বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সনের রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে। রোববার (৭ নভেম্বর) থেকে রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হয়েছে। আর প্রাকৃতিক জাগতিক ও মহাজাগতিক বস্তু ও শক্তির সঙ্গে মিল রেখে সময়ের হিসাব বা ধারণা প্রকাশ করা হয়, আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র হিসাব নিমিত্তে।’ (সূরা আর-রহমান : ৫)।
মানুষ সময়কে ব্যবহারিক পর্যায়ে বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন, দিন-রাত, প্রহর ও ঘড়ি-ঘণ্টায় বিভক্ত করে নিয়েছে। আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের চতুর্থ মাস হলো রবিউস সানি। কেউ কেউ একে রবিউল আখির মাস বলে থাকেন। এটি রবিউল আউয়াল মাসের জোড়া মাস। ‘রবি’ অর্থ বসন্ত আর ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম, ‘সানি’ অর্থ দ্বিতীয়, ‘আখির’ অর্থ শেষ বা অন্য। রবিউস সানি অর্থ হলো বসন্তকালের দ্বিতীয় মাস বা অন্য বসন্ত। মহানবী (সা.)-এর দুনিয়াতে আগমনের মাস, হিজরতের মাস ও ওফাতের মাস রবিউল আউয়ালের জোড়া মাস হিসেবে রবিউস সানি মাসও বেশ তাৎপর্যমণ্ডিত। এই মাসের মূল দিবস হিসাবে ফাতিহা ইয়াজদাহম পালন
১১ রবিউস সানি (আগামী ১৭ নভেম্বর ২০২১ বুধবার) ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম হিসেবে পালিত হয়। ফাতিহা বলতে বোঝানো হয়, কোনো মৃতের জন্য দোয়া করা, ঈসালে সওয়াব করা। ইয়াজদাহম ফার্সি শব্দটির অর্থ একাদশ। ৫৬১ হিজরি মোতাবেক ১১৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ রবিউস সানী তারিখে বড়পীর হিসেবে খ্যাত শায়খ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু উপলক্ষে রবিউস সানির ১১ তারিখে যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন, ওরস ও ফাতিহাখানি করা হয় তাকে বলা হয় ফাতিহা ইয়াজদাহম।
ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও ওরস করা শরিয়ত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচু মানের ওলি ও বুজুর্গ ছিলেন। তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোনো দিন তার জন্য দোয়া করলে এবং জায়েজ তরিকায় তার জন্য ঈসালে সওয়াব করলে তার রূহানি ফয়েজ ও বরকত লাভের কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।
রবিউস সানি মাসের কিছু ভিত্তিহীন আমল
রবিউল আখির (রবিউস সানি) মাসে শরিয়তে বিশেষ কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি; কিন্তু বার চান্দের আমল জাতীয় কিছু কিতাবে রবিউস সানি মাসের আমল হিসাবে কিছু ভিত্তিহীন নামাজ ও আমল আবিষ্কার করা হয়েছে।
কোনো কোনোটিতে ‘বর্ণিত আছে যে, রবিউস সানির নতুন চাঁদ দেখে যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর দুই রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়বে এবং প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সঙ্গে সূরা ইখলাস। কোনোটাতে আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এ মাসের শেষ রাতে দু’রাকাআত করে চার রাকাআত নফল নামাজ এ নিয়মে আদায় করে, আবার কোনোটাতে বর্ণিত আছে, যে এ মাসের প্রথম থেকে সূরা মুজ্জাম্মিলের আমল করবে তার খুবই উপকার হবে..’ ইত্যাদি।
এ সকল নামাজ ও আমল সবই ভিত্তিহীন। যেহেতু বার চাঁন্দের আমল বিষয়ক বই লেখা হচ্ছে, ফলে অন্যান্য মাসের বিভিন্ন বানোয়াট নামাজের পদ্ধতির সঙ্গে মিল রেখে মনগড়াভাবে কিছু নামাজ ও আমলের কথা রবিউস সানির আমল শিরোনামে লিখে দেয়া হয়েছে। আর রবিউস সানির নামাজ ও আমল এমন বানোয়াট বিষয় যে, জালহাদিস বিষয়ক কিতাবেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হাদিস জালকারীরাও এ বিষয়ে তেমন কিছু জাল করেনি; বরং এগুলো বারো চাঁন্দের আমল জাতীয় কিতাবের কিছু লেখক কর্তৃক জালকৃত।
রবিউস সানি মাসে করণীয়
এ মাসেও তাই করণীয় অন্য মাসে যা করণীয়। সাধারণ আমলগুলোর পাশাপাশি সবধরনের ছোট-বড় গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। আর মাসিক ও সাপ্তাহিক নফল রোজাগুলো করা। আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো ১. তাহাজ্জুদের নামাজ, ২. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও ৩. রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ। (সহিহ বুখারি : ১৯৭৫)।
আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতেন।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
প্রিয়নবী (সা.) এ দু’দিন রোজা রাখার গুরুত্ব বর্ণনা করে ঘোষণা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তায়ালার দরবারে) আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ যেন রোজা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হয়; এটাই আমার পছন্দনীয়।’ (তিরমিজি)
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ