ঈদুল আজহার নামাজের পর দুই হাত তুলে মোনাজাতে দেশকে বন্যা পরিস্থিতিসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা এবং দেশের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করেছেন হাজারো মুসল্লি। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের হেফাজত, আক্রান্ত মানুষের সুস্থতা কামনা এবং মারা যাওয়া মানুষদের জন্য দোয়া করা হয়।
ত্যাগের মহিমা আর উচ্ছ্বাসের বারতা নিয়ে এসেছে ঈদ। দেশের প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে আজ ঈদের আনন্দ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত হচ্ছে। ঈদগাহ আর মসজিদে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজে অংশ নিয়েছেন সব শ্রেণি, পেশা আর বয়সের লাখো মুসলমান।
রোববার (১০ জুলাই) সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবারের কুরবানির ঈদের প্রধান জামাত হয়। সেখানে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন। করোনা মহামারিতে গত দু’বছর ছেদ পড়ায় এবার মুসল্লিদের ঢল নেমেছে ঈদগাহে।
নামাজ শেষে মোনাজাতে করোনাভাইরাসের মহামারিসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি চেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। ‘বালা মুসিবত’ থেকে সুরক্ষা চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে। বন্যার্তদের জন্য দোয়া চাওয়া হয়। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা কামনা করে মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
এদিন সকাল সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ঈদের বিশেষ খুতবা পড়া হয়। নামাজ আদায়ের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোর থেকে মুসল্লিরা মসজিদে আসেন।
ঈদের নামাজ আদায় শেষে দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন মুসল্লিরা। মোনাজাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। এছাড়া, স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে।
রোববার প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নিতে সকাল ৭টা থেকে জাতীয় ঈদগাহ প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। র্যাব-পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেককে তল্লাশি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এই কাজ সম্পন্ন করেন।
নিয়ম অনুযায়ী ঠিক সকাল ৮টায় নামাজ শুরু করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। তিনি জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতের ইমাম হিসেবে নামাজ পড়ান। মিরপুর জামেয়া আরাবিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান বিকল্প ইমাম হিসেবে এখানে উপস্থিত ছিলেন।
মোকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন কারি মাওলানা হাবিবুর রহমান মেশকাত। এ সময় ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরে দুই রাকাত ঈদুল আজহার ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ৬৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ৩৬০ ফুট প্রস্থের জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটারজুড়ে প্যান্ডেল করা হয়। এখানে ধারণক্ষমতা ১ লাখ হলেও, করোনা মহামারির কারণে ৩৫ হাজার মুসল্লিকে নামাজ আদায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঈদের প্রধান এই জামাতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। নামাজ ও খুতবা শেষে মোনাজাতের পর সকাল সাড়ে ৮টায় জামাতের কার্যক্রম শেষ হয়। এরপর মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঈদগাহ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে শুরু করেন। তারপর ঈদগাহ প্রাঙ্গণের আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়।
রোববার সকাল ৯টায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। জামাতে ইমামতি করেন শহরের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। ঈদগাহ ময়দানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
জামাতকে ঘিরে নেওয়া হয়েছিল চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। র্যার, পুলিশের পাশাপাশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিল দুই প্লাটুন বিজিবি।
এর আগে সকাল থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঈদগাহের দিকে। প্রতিবছর ঈদের জামাতে এখানে লাখো মানুষের ঢল নামে। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, সে জন্য প্রতিবছর এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন লাখো মুসল্লি।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব ঐতিহ্য বাগেরহাটের ষাটগুম্বজ মসজিদে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় এই মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য এই মসজিদে ঈদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বাগেরহাট আলিয়া (কামিল) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন ষাটগম্বুজ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা হেলাল উদ্দিন। তৃতীয় এবং সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করেন বাগেরহাট শহরের সিঙ্গাইড় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম।
ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট ষাটগুম্বজ মসজিদে ঈদের জামায়াতের মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখক সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। মুসল্লিরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেছেন।
রোববার (১০ জুলাই) সকাল পৌনে ৮টায় চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ৯টায়।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় ঈদুল আজহার জামাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. সাইয়েদ আবু নোমান।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ