আজ ২৩তম তারাবিতে সুরা আহকাফ, সুরা মুহাম্মদ, সুরা ফাতহ, সুরা হুজুরাত, সুরা কাফ এবং সুরা জারিয়াত (১-৩০) পঠিত হবে। আজ পড়া হবে ২৬তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো—
৪৬. সুরা আহকাফ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৫, রুকু ৩)
সুরায় আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ, মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাত এবং আখেরাত প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। সঙ্গে মুশরিকদের মূর্তি-প্রতিমার অক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। কোরআন এবং নবী মুহাম্মদের ব্যাপারে কাফেরদের উত্থাপিত বিভিন্ন আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। এরপর সুরায় মুমিন ও বাবা-মার অনুগত এবং অবিশ্বাসী ও বাবা-মার অবাধ্য সন্তানের বিবরণ দেয়া হয়েছে। অবাধ্যতার প্রসঙ্গ ধরেই আদ জাতি এবং তাদের বিনাশের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নবীজির মুখে কোরআন শুনে মুগ্ধ হয়েছিল— এমন একটি জিন দলের আলোচনাও রয়েছে ওই সুরায়। মহান আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিয়ে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।
৪৭. সুরা মুহাম্মদ (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৮, রুকু ৪)
সুরায় জিহাদ ও কিতাল প্রসঙ্গে বিভিন্ন আলোচনা থাকায় সুরাটির আরেক নাম সুরা কিতাল। মুমিন ও কাফের— এই দুই শ্রেণির আলোচনা রয়েছে সুরাটিতে। সত্যের অনুসারী মুমিন এবং মিথ্যার পূজারী কাফেরদের মধ্যে চলমান চিরসংঘাতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের গর্দানে জোরে আঘাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ শেষে বন্দিদের সঙ্গে অনুসৃত নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। এরপর ঈমানদারদের আল্লাহর সাহায্য এবং জান্নাতে মুত্তাকিদের পুরস্কারের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সুরায় মুমিন-মুনাফিকের মধ্যে একটা পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে যে, জিহাদ সম্পর্কিত আয়াত শুনে মুমিন বান্দাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আর মুনাফিকরা মৃত্যুভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে। জিহাদে সম্পদ ব্যয়ের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে সুরাটির সমাপ্ত হয়েছে।
৪৮. সুরা ফাতহ (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২৯, রুকু ৪) হুদায়বিয়া সন্ধির সময়ে সুরাটি নাজিল হওয়ায় হুদায়বিয়া সন্ধি এবং এর পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয়ে সুরায় আলোচিত হয়েছে। সুরায় নবীজিকে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং মুমিন নর-নারীদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা এবং কাফের ও মুনাফিকদের জন্য শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে। হুদায়বিয়া সন্ধিকালে নবীজির সঙ্গে উপস্থিত সাহাবিদের প্রতি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং তাদের খায়বার বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। এরপর নবীজির আনীত ধর্ম সব ধর্মের ওপর বিজয় লাভ করবে মর্মে আলোচনার পর সাহাবিদের কিছু গুণাগুণের বর্ণনা দিয়ে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।
৪৯. সুরা হুজুরাত (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮, রুকু ২)
‘হুজুরাত’ শব্দটি ‘হুজরা’ শব্দের বহুবচন। অর্থ ঘর, কামরা। সুরায় সেসব গ্রাম্য লোকদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা রাসুলের হুজরা মোবারকের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের গ্রাম্য ভাষায় রাসুলকে ডাকত। এজন্য এ সুরাকে ‘সুরা হুজুরাত’ বলা হয়। একজন মুসলিমের এবং একটি মুসলিম সমাজের মধ্যে কী কী গুণ থাকা দরকার— এ প্রসঙ্গটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে এই সুরায় আলোচিত হয়েছে। তাই আমলের নিয়তে ব্যাখ্যাসহ সুরাটি বারবার পড়া উচিত। নবীজির সঙ্গে আদব-শিষ্টাচারের বিবরণ দিয়ে সুরাটির সূচনা।
এরপর সুরায় ধারাবাহিকভাবে সামাজিক বিভিন্ন শিষ্টাচারের বিবরণ দেয়া হয়েছে— উড়ো কথাবার্তায় কান দেয়া যাবে না, প্রতিটি তথ্য-সংবাদ যাচাই-বাছাইয়ের পর গ্রহণ করতে হবে। ঠাট্টা-বিদ্রূপ, অহংকার, একে অন্যের দোষ ধরা, কারো ছিদ্রান্বেষণ, গিবত- গালমন্দ করা, কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ; মোটকথা সমাজের লোকজনের পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরে— এমন প্রতিটি কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। মুমিনদের দুটি দলে কখনো ঝগড়া-বিবাদ হলে মিলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। এ ভাইদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি হলো তাকওয়া তথা খোদাভীতি। এরপর আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য ঈমানের মানদণ্ডের আলোচনার মাধ্যমে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।
৫০. সুরা কাফ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৫, রুকু ৪)
ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাসের বর্ণনা রয়েছে এই সুরায়। কাফের-মুশরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। সতর্ক না হলে পূর্ববর্তী জাতি নুহ, সামুদ, আদ, লুত, ফেরাউন এবং শুয়াইবের মতো অনিবার্য ধ্বংসের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। (১২-১৪)
সুরাটিতে মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। মানুষের মনে যে ওয়াসওয়াসা এবং বিভিন্ন ধ্যানধারণা জন্মে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণরূপে অবহিত। মানুষের সঙ্গে দু’জন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যারা তার প্রতিটি নড়াচড়ারও খেয়াল রাখে। মৃত্যুর সময় তারা মানুষের আমলনামা বন্ধ করে দেবে আর কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে মানুষকে নিজের আমলের জওয়াব দিতে হবে। (১৬-৩৭)। সুরায় জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ শেষে নবীজিকে মুশরিকদের ভ্রান্তির ব্যাপারে সবরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর ইবাদত ও তাসবির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। (৩৯-৪০)
৫১. সুরা জারিয়াত (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬০, রুকু ৩)
সুরার সূচনায় চারটি কসমের বর্ণনা আছে। এ শপথের পর আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, যে জিনিসের ওয়াদা তোমাদের সঙ্গে করা হচ্ছে, তা সত্য আর ইনসাফ তথা কিয়ামতের দিন অবশ্যই সাব্যস্ত হবে। এরপর আসমানের শপথ করে কাফেরদের স্ববিরোধিতার কথা বলা হয়েছে। সুরায় মুত্তাকিদের উত্তম পরিণতি এবং উন্নত গুণেরও বিবরণ দেয়া হয়েছে। মুত্তাকিদের গুণের বিবরণ দেয়ার পর আল্লাহ তাআলার আজমত ও বড়ত্বের কিছু নিদর্শন পেশ করা হয়েছে। ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে ফেরেশতাদের আগমনের বিবরণের মাধ্যমে পারাটি সমাপ্ত হয়েছে।
লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ