৩৯. সুরা জুমার (৩২-৭৫)
পারার শুরুতে মুমিন ও কাফেরের শেষ পরিণতি প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বান্দার জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট। এরপর রয়েছে মানুষের মৃত্যু ও কিয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা। অপরাধী, গুনাহগার, এমনকি কাফের-মুশরিকদের জন্যও আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের দরজা সদা খোলা, বান্দা তওবা করা মাত্রই আল্লাহ তা কবুল করেন— এ কথা বলার পর সুরার শেষে আবারো কিয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। কিয়ামতের দিন কাফের ও মুশরিকদের টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে আর মুত্তাকিদের জান্নাতে প্রবেশের জন্য আহ্বান করা হবে। ফেরেশতারা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন, তাদের খেদমতে সালাম পেশ করবেন আর তারা আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে আপন নিবাস জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (৬০-৭৩) ৪০. সুরা মুমিন (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮২, রুকু ৯)
এ সুরার আরেক নাম সুরা গাফির। সুরাটির আদ্যোপান্ত পাঠ করে দেখা যায়, সুরায় হক- বাতিল, হেদায়েত ও গোমরাহির মধ্যে বিরাজমান সংঘাতের বিবরণ স্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে। কোরআনুল কারিমের আলোচনার মাধ্যমে সুরাটির সূচনা। কোরআন নাজিল করেছেন সেই মহান সত্তা, যিনি পাপ মোচনকারী, তওবা কবুলকারী, কঠিন শাস্তিদাতা এবং আপন বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তাআলার আরশবহনকারী ফেরেশতাদের বিশেষ দোয়ার বিবরণ রয়েছে সুরায়। (৭-৯)
মুমিন বান্দার জন্য ফেরেশতাদের দোয়ার বিষয়টি আলোচনার পর জাহান্নামে কাফের-মুশরিকদের কী করুণ অবস্থা হবে, তা তুলে ধরা হয়েছে। (১০-১২)। কাফেরদের প্রতি আল্লাহ তাআলার শাস্তির বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মুসা (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফেরাউন-পরিবারের জনৈক মুমিন ব্যক্তির আলোচনা করা হয়েছে। তিনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের মুসা নবীর অনুসরণের দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরাউন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেই তার কথা উড়িয়ে দেয়। সে তার উজির হামানকে বলে, একটা প্রাসাদ বানাও, সেখানে চড়ে আমি দেখব মুসার ইলাহকে দেখা যায় কিনা! মুমিন লোকটির সঙ্গে ফেরাউনের ঘটনার বিশ্লেষণ করলে সব যুগের জালেম, ধূর্ত ও চালাক শাসকদের একটি মূলনীতি বুঝে আসে। তা হলো, জালেম শাসকরা কখনো হুমকি- ধমকির পথ অবলম্বন করে, আবার কখনো বিরোধীদের রায়, মতামত ও বক্তব্যকে জনগণের সামনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে পেশ করে। এতে মানুষের কাছে বিরোধীদের বক্তব্য ও মতামতের গুরুত্ব হ্রাস পায়। অবশ্য হকপন্থিরা হুমকি-ধমকি বা ঠাট্টা-বিদ্রূপের কোনো পরোয়া করেন না। তারা তাদের কাজ করে যান। ওই মুমিন ব্যক্তিটিও ফেরাউনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং হাসি-তামাশাকে একটুও আমলে নেননি; বরং তিনি দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। শেষে ফলাফল হয়েছিল এই যে, মুমিন ব্যক্তিটি আল্লাহ তাআলার শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছেন আর ফেরাউন ও তার সহযোগীরা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এই আজাব কবরেও তাদের পিছু ছাড়বে না। সকাল-সন্ধ্যা তাদের ওপর পেশ করা হবে। আর আখেরাতে তো তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। (২৭-৪৬)। এরপর মহান আল্লাহকে চেনার জন্য রবের কিছু নেয়ামত এবং মানবসৃষ্টির বিভিন্ন ধাপের বিবরণ দেয়া হয়েছে। (৬১-৬৯)। নবীজিকে সবরের নির্দেশ এবং দুনিয়া-আখেরাতে কাফেরদের পরিণতির বিবরণ দিয়ে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৭৫-৮৫)
৪১. সুরা হামিম সেজদা (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৪, রুকু ৬)
সুরাটির আরেক নাম ফুসসিলাত। পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সুরাটির সূচনা। এরপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের বিপরীতে মানুষের অকৃতজ্ঞতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আদ ও সামুদ জাতির আলোচনা করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গই মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষী দেবে। এরপর কিয়ামতের দিন কাফেরদের কী অবস্থা হবে, তার বিবরণ শেষে মোমিন বান্দাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তারা একবার মনেপ্রাণে আল্লাহকে রব বলে মেনে নিলে আমরণ এ বিশ্বাসের ওপর অটুট-অবিচল থাকে। মৃত্যুর সময় এবং কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা তাদের বলবেন, ভয় পেও না, জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা হলাম তোমাদের বন্ধু। জান্নাতে তোমাদের জন্য, তোমাদের মন যা চায় এমন সবকিছুই আছে।’ (৩০-৩১)
মন্দের প্রতিকারের উত্তম পন্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মন্দ আচরণের বিপরীতে তুমি উত্তম আচরণ উপহার দাও। এরপর আল্লাহকে চেনার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। নবীজিকে সবরের কথা বলা হয়েছে। এরপর কোরআনের প্রতি কাফেরদের আচরণ প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। পারার শেষাংশে আল্লাহ তাআলার ন্যায়ানুগ ফয়সালার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘যে নেক আমল করবে সে নিজের কল্যাণের জন্যই করবে। আর যে মন্দ কাজ করবে তার প্রতিফল সে নিজেই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না।’ (৪৬)
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ