আজ ১৯তম তারাবিতে সুরা আহজাব (৩১-৭৩), সুরা সাবা, সুরা ফাতির এবং সুরা ইয়াসিন (১-২১) পড়া হবে। পারা হিসেবে পড়া হবে ২২তম পারা। আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো—
৩৩. সুরা আহজাব (৩১-৭৩)
একুশতম পারার শেষাংশে নবীপত্নীদের সম্পর্কে কিছু আলোচনা ছিল। সে ধারাবাহিকতায় ২২তম পারার শুরুতেও নবীপরিবারকে হেদায়েতমূলক কিছু নসিহত করা হয়েছে। নবীজীবনের শেষদিকে মুসলমানদের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে নবীপত্নীরা ভরণপোষণ একটু বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন জানান। তখন তাদের বলা হয়, যদি সম্পদের প্রাচুর্য চাও, তাহলে নবীজি থেকে পৃথক হয়ে যাও, আর আখেরাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত চাইলে কষ্ট সহ্য করে নবীজির সঙ্গেই থাকো। নবীপত্নীরা নবীজির সহচার্য ও আখেরাত প্রাধান্য দেন।
এরপর নবীপত্নীদের লক্ষ্য করে কিছু নসিহত করা হয়েছে: ‘(প্রয়োজনে) পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে হলে কোমলতা অবলম্বন করবে না, ঘরেই থাকবে। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে না। জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের বেশভূষা জাহির করে বের হবে না। সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং কোরআন তেলাওয়াত ও হাদিসের চর্চা করতে থাকবে।’ (২৮-৩৪)
এরপর দশটি গুণের কথা বলা হয়েছে। গুণগুলো প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে থাকা আবশ্যক। ইসলাম, ঈমান, সদা আল্লাহর আনুগত্য, সততা, ধৈর্য, সালাতে বিনয়-খুশু, সদকা, সিয়াম, লজ্জাস্থানের হেফাজত, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির। (৩৫)। এরপর পালকপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে (৩৭), নবীজির খতমে নবুওয়ত (৪০), নবীজির বহুবিবাহ (৪৯-৫২) প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে।
সুরায় বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচারের কথা বলা হয়েছে— ‘কারো ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করো না। কারো বাড়িতে দাওয়াতে গেলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে স্থান ত্যাগ কর। অনর্থক কথাবার্তায় মশগুল হয়ে মেজবানের সময় নষ্ট করা উচিত নয়। যাদের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ, এমন নারীর কাছে কোনো জিনিস চাওয়ার হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।’ (৫৩-৫৪)। এরপর নবীজির প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (৫৬)। সুরার শেষে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন এবং বিভিন্ন আমানত পালনের দায়িত্ব বিশেষভাবে মানুষকে দান করেছেন। পাহাড়-পর্বত, আসমান-জমিন এই আমানতের দায়িত্ব গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল।
৩৪. সুরা সাবা (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৪, রুকু ৬)
আল্লাহর প্রশংসার কথা উল্লেখ করে সুরার সূচনা। এরপর সুরায় আখেরাত ও পুনরুত্থান দিবস প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। এরপর দাউদ ও সুলাইমান (আ.) এবং সাবাবাসীকে প্রদত্ত আল্লাহর নেয়ামত প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। নবীরা ছিলেন কৃতজ্ঞ আর সাবাবাসী ছিল অকৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞদের পরিণাম সম্পর্কে বলা হয়েছে। (১০-২১)। সুরায় মুশরিকদের কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রদ করা হয়েছে। (২২-২৭)।
পার্থিব জীবনে সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যারা আল্লাকে ভুলে যায় তাদের নিন্দা করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা, সম্পদের প্রাচুর্য-দান বা সংকোচন তো তারই হাতে। (৩৬)। কেয়ামতের দিন কাফেরদের অসহায়ত্বের আলোচনা করে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৫৪)
৩৫. সুরা ফাতির (মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৪৫, রুকু ৫)
সুরায় আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ এবং সঠিক দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। মুশরিকদের ভ্রান্ত কিছু যুক্তি খণ্ডন করে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। (৯)।
ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য বিধান করার লক্ষ্যে এক অনুপম দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে— ‘অন্ধ-চক্ষুষ্মান, আঁধার-আলো, রোদ-ছায়া যেমন কখনো সমান হতে পারে না, তেমনই ঈমান ও কুফরও সমান হতে পারে না।’ (১৯-২২)। আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রং ও স্বাদের ফুল-ফলাদি, সাদা-কালো এবং লাল-নীল রঙের সারি সারি পাহাড়, বিভিন্ন রং, ভাষা এবং স্বভাব ও মেজাজের মানুষ, হাজারো ধরনের পশুপাখি, মাছ ও চতুষ্পদ জন্তু— সবই মহান আল্লাহ তাআলার কুদরতের সুস্পষ্ট দলিল।
এরপর কোরআন তেলাওয়াতকারীদের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। (২৯-৩০)। সঙ্গে উম্মাতে মুহাম্মদির প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ এ উম্মতকে কোরআনের মতো মহানেয়ামত দান করেছেন। কিন্তু কোরআন নাজিলের পর কোরআনের বিধান রক্ষা করে চলার ক্ষেত্রে এ উম্মত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
জালেম— যাদের নেকির তুলনায় গুনাহের পরিমাণ বেশি। মধ্যম শ্রেণি— যাদের নেকি-বদির পাল্লা প্রায় বরাবর এবং অগ্রগামী— আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর তাবেদারির ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী। তবে আল্লাহর রহমতে এ তিন শ্রেণির সর্বশেষ ও চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জান্নাত।
কেউ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর কেউ পাপের শাস্তি ভোগ করার পর। সুরার শেষাংশে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও সহনশীলতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ ইহকালে গোনাহগার বান্দাদের তাৎক্ষণিক সাজা দেন না। যদি এমনই হতো, তাহলে পৃথিবীতে কোনো গুনাহগার-পাপী বেঁচে থাকতে পারত না।
৩৬. সুরা ইয়াসিন (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৩, রুকু ৫) নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্য রাসুল— সুরার শুরুতে কোরআনের কসম খেয়ে আল্লাহ তাআলা এ কথা বলেছেন। (২-৪)। এরপর কুরাইশ-কাফেরদের আলোচনা করা হয়েছে। তারা কুফর ও ভ্রষ্টতায় সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, ফলে তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়। এরপর বলা হয়েছে, উপদেশ বাণী শুনে কেবল বিশ্বাসীরাই সতর্ক হয়। এ কথার পরিপ্রেক্ষিত আল্লাহ তাআলা একটি জনপদের বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী লোকদের দৃষ্টান্ত টেনেছেন। ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ আগামীকাল আলোচিত হবে। (১৩-২১)
লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ