ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মহামারি ও সংকটময় মুহূর্তের কিছু আমল

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০৫:০৪

আল্লাহর অশেষ দয়ায় বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির প্রকোপ অনেকটা কমে এসেছে। দেশে দেশে চলছে নবআবিষ্কৃৃত টিকা প্রদান কার্যক্রম। মানুষ কিছুটা স্বস্তিবোধ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, থেমে নেই মৃত্যু। নতুন আক্রান্ত বন্ধ হয়নি। ফলে এখনো কাটেনি দুশ্চিন্তা। আগামী কত দিনের মধ্যে এ মহামারি নির্মূল হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া অতীতেও এমন মহামারি এসেছে, আগামীতেও আসবে।

এ ক্ষেত্রে আমরা যারা মুসলিম, তাদের জন্য হাদিসে বর্ণিত এমন কিছু দোয়া ও আমল আছে, যা অনুসরণ করলে আশা করা যায় আল্লাহ এ বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। এগুলো যে কেবল করোনাভাইরাসকেই রোধ করবে তা নয়; বরং আল্লাহর ইচ্ছায় অন্যান্য বালা-মুসিবতও দূর করবে। দোয়া ও আমলগুলো সংক্ষেপে নিম্নে উল্লেখ করছি :

১. বিভিন্ন রোগবালাই থেকে বেঁচে থাকার জন্য হাদিসে বর্ণিত নি¤েœাক্ত দোয়াটি বারবার পড়তে থাকুন :

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম।

(সহিহ ইবনে হিব্বান : ১০১৭; সুনান আবি দাউদ : ১৫৫৪; মুসনাদ আহমাদ : ১৩০০৪)

২. করোনাক্রান্ত বা অন্য কোনো বিপদে নিপতিত ব্যক্তিকে দেখলে নি¤েœাক্ত দোয়াটি পড়–ন; তাহলে জীবনে কখনো সে রোগ বা বিপদে নিপতিত হবেন না ইনশাআল্লাহ :

আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আ’ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি ওয়া ফাজ্জালানি আলা কাছিরিম মিম্মান

খালাকা তাফজিলা।

(সুনান তিরমিজি : ৩৪৩১; সুনান ইবনে মাজাহ : ৩৮৯২; মুসনাদ আবি দাউদ তায়ালিসি : ১৩)

৩. হাসপাতাল, কারো বাসা কিংবা অন্য কোথাও গেলে নি¤েœাক্ত দোয়াটি পড়–ন; ইনশাআল্লাহ সেখানে থাকাকালীন কোনো বিপদে আক্রান্ত হবেন না :

আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন

শাররি মা খালাকা।

(সহিহু মুসলিম : ২৭০৮; সুনান তিরমিজি : ৩৪৩৭; সুনান নাসায়ি, কুবরা : ১০৩১৮)

৪. প্রত্যেহ সকাল-বিকেল তিনবার করে নি¤েœাক্ত দোয়াটি পড়–ন; ইনশাআল্লাহ সেদিন আপনি আকস্মিক কোনো ক্ষতি বা বিপদে নিপতিত হবেন না :

বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহুয়াস

সামিউল আলিম

(সুনান আবি দাউদ : ৫০৮৮; সুনান তিরমিজি : ৩৩৮৮; মুসনাদ আহমাদ : ৫২৮)

৫. দোয়া ইউনুস বেশি বেশি করে পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে বিপদ ও মহামারিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। এটা পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করেন। দোয়া ইউনুস :

লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু

মিনাজ জালিমিন

(সুনান তিরমিজি : ৩৫০৫; মুসনাদ আহমাদ : ১৪৬২)

৬. অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করতে থাকুন। প্রসিদ্ধ ইসতিগফারও পড়তে পারেন, সাইয়িদুল ইসতিগফারও পড়তে পারেন। তবে সাইয়িদুল ইসতিগফারই উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।

প্রসিদ্ধ ইসতিগফার :

আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

(আবি দাউদ : ১৫১৭; মুসনাদ আহমাদ : ১১০৭৪)

সাইয়িদুল ইসতিগফার :

আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ লাকা বিজামবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা

(সহিহ বুখারি : ৬৩০৬; সুনান তিরমিজি : ৩৩৯৩)

৭. প্রচুর পরিমাণে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে থাকুন। সব বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুবই কার্যকর একটি দোয়া।

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা

(সহিহ মুসলিম : ২৭৩৯)

৮. সকাল-বিকেল ম্নোক্ত দোয়াটি একবার করে পড়ুন।

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দিনি ওয়া দুনইয়াইয়া ওয়া আহলি ওয়া মালি, আল্লাহুম্মাসতুর আউরাতি ওয়া আমিন রাউআতি, আল্লাহুম্মাহফাযনি মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি ওয়া মিন ফাউকি ওয়া আউজু বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।

(সুনান আবি দাউদ : ৫০৭৪, ইবনে মাজাহ : ৩৮৭১

৯. সকাল-বিকেল তিনবার করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়–ন। ইনশাআল্লাহ সব কিছুর জন্য এটা যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সুনানু আবি দাউদ : ৫০৮২, সুনান তিরমিজি : ৩৫৭৫)

১০. সব প্রকার গুনাহ ও নাফরমানি পরিত্যাগ করে পুরোপুরিভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকুন এবং দান-সাদাকা বৃদ্ধি করুন। কেননা দান-সাদাকা বিপদাপদ দূর করে দেয়।

এগুলো সবই বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে প্রমাণিত। আল্লাহর ওপর স্থির বিশ্বাস রাখুন এবং সুন্নাহ হিসেবে এসব দোয়ার পাশাপাশি ডাক্তারি নির্দেশনাগুলোও মেনে চলুন। অযথা আতঙ্কিত হবেন না এবং অন্যের মাঝে আতঙ্ক ছড়াবেন না। তাকদিরে মৃত্যু লেখা না থাকলে আপনার কিছুই হবে না। লেখা থাকলে কেউ আপনার বিপদ রোধ করতে পারবে না। তবে আমলের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। বিশুদ্ধ সুন্নাহ জানুন, সুন্নাহর ওপর আমল করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ