ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোজার প্রতিদান দেন স্বয়ং আল্লাহ

প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১০:২৭

রোজা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল। আল্লাহর প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। তার সন্তুষ্টি অর্জনের উজ্জ্বল সোপান। রোজাব্রত পালনের ফজিলত ও প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দেন। অন্য সব আমলের সওয়াব ফেরেশতার মাধ্যমে পৌঁছান কিংবা আমলের সওয়াব পূর্বনির্ধারিত থাকে। কিন্তু রোজাই একমাত্র আমল— যার সওয়াব আল্লাহ নিজেই দান করেন। কেননা মানুষের সব আমল তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আল্লাহর জন্য। আল্লাহর কথা প্রিয় নবীর কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে এভাবে—‘সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।’ (বুখারি : ১৮৯৪)

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সংগম ও সব ধরনের অশ্লীল, অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকেন রোজাদার। ইবাদত-আমলে রাঙিয়ে দেন জীবন। পাপ-পঙ্কিলতার দেয়ালে লেপ্টে দেন শুদ্ধতার পলেস্তরা।

রোজা বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়, বান্দাকে করে মহিমান্বিত ও মর্যাদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন। রোজা একমাত্র আমল, যার জন্য রয়েছে জান্নাতের নির্ধারিত দরজা— যার নাম ‘রাইয়ান’। যে দরজা দিয়ে শুধু রোজা পালনকারী ব্যক্তি প্রবেশ করবে। রোজা ভঙ্গকারী ব্যক্তি রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে, যাতে এ দরজাটি দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ না করে।’ (বুখারি: ১৮৯৬)

ইবনে হিব্বান কিতাবে আছে, ‘আবু উমামা (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দেন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বলেন— ‘তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো আমল নেই।’

মানুষের পেটে দীর্ঘ সময় ধরে খাবার না পৌঁছলে পেটে এক ধরনের বাষ্প তৈরি হয়। বাষ্প থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। সেই বাষ্প যখন ঢেঁকুর অথবা ‘হাইয়ের’ সঙ্গে মুখ দিয়ে বের হয়, তখন সেটা দুর্গন্ধ হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধটা বিস্বাদ ঠেকে। অস্বস্তি লাগে। একজন রোজাদার ব্যক্তি দিনের পুরোটা সময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় তার মুখের শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ দুর্গন্ধটা আমাদের কাছে যদিও অস্বস্তি লাগে, কিন্তু আমাদের মালিক আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়। এই গন্ধে আল্লাহ বিমোহিত হন। এই ঘ্রাণে সুবাসিত হন। আল্লাহর পছন্দের কথা রাসুল (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেন— ‘রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ তা’আলার কাছে কস্তুরির ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়।’ (মুসলিম: ১১৫১) মানুষ গুনাহ করে। জীবনের দেয়ালে পাপ-পঙ্কিলতার আবরণ ফেলে দেয়। তখন জীবন থেকে শুদ্ধ সভ্য জীবন পালিয়ে বেড়ায়। গুনাহের বোঝাকে সরিয়ে জীবনকে পবিত্রতার সমুদ্দুরে স্নাত করে রোজা। রোজা মানুষের গুনাহকে ধুয়ে মুছে দেয়। রাসুল (সা.) বলেন— ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি : ১৯০১)

রোজা মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে রাখে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়। ব্যক্তিকে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। হাদিসে আছে, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রূপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৩৯)।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ