় করেছে জাকাত। আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। সুতরাং আশা করা যায় যে, তারা হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা তাওবা: ১৮) সুতরাং মসজিদকে সালাত, জিকির, তেলাওয়াত, ইতিকাফ, উপকারী ইলম শিক্ষাদান, ইলম শ্রবণ করা ও করানো ইত্যাদি সৎ কাজে আবাদ করে রাখুন। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো শ্রেষ্ঠতর মসজিদ মসজিদে হারামকে আবাদ করা। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। হজ-ওমরাহর মাধ্যমে মসজিদে হারাম আবাদ হয়।
১ জুলাই প্রদত্ত মদিনার খুতবা থেকে ভাষান্তর - মুশাহিদ দেওয়ান
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ