ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নফল নামাজ কেন এবং কী কী

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:০৪ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:০৬

নফল ইবাদত বলতে বুঝানো হয় আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য যে ইবাদত করা হয়, কিন্তু তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা গায়রে মুয়াক্কাদা কোনো কিছু নয়। কখনো কখনো নফল দ্বারা ফরজ, ওয়াজিব ছাড়া বাকি সব ইবাদতকে বোঝানো হয়। তবে প্রথম ব্যবহারটি ব্যাপক প্রচলিত।

নফল ইবাদতের উদ্দেশ্য

নফল নামাজের দ্বারা মূলত আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বতের পরিমাপ করা হয়। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভালোবাসার বিষয়টি যাচাই হয়। বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে এভাবে বোঝানো যায় যে, মালিকের পক্ষ থেকে কর্মচারিদেরকে দৈনিক কাজের রুটিন ঠিক করে দেয়া হয়। যা তাকে অবশ্যই করতে হবে। আর মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ফরজ। তবে নফলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করে।

আর নফল ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজের বাইরেও কিছু নফল নামাজ রয়েছে। হাদিসে যেসব নামাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে, যেমন: এক সাহাবি প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করবে (বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে); কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা কর তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৩)

তাহাজ্জুদ নামাজ

ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সূরা সিজদা : ১৬)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম : ১১৬৩)

ইশরাক নামাজ

সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতেন। এ সময় দোয়া, তাসবিহ পাঠ ও দ্বীনি আলোচনা করতেন। সূর্যোদয়ের পর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এই আমলের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ’র সওয়াব পাবে।’ (সুনানে তিরমিজি : ৫৮৬)

দুহা বা চাশতের নামাজ

সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে ‘দুহা’র নামাজ আদায় করা হয়। পৃথকভাবে আদায় করার অবকাশ থাকলেও অনেকেই এটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয়তম (রাসুল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (সহিহ বুখারি : ১১৭৮)

সালাতুল আউয়াবিন

মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মুগনির মুহতাজ : ১/৩৪৩)। তবে কেউ কেউ ‘দুহা’ নামাজকেই আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। নাম নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও এই সময় নামাজ আদায়ের গুরুত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১১৬৭)

তাহিয়্যাতুল অজু

অজুর মাধ্যমে অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল অজু। নিষিদ্ধ সময়ের বাইরে যেকোনো সময় এই নামাজ আদায়ের অবকাশ রয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করল তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (সহিহ মুসলিম : ২৩৪)

তাহিয়্যাতুল মসজিদ

মসজিদে প্রবেশ করার পর আদায় করার নামাজ। আল্লাহ মসজিদে আসতে পারার কৃতজ্ঞতা ও মসজিদের সময়টুকু ফলপ্রসূ হওয়ার প্রার্থনা হিসেবে এই নামাজ পড়া হয়। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া অন্য সময়ে মসজিদে প্রবেশের পর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যায়। তবে নামাজের জামাত ও ওয়াক্তের নির্ধারিত সুন্নত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর বসে।’ (সহিহ বুখারি : ১১৬৭)

তাওবার নামাজ

নামাজের সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তাই হাদিসে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশনা রয়েছে। যে কোনো গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এ নামাজ পড়া যায়। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো বান্দা পাপ করে ফেলে, এরপর সে ভালোভাবে অজু করে এবং দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৫২১)

নফল ইবাদত সম্পর্কে ভুল ধারণা

নফল ইবাদতের ব্যাপারে আমাদের ভুল ধারণা রয়েছে। যে কারণে আমরা আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বিরত হচ্ছি। অনেকে মনে করেন নফল মানে অতিরিক্ত ইবাদত। তা না করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু নফল নামাজের লক্ষ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তা অতিরিক্ত কোনো বিষয় নয়। বরং ফরজ ইবাদত পালনের ঘাটতি পূরণ করা হয় নফল দিয়ে। তাছাড়া নফল ইবাদতকে নামাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নামাজ ছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধানের ক্ষেত্রেও নফল আদায়ের সুযোগ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত ফরজ নামাজগুলো আদায়ের পাশাপাশি হাদিসে ঘোষিত নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ

রোগী কল্যাণ সোসাইটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ