আজকাল অনেকের মুখে একটা কথা বেশ শোনা যায়, ‘এত ওয়াজ নসিহত হচ্ছে, কই মানুষের অন্তরে তো কোমলতার রেশ মাত্র নেই!’ হ্যাঁ সত্যিই! নসিহতে কোনো কাজ হচ্ছে না আমাদের মধ্যে। কিছুতেই হেদায়েতপ্রাপ্ত হচ্ছি না।
এই তো ফোন ঘাটছি, দারুণ একটা দাওয়ামূলক গল্প কিংবা প্রবন্ধ দৃষ্টিগোচর হলো, চট করে পড়ে ফেললাম। কমেন্টও করলাম ‘মাশাল্লাহ’। কিন্তু পোস্টটি আমাদের ভেতরে ইফেক্ট ফেলছে না। লেখাটি ছিল হারাম বর্জন বিষয়ে কিংবা হৃদয়বিদারক কোনো ঘটনা। পড়ে ভালো লাগলেও মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। একটার পর একটা বই কিনছি আর পড়ছি। এমনকি বড় বড় শায়েখগণের আলোচনা কেবল শুনেই যাই। সে অনুযায়ী চলতে পারছি না। যেন সেসব আমরা চোখ দিয়ে দেখি আর কান দিয়ে শুনি। আজ আমরা যেসব হারাম কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকি, সে বিষয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই অবগত। তবুও কেন হেদায়েতের আলো জ্বলে উঠছে না? কারণ, আজ আমরা অজ্ঞ। সব কিছু জেনেবুঝেও নিজেদের অজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। হৃদয়ে সত্য জ্ঞানের আলো থাকলে অবশ্যই দ্বীনি নসিহত আমাদের বুঝে আসত। সঠিক বুঝটা রাখতে না পারলে এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের বাণী অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা না করলে অন্তরে আলো কখনই দেখা দেবে না।
আর আমাদের নিয়তগুলো মোটেই সহিহ নয়। নিয়তের মধ্যে গ-গোল আছে বিধায় আমরা দাওয়াহমূলক আলোচনা থেকে উপকৃত হতে পারছি না। আমাদের নিয়ত যদি থাকে এমন যে, আলোচনা শুনে কিংবা বই পড়ে সে অনুযায়ী আমল করব, তবে অবশ্যই আমাদের ভেতরে আলো জ্বলে উঠবে।
যখন নিয়ত করি আমরা চেষ্টা করব কোরআন-হাদিস অনুযায়ী জীবনযাপন করার, তখনই শয়তানের প্ররোচনা এবং নফস নামক সবচেয়ে নিকটের শত্রু চাইবে একটু গুনাহ করি। কিন্তু নফস দমন করে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করে আমাদের নিয়তের ওপর অটুট থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের নিয়তেই ভেজাল।
আমরা পড়ি কিংবা শুনি আল্লাহকে রাজি বা খুশি করার জন্য নয়। বরং বক্তার কণ্ঠস্বর কেমন? বক্তা কতটুকু টান দিল, কী করল না করল ইত্যাদি। ভালো লাগেনি শুনব না। কিংবা লেখাটা সামনে এসেছে, পড়ার দরকার পড়ে কিছু না বুঝে মাশাল্লাহ লিখে ফেলি অথবা ভালো লাগল না তাই পড়বও না। হ্যাঁ, এই ভাবনাটাই আমাদের অন্তরকে অশুদ্ধ করে রেখেছে। সবকিছু হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাকে রাজি-খুশি করার জন্য। তবেই না হেদায়েতের দেখা পাব। বের হতে পারব কঠিন গোমরাহি থেকে।
শুধু শুনে এবং পড়ে নয়, তা আমল করলেই হবে সার্থকতা। মনে রাখব, শয়তান আমাদের প্রধান শত্রু না বরং নফসই আমাদের প্রধান শত্রু। শয়তান তো কেবল বাহির থেকে কুমন্ত্রণা দেয়। কিন্তু আমাদের নফস তো ভেতরে। নফসকে দমন করতে হলে, নিজেকে সদা আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত রাখতে হবে। মহান রব যাকে চান হেদায়েত দান করতে পারেন। তাই সর্বদা তার নিকট নিজেরসহ সবার উত্তম হেদায়েতের আশা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন, হেদায়েতের নূর লাভ করার তাওফিক দান করুন।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ