ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর ভিন্নতায় এ দেশের রং, ঢং, সাজ-সজ্জায় বিস্তর পরিবর্তন হয়। ঋতুর পালাবদলের ধারাবাহিকতায় শিশিরের হালকা আগমন ও বায়ুর শীতলতায় আসে শীত। নাতিশীতোষ্ণ অগ্রহায়ণের পর শুরু হয় শীত। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল।
শীতকালে হাড়-কাঁপানো শীতে ভীষণ কষ্ট করে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। দারিদ্র্যের কশাঘাতে কাপড়ের অভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ে তারা। শীতের প্রাদুর্ভাবের সময় মোটা জামা কিংবা কম্বলের অভাবে দেশের কোথাও কোথাও মানুষের মৃত্যুর খবরও আসে। ছিন্নমূল মানুষ, বিশেষ করে শীতের সকালে পথশিশুদের জীর্ণ-শীর্ণ পোশাক সত্যিকারের মানুষকে ভাবিয়ে তোলে।
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। দরিদ্র ও এতিমদের পাশে দাঁড়াতে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে। তাদের সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে প্রভু প্রেমের নিদর্শন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর : ৮) শীতকালে একটু উষ্ণতার জন্য খড়কুটা ও কাগজ জ্বালিয়ে মানুষ তাপ পেতে চায়। শরীরকে উষ্ণ রাখতে চায়। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে চায়। ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখো শিশু, বৃদ্ধ ও নারী-পুরুষকে। ওইসব মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা উচিত। শীতের কষ্ট লাঘব করতে তাদের পাশে দাঁড়ানো ইমানি দায়িত্ব। ওইসব বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বড় ইবাদত।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মোমিন অন্য বিবস্ত্র মোমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন। যে মোমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খানা খাওয়ায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। আর যে মোমিন কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করায়, আল্লাহ তাকে এমন শরাব পান করাবেন যার ওপর মোহর লাগানো থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৪৪৯)
প্রাণের নবী (সা.) মানুষকে হূদয় দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। নিজে উপবাস থেকেছেন ঠিকই কিন্তু অনাহারিকে আহার দিয়েছেন। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষকে সাহায্য করেছেন। অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওহিপ্রাপ্তির প্রথম দিন তার বিচলিত অবস্থা দেখে খাদিজা (রা.) অসহায়কে সাহায্য করার প্রসঙ্গ সামনে এনে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো রক্ষা করেন আত্মীয়তার বন্ধন, অন্যের বোঝা বহন করেন, নিঃস্বকে উপার্জনাক্ষম, আহার দেন অতিথিকে, সাহায্য করেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে।’ (বুখারি: ৩)
মানুষ সামাজিক জীব। মানুষকে উপেক্ষা করে মানুষ চলতে পারে না। গরিবের পাশে দাঁড়ানো, অসহায়কে সাহায্য করা, বড়কে সম্মান ও ছোটকে স্নেহ করা ইসলামের শিক্ষা। জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা ইসলামের মৌলিক আদর্শ। সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শনে আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি পেতে হলে মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র হতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ (সহিহ বুখারি: ৬০১৩)
আরেক হাদিসে আছে, ‘আল্লাহতায়ালা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে, তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৪১)
মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়ে বান্দার যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, আল্লাহ তাকে সাতশ’ গুণ বেশি অর্থের সওয়াব দান করবেন। তার আমলের ঝুলি পুণ্যে ভরপুর করে দেবেন। তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহর কাছে তাদের প্রাপ্য কত বেশি জানো? তাদের প্রাপ্যের উপমা হলো একটি শিষ। যার থেকে সাতটি শিষ হলো, প্রতিটি শিষ থেকে আবার শত শস্য উৎপন্ন হলো; কোনো কোনো শিষে আল্লাহ চাইলে আরো বেশি শস্য দান করেন। আসলে আল্লাহ যাকে দেন হিসাব ছাড়া দেন। তিনি তো মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)
ধনীর ধনে গরিবের অধিকার রয়েছে। দুঃখের দিনে বিপন্ন সময়ে গরিবের পাশে দাঁঁড়ানো ধনীর দায়িত্ব। ধনীর অবহেলায় যদি গরিব না খেয়ে কষ্ট করে, শীতের তীব্রতায় শরীর কাঁপে; তাহলে ধনীর হিসাবের খাতায় অপরাধীর গুনাহ লেখা হবে। বিচারের দিনে আল্লাহর সামনে লজ্জিত অপমানিত হতে হবে। ধনী দান না করার দরুণ সেদিন আফসোস করবে; কিন্তু তার আফসোস কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৯-১০)।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ