ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের তারাবি

আজ ১৮তম তারাবিতে সুরা আনকাবুত (৪৫-৬৯), সুরা রুম, সুরা লোকমান, সুরা আলিফ-লাম সাজদা এবং সুরা আহযাব (১-৩০) পড়া হবে। আজ পড়া হবে ২১তম পারা। পাঠকদের জন্য আজকের তারাবিতে পঠিতব্য অংশের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো—
প্রকাশনার সময়: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১১

২৯. সুরা আনকাবুত (৪৫-৬৯)

পারার প্রথম আয়াতে কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের এবং সালাত কায়েমের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নবীজি নিরক্ষর ছিলেন, না লিখতে পারতেন, না পড়তে জানতেন। যদি লেখাপড়া জানতেন, তাহলে বাতেল-পূজারিরা সন্দেহ করতে পারত যে, মুহাম্মদ পূর্ববর্তী কিতাব থেকে এসব জ্ঞান অর্জন করেছেন। আসলে বিশ্বাসীদের জন্য তো অলৌকিক বিষয় হিসেবে কোরআনই যথেষ্ট। এরপর অস্বীকারকারীদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে এবং মুত্তাকিদের আলোচনা করা হয়েছে। হিজরতের সময় এবং দ্বীনের পথে যত বিপদাপদ আসে, সব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাতৃভূমি ত্যাগের সময় জীবিকা ও অর্থনৈতিক পেরেশানি থাকা স্বাভাবিক।

তাই সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ অসহায় প্রাণীদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন; তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থাও তিনি করবেন। সুতরাং হিজরতের সময় দারিদ্র্য বা নিঃস্ব হওয়ার ভয় করো না। সুরার শেষে আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, অবশ্যই আমি তাদের আমার সুপথ দেখিয়ে দেই, নিশ্চয়ই আল্লাহ সজ্জনদের সঙ্গে আছেন।’

৩০. সুরা রুম (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬০, রুকু ৬)

কোরআন কারিম আল্লাহ তায়ালার সত্য কালাম এবং চিরজীবন্ত মোজেজা। এর একটি প্রমাণ হলো— কোরআনে বহু ভবিষ্যদ্বাণী বর্ণিত হয়েছে, যুগে যুগে যা বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। সুরার শুরুতে এমনই একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বর্ণিত হয়েছে, যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়েছিল। সুরাটি নাজিলের সময় রোমানরা জীবন-মৃত্যুর চরম সংকটকাল অতিক্রম করছিল। একের পর এক যুদ্ধে পরাজয় বরণ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে কোরআন ভবিষ্যদ্বাণী করে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোমানরা পারসিকদের ওপর বিজয় লাভ করবে। মুশরিকরা ভবিষ্যদ্বাণীটি শুনে বিদ্রূপ করেছিল; কিন্তু ঠিক ৯ বছরের মাথায় কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবে পরিণত হলে মুশরিকদের মুখে চুন-কালি পড়ে যায়।

এছাড়া সুরায় কিছু নিদর্শন এবং প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে, যা আল্লাহর বড়ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। জীবিত থেকে মৃত, মৃত থেকে জীবিতকে মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেন, নিষ্প্রাণ মাটি থেকে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেন। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা তিনিই পয়দা করেন। দিন-রাতে মানুষকে নিদ্রা দ্বারা প্রশান্তি দান করেন। আকাশে বিজলি চমকায়। এতে মনে আশা ও ভয়ের সঞ্চার হয়। অতঃপর বৃষ্টি হলে মৃত জমি পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে। আসমান-জমিন এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কোনো খুঁটি ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে আসমান। মানুষকে বিচিত্র ভাষা ও রং দান করেছেন। এ সবকিছুই তাওহিদ ও একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। সুরায় বলা হয়েছে, সুদ সম্পদ হ্রাস করে, জাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে। আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রধান কারণ মানুষের গোনাহ। কেয়ামতের বিবরণের মাধ্যমে সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৩১. সুরা লোকমান (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৪, রুকু ৪)

পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সুরাটির সূচনা। এরপর পুরো সুরায় রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি-কুশলতার বিবরণ। সুরার দ্বিতীয় রুকুতে সন্তানকে লক্ষ্য করে হজরত লোকমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। উপদেশগুলো হলো— আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না, বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। সালাত কায়েম করো। সৎ কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজে বাধা দেবে আর বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করবে। অহংকার পরিহার করবে। চলাফেরায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে এবং নিচু স্বরে কথা বলবে। মনে রাখবে, ভালো-মন্দ তুমি যা-ই করবে, তা ক্ষুদ্র হোক কিংবা বড়, যেখানেই করো না কেন, কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা হাজির করবেনই। সুরার শেষে বলা হয়েছে, মানুষের রিজিক, মৃত্যু, কেয়ামত, বৃষ্টি এবং মাতৃগর্ভের বাচ্চা— এ পাঁচ জিনিসের পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই আছে।

৩২. সুরা সিজদাহ (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩০, রুকু ৩)

পূর্বের সুরার মতো এ সুরাটির সূচনাও পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে। এরপর সুরায় রয়েছে আল্লাহর একত্ববাদ ও কুদরতের প্রমাণের বর্ণনা। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এবং সুষম আকৃতির মানুষ সৃষ্টির বিবরণ। সুরায় মোমিন এবং অপরাধী উভয়ের দুনিয়া-আখেরাতের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ায় মোমিনরা আল্লাহর আনুগত্য করে রাত জেগে জেগে ইবাদত করে।

তাই আখিরাতে তাদের জন্য থাকবে নয়নজুড়ানো সব প্রতিদান। পক্ষান্তরে কাফেরদের জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি। সুরার শেষাংশে মূসা (আ.)-কে তাওরাত দানের প্রসঙ্গ ধরে নবীজিকে বলা হয়েছে, আল্লাহর সঙ্গে আপনার সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত। সুতরাং কাফিরদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখুন।

৩৩. সুরা আহযাব (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৩, রুকু ৯)

সুরায় মৌলিকভাবে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে: সামাজিক শিষ্টাচার, ঐশী বিধিবিধান এবং নবী-যুগে সংগঠিত দুটি যুদ্ধ, তথা গাজওয়ায়ে আহজাব ও গাজওয়ায়ে বনি কুরাইজা। সুরাটিতে যুদ্ধকালীন ঈমানদারদের অবস্থান এবং মুনাফিকদের কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। জাহেলি যুগের কিছু ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসের খণ্ডন করা হয়েছে। পালকপুত্র সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা বর্ণনা করা হয়েছে। একই হূদয়ে ঈমান এবং কুফরের সম্মিলন ঘটতে পারে না মর্মে ঘোষণা রয়েছে। সুরায় বলা হয়েছে, আল্লাহ-প্রার্থীদের জন্য নবীজীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট সেন্ট্রাল মসজিদ

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ