গেল রাত থেকে শুরু হলো ইতিকাফের মৌসুম। রমজানের এই শেষ দশকে মুমিন-মুসলমানরা প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য পেতে মসজিদে ইতিকাফে বসেন। ইতিকাফ বান্দাকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে সাহায্য করে। ইতিকাফে বান্দা পার্থিব সব ঝামেলা দূরে ঠেলে মশগুল হয়ে যান মালিকের প্রেমে। এসময় বান্দা থাকে একাকী। তার মধ্যে দুনিয়ার কোনো ব্যস্ততা থাকে না। থাকে না কাজের ঠুনকো অজুহাত। তার মনের কাবায় ভেসে বেড়ায় প্রভুর ধ্যান-জ্ঞান। সে নীরবে-নিভৃতে ডেকে যায় প্রভুকে। ব্যাকুল থাকে তাসবিহ পাঠে। মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা করে। একান্ত মোনাজাতে পাঠ করে প্রেমের চিঠি। তাহাজ্জুদের প্রার্থনায় লেখে ভালোবাসার কাব্যমালা।
ইতিকাফের সময়জুড়ে বান্দা থাকে আল্লাহর ঘর মসজিদে। আল্লাহর ঘরে আল্লাহকে কাছে এনে দেয় ইতিকাফ। ইতিকাফে তাকে স্মরণ করতে সুবিধা হয়। আর আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন। বান্দার আবেদন কবুল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘কাজেই তোমরা আমার স্মরণ করো, তাহলে আমি তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা- বাকারা: ১৫২) রমজান এলে নবীজি দুনিয়ার সব কাজ গুছিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মশগুলে হয়ে যেতেন। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। দান-সদকা করতেন। গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। জিকির-আজকার করতেন। রাতে সালাত পড়তেন। রমজানের শেষ দশকে তিনি ইতিকাফে বসতেন। এটা ছিল নবীজির আমৃত্যু আমল। তিনি তো সব সময় আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকতেন, তারপরও আরো গভীর সান্নিধ্য পেতে ইতিকাফে বসে যেতেন। আয়েশা (রা.) বলেন— নিশ্চয় নবীজি (সা.) মাহে রমজানের শেষ দশকে আজীবন ইতিকাফ করেছেন।’ (তিরমিজি: ৭৯০)
কাবাঘর মুসলমানদের কিবলা। কাবাঘর লক্ষ্য করে মুসলমান নামাজ পড়ে। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে। ইসলামের প্রধান রুকন হজকেও আল্লাহ কাবাঘরের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। পৃথিবীর মুসলমানরা হজ করতে কাবাঘরে আসে। তারা ইতিকাফের জন্যও কাবাঘরে আসে। তাই আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর সন্তান ইসমাইলকে কাবাঘর পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা- বাকারা: ১২)
প্রতিটি মুমিন জীবনের আকাঙ্ক্ষা থাকে— কাবাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ও রাসুল (সা.)— এর রওজার পাশে দাঁড়িয়ে ‘আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলার। এই আকাঙ্ক্ষা ও বাসনা মুমিনের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। সেখানে ফেরেশতা ও নবীদের স্মৃতিবিজড়িত পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবাঘরের দেখা মেলে। জীবনভর যে ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হয়— সে ঘর স্বচক্ষে দেখা যায়। মা হাজেরার অনুসরণে দৌড়ানো হয় সাফা-মারওয়ায়। চুমো খাওয়া হয় হাজরে আসওয়াদে। মদিনার সে পথে হাঁটা হয়, যে পথে হেঁটে গেছেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ। তার পবিত্র রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম আর রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নায় নামাজের সৌভাগ্য— আহ কি মধুর সেইসব ইবাদত। এসব ইবাদতের বদৌলতে বান্দার জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। বান্দা হয়ে যায় পবিত্র। যেন সে সদ্য জন্ম নিয়েছে। এখন সেইসব ইবাদতের জন্য মক্কা-মদিনায় যেতে দরকার অনেক টাকার। সবার সে তৌফিক নেই। কিন্তু রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বান্দার আমলনামায় সে সওয়াব যোগ করে। দশ দিনের ইতিকাফে বান্দা হজ ও ওমরার সওয়াব পায়। মহানবী (সা.) বলেন— ‘যে রমজান মাসে দশ দিন ইতিকাফ করবে, তার এই ইতিকাফ নেকি ও শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় দুটি হজ ও দুটি ওমরার সমপর্যায়ের হবে।’ (বায়হাকি: ৩৬৮০)
ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দার জীবনের গুনাহ মাফ হয়। দূর হয় জীবনের কলুষতা ও অন্ধকার। তার আমলের ঝুলি পূর্ণ হয় সওয়াবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ইতিকাফকারী ইতিকাফের কারণে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত নেকির সওয়াব অর্জন করেন।’ (আলমুগনি: ৩/৪৫৫)।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ