আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— নবী (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আর এক জুমা এবং এক রমজান থেকে আর এক রমজান, এগুলো এর মধ্যকার (সংঘটিত সগিরা) গুনাহ মুছে ফেলে; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।’ (মুসলিম: ৪৪৫)।
রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। আর জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। ফলে রমজানের মর্যাদাময় প্রতিটি দিনের মধ্যে জুমার দিনগুলো সবিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। রমজানের জুমা মানে ওপরের হাদিসে বর্ণিত ক্ষমা লাভ এবং গুনাহের কাফফারার দ্বিগুণ সুযোগ। আর রমজানের শেষ জুমা হলো শেষ সুযোগ। তাই এ দিনটি ঈমানদাররা আরো বেশি ইবাদত এবং আগ্রহ-উদ্দীপনায় কাটানোর চেষ্টা করেন। আমরাও আজ সে চেষ্টাই করব। এর বাইরে শরিয়তে এই জুমাকে বিশেষায়িত করে কোনো নাম দেয়া হয়নি। কোনো ইবাদত বা ফজিলত বর্ণিত হয়নি।
অনেকে রমজানের শেষ জুমাকে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে অভিহিত করে থাকেন। আদতে শরিয়তে এ নামে স্বতন্ত্র কোনো জুমা নেই। বিদা মানে সমাপ্তি। রমজানের সমাপ্তির জুমা বলে হয়তো ‘জুমাতুল বিদা’ নামের প্রচলন শুরু। কিন্তু এই নামে নতুন কিছুর প্রচলন বা শরিয়তে সংযোজন একেবারে কাম্য নয়। সেটা করলে তা এক পর্যায়ে ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বিদাতে পর্যবসিত হবে। রমজানের গুনাহমুক্ত জীবন গড়ান ট্রেনিংয়ের মাসে যা একেবারে অনভিপ্রেত। আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত— রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর সংযোজন করবে, যা এতে নেই তা পরিত্যাজ্য।’ (আবু দাউদ: ৪৫৫১)
আমরা আজকের দিনটিকে বিশেষভাবে সজ্ঞায়িত না করে বার্ষিক ও সাপ্তাহিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে যথাসাধ্য বেশি পরিমাণে ইবাদতে সচেষ্ট থাকব। জুমার দিনের প্রতিটি সুন্নত গুরুত্ব দিয়ে পালন করব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— নবীজি (সা.) বলেন: ‘সূর্যোদয়ের দিবসগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমা দিবস। সে দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়। তাকে ওই দিন জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। তাকে তা থেকে ওই দিন বের করা হয়। আর কিয়ামতও হবে জুমার দিবসেই।’ (মুসলিম: ১৮৫০)
রমজানের একেকটি দিন চলে যাওয়া মানে পরকালীন প্রভূত কল্যাণ ও ক্ষমা লাভের একেকটি সুযোগ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। সেই প্রেক্ষাপটে রমজানের শেষ দিনগুলো শেষ সুযোগ হিসেবে ঈমানদারের জন্য বেশি মূল্যবান। কারণ রমজানের মতো ক্ষমা ও মাগফিরাত লাভের সুযোগ পেয়েও যারা কাজে লাগাতে পারে না তাদের চেয়ে পোড়া কপালবিশিষ্ট আর কেউ নেই। দয়ার নবী (সা.) এমন ব্যক্তিদের ভর্ৎসনা করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি: ৩৫৪৫)
এরেকটি হাদিসে এসেছে— আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা নবী (সা.) মিম্বারে উঠলেন এবং বললেন: আমিন, আমিন, আমিন। বলা হলো— হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মিম্বারে উঠছিলেন এবং বলছিলেন, আমিন, আমিন, আমিন। তিনি বললেন, জিবরাইল আমার কাছে এসেছিল। সে বলল, (১) যে রমজান পেল অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না, সে জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন। আমি বললাম, আমিন। (২) যে তার মা-বাবা উভয়কে পেল অথবা তাদের একজনকে পেল অথচ তাদের মাধ্যমে সে পুণ্যের অধিকারী হতে পারল না এবং সে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন। আমি বললাম : আমিন। (৩) যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করল না এবং মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন, বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৮৮)।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ