রমজানের ২০ রোজার সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নাতে কেফায়া। রাসুল (সা.) সব সময় শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তার পুণ্যবতী স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি: ২০২৬)
ইতিকাফ করার সর্বোত্তম জায়গা হলো, মসজিদুল হারাম। এরপর মসজিদে নববী। তারপর মসজিদুল আকসা। এরপর জামে মসজিদ। তারপর ওইসব মসজিদ যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘর (বায়তুল্লাহ) পবিত্র করো তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সুরা বাকারা: ১২৫) ইতিকাফ মহল্লাবাসীর মধ্য থেকে যে কোনো একজন আদায় করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে; কিন্তু কেউ আদায় না করলে মহল্লার সবাই সুন্নত ইতিকাফ ছেড়ে দেয়ার গুনাহগার হবে।
ইতিকাফের ফজিলত
ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য অর্জন করা। সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করা। নিজেকে গুনাহ মুক্তির জন্য চেষ্টা করা। সর্বোপরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো জামাতের সঙ্গে আদায় করা। বিশেষ করে শবেকদরের মহান রাতের পাওয়া। কেননা, শবেকদরের রাত সুনির্ধারিত নয়; বরং হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে খুঁজতে হবে। নবীজি বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত তালাশ কর।’ (বুখারি: ২০১৭)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার এই ইতিকাফ নেকি ও শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় দুটি হজ ও দুটি ওমরার সমপর্যায়ের হবে।’ (বায়হাকি: ৩৬৮০)
ইতিকাফ অবস্থায় করণীয়
ইতিকাফ অবস্থায় ভালো এবং নেক কথা বলা। অতিরিক্ত কথাবার্তা না বলা। বেকার বসে না থেকে নফল নামাজ পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত করা। তাসবিহ-তাহলিলে মশগুল থাকা। বেশি বেশি দোয়া করা। শবেকদরের রাত খোঁজ করা।
ইতিকাফ ভেঙে গেলে করণীয়
১. কোনো ব্যক্তির যদি সুন্নাত ইতিকাফ ভেঙে যায়, তাহলে সে শুধু ওইদিনের ইতিকাফ কাজা করবে। পুরো ১০ দিনের কাজা করতে হবে না। তবে যেদিন কাজা করবে সেদিন রোজাও রাখতে হবে।
২. কোনো কারণে ইতিকাফ ভেঙে গেলে মসজিদেই অবস্থান করা উচিত। তখন নফল ইতিকাফের ফজিলত পাওয়া যাবে।
যেসব কারণে ইতিকাফকারী বাইরে যেতে পারবেন
১. ইতিকাফকারী অসুস্থ হলে মসজিদের বাইরে গিয়ে সেবা নিতে পারবেন।
২. মানুষকে বাঁচানোর জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে।
৩. জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দিলে ইতিকাফ ভাঙতে পারবে।
৪. মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির কঠিন অসুস্থতার কারণেও ইতিকাফ ভেঙে দেয়া জায়েজ। তেমনি পরিবারের কারো প্রাণ, সম্পদ বা ইজ্জত আশঙ্কার সম্মুখীন হলে এবং ইতিকাফ অবস্থায় তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে ইতিকাফ ভেঙে দেয়া জায়েজ।
৫. এছাড়া যদি কোনো জানাজায় হাজির হয় এবং জানাজা পড়ানোর কেউ না থাকে তখনো ইতিকাফ ভেঙে দেয়া জায়েজ।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুর, সাভার, ঢাকা
মসজিদের বাইরে যা করতে পারবেন
একান্ত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন। যেমন:
* মলত্যাগ করার জন্য।
* ফরজ গোসল করার জন্য, যদি মসজিদে সম্ভব না হয়; কিন্তু ফরজ গোসল ছাড়া অন্য যে কোনো গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
* অজু করার জন্য, যদি মসজিদে পানি না থাকে।
* খাবার আনার জন্য বাড়িতে যাওয়া।
* মোয়াজ্জিন আজান দেয়ার জন্য।
* জুমা আদায় করার জন্য।
* মসজিদের ক্ষয়ক্ষতি কিংবা জালেম মসজিদ থেকে বের করে দিলে তিনি সেই মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, জানাজা পড়া এবং রোগী দেখার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।
যেসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যায়
* প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে বের হলে।
* ইতিকাফকারী মসজিদের সীমানা মনে করে বের হয়ে জানতে পারল এটা মসজিদের সীমানার বাইরে ছিল, তাহলে সেক্ষেত্রেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
* ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত। তাই কেউ যদি রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে তার ইতিকাফও ভেঙে যাবে।
* স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে।
* স্ত্রীকে চুমু বা স্পর্শ করলে যদি ‘মনি’ বের হয়, তাহলে সেক্ষেত্রেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
* অজুর কারণ ছাড়া শুধু এমনিতেই ব্রাশ, মেসওয়াক করতে বের হলে।
* খাবার খাওয়ার পর হাত পরিষ্কার করার জন্য বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। ইত্যাদি।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ