ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের তারাবি

আজ ২২তম তারাবিতে সুরা হামিম সাজদা (৪৭-৫৪), সুরা শুরা, সুরা জুখরুফ, সুরা দুখান এবং সুরা জাসিয়া পঠিত হবে। আজ পড়া হবে ২৫তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো—
প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩৬

৪১. সুরা হামিম সাজদা (৪৭-৫৪)

কিয়ামতের আলোচনা দিয়ে পারার সূচনা হয়েছে। এরপর সুখে-দুঃখে মানুষের অবস্থার বিবরণ রয়েছে। দুঃখের সময় মানুষ লম্বা-চওড়া দোয়া শুরু করে, আর সুখের সময় আল্লাহকে ভুলে যায়। মানুষের এমন অকৃতজ্ঞ আচরণের প্রসঙ্গ উল্লেখের পর আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘অবশ্যই আমি তাদের দেখিয়ে দেব আমার সেসব নিদর্শন— যা বিশ্বজগতে এবং মানুষের মধ্যে বিদ্যমান, তখন তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ কোরআনই চিরসত্য।’ আল্লাহ তাআলার এ ওয়াদা চিরসত্য। সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন কোরআনের সামনে জ্ঞানীমাত্রই মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হবে। তবে এর জন্য চাই সত্যোন্মুখ হূদয় এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অন্তর। ৪২. সুরা শুরা (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫২ রুকু ৫)

পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সুরার সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবীজি (সা.)-কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ‘তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে আল্লাহ তাআলা ওহি প্রেরণ করেন, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ সুতরাং ওহির উৎপত্তিস্থল একটাই, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার কাছে এক আল্লাহই ওহি পাঠিয়েছেন। এরপর আল্লাহ তাআলার কুদরতের কথা বর্ণনা করার পর ফের ওহির আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে মনোনীত একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম। নবী-রাসুলরা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এই একই দীনের দাওয়াত প্রদান করেছেন।

আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রত্যেক নবী-রাসুলের কাছে প্রেরিত দীন ও শরিয়তে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভিন্নতা থাকলেও মৌলিকভাবে তা একই ধর্ম ছিল। আর তা হলো ইসলাম। নুহ, ইবরাহিম, মুসা ও ঈসা (আ.)-কে একই দীনের প্রচার-প্রসারের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের অনুসারীদের পরস্পর বিবাদ ও বিভেদ সৃষ্টি করতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা হিংসা-বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের পরস্পর বিবাদ ও বিভেদ মেটানোর নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে পাঠান। তাঁকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আদেশ করা হয়, ‘আপনি দীনের প্রতি লোকদের দাওয়াত দিতে থাকুন এবং আপনিও এ দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকুন, লোকদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আপনি তাদের বলে দিন, যে কিতাব আল্লাহ তাআলা নাজিল করেছেন, আমি তার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’

রিসালাত ও ওহির আলোচনার পাশাপাশি এ সুরায় বস্তুজগতে আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট নিদর্শনগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মুমিন বান্দাদের কিছু গুণের কথাও আলোচনা করা হয়েছে। সুরায় বলা হয়েছে, জীবনে বিপদাপদ আসে মূলত মানুষের গুনাহের কারণেই। সুরার শেষ দিকে বলা হয়েহে, কন্যা বা পুত্র সন্তান দেয়া অথবা সন্তান একেবারেই না দেয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। ওহি এবং রিসালাতের আলোচনা দিয়ে যেভাবে সুরার সূচনা হয়েছিল অনুরূপ এ আলোচনার মাধ্যমেই সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৪৩. সুরা জুখরুখ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৯ রুকু ৭)

পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সুরার সূচনা। এরপর নবীর আদর্শবিমুখ জাতির পরিণতির কথা বলা হয়েছে। সুরায় আল্লাহর কিছু নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। এরপর জাহেলি যুগের কিছু ঘৃণ্য প্রথার সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন জাহেলি যুগে কন্যাসন্তান হলে পিতার মুখ কালো হয়ে যেত। কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো। ইসলাম নারীকে তার আসল মর্যাদায় উন্নীত করে। এরপর সুরায় নবী ইবরাহিম ও মুসা (আ.)-এর আলোচনা রয়েছে। সুরায় এ কথাও বলা হয়েছে, পৃথিবীর যাবতীয় ধনসম্পদ থেকে আল্লাহর করুণা অতি উত্তম। সুরার শেষাংশে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ প্রদান করে বলছেন— ‘আপনি জাহেলদের এড়িয়ে চলুন এবং বলুন সালাম, অচিরেই তারা নিজেদের পরিণতি জানতে পারবে।’ (৮৯)

৪৪. সুরা দুখান (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৩, রুকু ৩)

মক্কার মুশরিকরা দুর্ভিক্ষের দিনে যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অবস্থা দেখতে পেয়েছিল, তার বিবরণ রয়েছে এ সুরায়। তাই একে সুরা দুখান বলা হয়। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ এ কোরআন নাজিল করেছেন। (১-৮)। কিন্তু মক্কার কাফের-মুশরিকরা এ কোরআন ও পুনরুত্থান দিবসের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে বসে। তাদের মুসা (আ.)-এর বিরুদ্ধাচরণের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। (১৭-২৯)। কাফেরদের জন্য প্রস্তুতকৃত ভয়াবহ শাস্তি এবং মুমিনদের জন্য সুসজ্জিত নেয়ামতগুলোর বর্ণনা দিয়ে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৪৩-৫৭)

৪৫. সুরা জাসিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৭, রুকু ৪)

‘জাসিয়া’ শব্দের অর্থ হাঁটু গেড়ে বসা। কিয়ামতের দিন মানুষ ভীতির কারণে আল্লাহর দরবারে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে। যেহেতু এই ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা সুরায় রয়েছে, তাই এই সুরাকে সুরা জাসিয়া বলা হয়। সুরায় সৃষ্টিজগতের সেইসব নিদর্শনের আলোচনা রয়েছে, যার প্রতিটি আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা এবং কুদরত ও একত্ববাদের জীবন্ত প্রমাণ। (৩-৬)। রয়েছে ঐশী-বাণী শুনে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের পরিণতির বিবরণ। (৭-৯)। শেষে বনি ইসরাইলকে দেয়া আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। (১৬-১৭)। কিন্তু নেয়ামতের কদর না করায় তারা শাস্তির যোগ্য হয়েছিল। সব যুগের কাফেরদের একই অবস্থা হবে। (২৪-২৫)

লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ