এক অস্ট্রেলিয়ান যুবক ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ইমাম মোহাম্মদ হবলোস তার কবরে দাঁড়িয়ে কিছু উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা তাকে আমার থেকে ভালো চিনবেন। আমি বলব না যে, আমি তাকে খুব ভালোভাবে চিনতাম। আমি যখনই তাকে দেখতে এসেছি। তার মুখে সবসময় হাসি থাকত। আজকে আমরা দাঁড়িয়ে তার জন্য দুঃখ অনুভব করছি। তার জন্য দুঃখিত হওয়ার প্রয়োজন নেই; আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, তিনি অনেক সুন্দর মৃত্যু পেয়েছেন।
আমার ভাইয়েরা, আমাদের কবরস্থানে আসা উচিত। আমাদের নিজেদের দেখা ও উপলব্ধি করা উচিত আমাদের নিজেদের উপকার এবং পরিবর্তনের জন্য। আমরা কবর দেখছি আর ভাবছি বেচারা ক্যান্সারে মারা গেছেন। আর এই ক্যান্সার ছিল তার জন্য সৌভাগ্য। ছিল ক্ষমা পাওয়ার। মারা যাবার আগের দিন আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে আমাকে বলল, ক্যান্সার হওয়ার কিছুদিন আগে বাড়িটি বিক্রি করে দেন। কেননা তার মন বাড়ির প্রতি অনাগ্রহী। আর আমরা প্রতিদিনই সম্পদ আর সঞ্চয় নিয়ে পড়ে আছি। আমরা দুনিয়ায় ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। অথচ এই কবর আমাদের শেষ বাসস্থান। এই জীবন থেকে আমরা কি নিয়ে যাব? কী কারণে আমাদের পৃথিবীতে আগমন, পৃথিবীতে আমাদের দায়িত্ব কী— মানুষের জীবনে এ প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে আমাদের কোরআন পাঠ করা উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন— ‘আমালের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি (একদিকে যেমন) মহা শক্তিধর, (আবার অন্যদিকে) অতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক: ২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত: ৫৬)
মানুষের জীবন ও তার চারপাশের সৃষ্টির প্রকৃত সত্যরূপকে জানার জন্য আমাদের কোরআন পাঠ প্রয়োজন। কেননা এটিই একমাত্র গ্রন্থ যেখানে নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই, যা পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য।’ (সুরা বাকারা: ২)
আমাদের জীবনের সর্বশেষ পরিণতি, মৃত্যুর পর আমাদের গন্তব্য সম্পর্কে কোরআন থেকেই আমরা যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারি। সুতরাং এ সম্পর্কে জানার জন্যও আমাদের কোরআন পাঠ প্রয়োজন। বাকের আল মোহাম্মদ ভাইটা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিলেন তার পরও তিনি নিয়মিত সালাত আদায় করতেন। আর আমরা খুঁজি সালাত না পরার অজুহাত। আমাদের দুঃখিত হওয়া উচিত, আমরা আল্লাহ তাআলার সামনে নিজের জন্য কি নিয়ে দাঁড়াব?
ভাইটা শেষ সময়ে ধন-সম্পদ দান করে গেছেন। আর আমরা যেন ধন-সম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এ সবই দুনিয়ার সৌন্দর্য বা সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ দুনিয়াদার কিছু মানুষ রয়েছে যারা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি নিয়ে গর্ব করে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধন-ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা কাহাফ: ৪৬)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে গর্ব করতে নিষেধ করেছেন। কেননা ধন-সম্পদ ও জনবলের আধিক্যের কারণে মানুষ কঠিন ও বড় অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেন তোমার চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়, ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদের শাস্তি দিতে চান আর কাফের অবস্থাতেই যেন তাদের জীবন বাহির হয়।’ (সুরা তাওবা: ৫৫)
এখনই হোক আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এই যুবকের কাহিনি হোক আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা। বাকের আল মুহাম্মদের জীবনে যা হতে পারত জীবনের সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার, সেটাকে তিনি জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের ঘটনায় পরিণত করলেন। পরিবর্তন করে ফেললেন নিজের জীবনকে। প্রস্তুতি নিলেন অন্তিম যাত্রার জন্য। মৃত্যুবরণের আগেই গুছিয়ে নিলেন তার জীবন। বাকের মুহাম্মদের মতো আমরাও যেন নিজেদের বদলে ফেলতে পারি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ