আজ ২০তম তারাবিতে সুরা ইয়াসিন (২২-৮৩), সুরা সাফফাত, সুরা সাদ এবং সুরা জুমার (১-৩১) পঠিত হবে। আজ পড়া হবে ২৩তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো—
৩৬. সুরা ইয়াসিন (২২-৮৩)
পারার শুরুতে হাবিব নাজ্জার নামের এক ব্যক্তির আলোচনা রয়েছে। তিনি ছিলেন নিজ জাতির হিতাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু জাতি তার দরদমাখা নসিহত শুনেনি। (২০-২৭)। এরপর নবীদের উপহাস ও তার পরিণতি প্রসঙ্গে আলোচনার পর আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব, একত্ববাদ ও কুদরতের কিছু দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপর কেয়ামতের ভয়াবহতা এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার আলোচনা রয়েছে। (৪৯-৬৬)। সুরাটির বেশিরভাগ আলোচনা যেহেতু মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে; তাই এর সমাপ্তিও হয়েছে মৃত্যুপরবর্তী জীবনের আলোচনা দিয়ে। (৮১-৮২)
৩৭. সুরা সাফফাত (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮২, রুকু ৫)
সুরাটির সূচনা হয়েছে সেসব ফেরেশতার আলোচনা দ্বারা, যারা আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর সপ্রশংসা তাসবিতে রত থাকেন। এরপর জিনদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা যখন লুকিয়ে লুকিয়ে ঊর্ধ্ব মহলের সংবাদ শোনার চেষ্টা করে, তখন জ্বলন্ত উজ্জ্বল অঙ্গার তাদের পেছনে ধাওয়া করে এবং সবদিক থেকে তাদের ওপর মার পড়ে। সুরায় পুনরুত্থান, হিসাবনিকাশ ও প্রতিদান প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। (১৯-৩৫)। এরপর জাহান্নামিদের একে অপরকে দোষারোপ প্রসঙ্গে আলোচনা শেষে জান্নাতিদের পারস্পরিক কথোপকথন বিষয়ে আলোচিত হয়েছে। (৮৩-৯৮)।
এরপর নুহ, ইবরাহিম, মুসা, হারুন, ইলিয়াস, লুত এবং ইউনুস (আ.) এর বিভিন্ন ঘটনা আলোচিত হয়েছে। নবীদের এসব ঘটনা শেষে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমার প্রেরিত বান্দাদের আমার ফয়সালা নির্ধারিত যে, তারাই সাহায্য লাভ করবে এবং বিজয়ী হবে আর আমার লশকরের জয় হবেই হবে।’ (১১৪-১৭৩) সুরার শেষে হঠকারীদের থেকে বিমুখ থাকার নির্দেশনা প্রদান করে আল্লাহর হামদ ও সানা এবং সপ্রশংস তাসবির বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
৩৮. সুরা সদ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৮, রুকু ৫)
সুরার সূচনায় আল্লাহ তাআলা কোরআনের শপথ করেছেন। এই শপথের মাধ্যমে কোরআনের অলৌকিকতা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সত্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সুরায় আল্লাহর বড়ত্ব ও একত্ববাদের বাহ্যিক প্রমাণের আলোচনার পর মোশরেকদের অহংকার, মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতার কথা বলা হয়েছে। (১২-১৪)।
পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অহংকারী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি বলে রাসুলে আকরাম (সা.)—কে সবরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর দাউদ (আ.), তাঁর পুত্র সোলাইমান, আইয়ুব, ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল, ইয়াসা ও জুলকিফল আলাইহিমুস সালামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এসেছে। তারা ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত এবং শুকরগুজার বান্দা।
এরপর হজরত আদম (আ.) ও অভিশপ্ত ইবলিসের কাহিনি কিছুটা বিস্তারিত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরার শেষে আল্লাহ তাঁর নবীকে হুকুম দিয়েছেন, তুমি তোমার দাওয়াতের উদ্দেশ্য ও হাকিকত বয়ান করে দাও: ‘(হে নবী) তুমি বলে দাও, আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না এবং আমি নিজেকে বাড়িয়েও দেখাই না। এই কোরআন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়। আর অচিরেই তোমরা এর ইতিবৃত্ত জানতে পারবে।’ (৮৬-৮৮)
৩৯. সুরা জুমার (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৫, রুকু ৮)
সুরা জুমারের মূল আলোচ্য বিষয় তাওহিদের আকিদা। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসই হলো ঈমানের বুনিয়াদ ও ভিত্তিমূল। সুরার সূচনা হয়েছে খাতামুল আম্বিয়া (সা.)—এর অন্যতম মোজেজা ‘কোরআনুল কারিমের’ আলোচনা দ্বারা। এরপর নবী (সা.) এর মাধ্যমে সমগ্র উম্মতকে হুকুম দেয়া হয়েছে যে, ইবাদত যেন শুধু আল্লাহর জন্যই হয়, লোকদেখানো বা রিয়ার কোনো দুর্গন্ধ যেন এতে না থাকে।
সামনের আয়াতগুলোয় শৈলী পরিবর্তন করে রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের বাহ্যিক দলিল ও প্রমাণ উপস্থান করা হয়েছে। এখানে বিশেষ লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো: মায়ের উদরে মানুষের সৃষ্টি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মায়ের পেটে আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেন তিনটি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে। (৬)। আল্লাহর একত্ববাদ সাব্যস্তকরণ এবং শিরকের খণ্ডনের পর আল্লাহ তাআলা একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত দুই দলের দুটি উদাহরণ দিয়েছেন।
মোশরেকের উদাহরণ হলো সে এমন দাসের মতো যে কয়েকজন মালিকের মালিকানাধীন। মালিকদের মেজাজ এবং আচার-আচরণও একধরনের নয়, মিল-মহব্বত বা কোনো ধরনের ঐক্য কিংবা সমঝোতা নেই তাদের মাঝে। এক মালিক দাসটিকে ডানে পাঠালে অন্যজন তাকে বাঁয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়। একজন বসার কথা বললে অপরজন দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। দাসটি পেরেশান যে, সে কার কথা শুনবে আর কারটা ছাড়বে। পক্ষান্তরে একত্ববাদে বিশ্বাসীর উপমা হলো এমন দাসের মতো, যার মালিক একজন। মালিকের চরিত্রও ভালো এবং সে নিজ অধীনস্থ দাসের প্রয়োজনও বিবেচনায় রাখে। (২৯)
সন্দেহ নেই, এই গোলাম একনিষ্ঠতার সঙ্গে মনিবের খেদমত করে যাবে এবং মনিবের পক্ষ থেকে সে কল্যাণ ও ইহসানেরই আশা রাখবে। এখন মালিক যদি হন রাব্বুল আলামিন আর বান্দাও যদি শুধুই তাঁর হয়ে যায় তবে তার মনের আনন্দ ও প্রশান্তির ওপর হাজারো রাজত্ব কোরবান করা উচিত।
লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ