ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নুকতাবিহীন হরফে লেখা সীরাতের বই

লাবীব আব্দুল্লাহ
প্রকাশনার সময়: ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১২:০৩

বসন্ত আসে প্রকৃতিতে। চলে যায় কিছুদিন পর। মানব-জীবনে এমন এক বসন্ত এসেছিল, যার আবেদন ও প্রভাব থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। সে বসন্তের ফুটন্ত ফুলের নাম মুহাম্মদ। যার ঘ্রাণে মাতোয়ারা বিশ্ববাসী। এ ফুলের গুণগান গেয়েছেন পৃথিবীর কথাশিল্পীরা। এ ফুলের প্রশংসায় দিনরাত কাটিয়ে দিয়েছেন কতো লেখক-গবেষক, কিন্তু শেষ করা সম্ভব হয়নি সে ফুলের কোনো পাপড়ির আলোচনাও। পৃথিবীর প্রায় সাড়ে চার হাজার ভাষায় রয়েছে। সেই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামের ফুলের সুরভিত ঘ্রাণে অশান্ত পৃথিবীর মানুষ শান্তি পেয়েছে। সেই ফুলের আলোচনা করলে হয় ধন্য। গর্বিত। আলোকিত হয় মানব-হৃদয়। পুরস্কৃত হয় সেই ফুলকে যারা ভালোবাসে। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় হাবীবকে কাউসার দিয়েছেন। তার জীবনীকার ও তার অনুসারীগণ পুরস্কার পাবেন আবে কাউসারে। সেই ফুলের চিত্রায়নে অক্ষম পৃথিবীর সব ভাষা। বর্ণগুলো হয় তার শানে রচিত হলে। এমন সোনালি একটি বইয়ের নাম ‘হাদিয়ে আলম’। ১৯৮২ সালে বইটি লিখেছেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম, সুসাহিত্যিক, কবি মুহাম্মদ ওয়ালী রাজী উসমানী।

নবীজির জীবনী নিয়ে রচিত পৃথিবীর বিখ্যাত বইয়ের একটি হাদিয়ে আলম। অনুপম বই। উর্দু ভাষার সুকতামুক্ত, বিন্দুহীন হরফের সংখ্যা ১৮টি। এই ১৮টি বর্ণের তুলিতে নবী-জীবনের যে ছবি এঁকেছেন তা সীরাতের ইতিহাসে বিরল ও বিস্ময়কর কাজ। ৩০৪ পৃষ্ঠার বইটি ২০ পৃষ্ঠা ভূমিকা ও অন্যান্য আলোচনা। এছাড়া পুরো বইয়ে একটি নুকতা বা বিন্দুযুক্ত হরফ নেই। নবী-জীবনের জন্ম থেকে ওয়াফাত পর্যন্ত লিখেছেন নবীপ্রেমিক এই সাহিত্যিক। নবী-জীবনের কোনো অধ্যায়ে যেমন কোনো কলঙ্কের বিন্দু নেই; মুহাম্মদের নামের হরফগুলোতে যেমন কোনো নুকতা বা বিন্দু নেই, আহমাদ নামেও নেই কোনো নুকতা বা বিন্দু। অনুরূপ এই বইয়ের কোনো হরফে নুকতা দেখা যায় না। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই বইয়ে শিরোনাম রয়েছে ২৭৫টি। এতেও নেই কোনো বিন্দুযুক্ত বর্ণ। লেখক পাকিস্তানের সুশীল পরিবারের গ্রান্ড মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. এর সুযোগ্য সন্তান।

আল্লামা মাআরিফুল কোরআন লিখে বিশ্বে পরিচিত। এই লেখকের ভাই পাকিস্তানের শরীয়া আদালতের চিফ জাস্টিস, পৃথিবীখ্যাত মুফতি আল্লামা মুহাম্মদ তাকী উসমানী। এই সম্পর্কে আল্লামা তাকী উসমানী বলেন, ‘এই বইটিতে যেমন রয়েছে সাহিত্যরস ও শব্দের শৈল্পিক সৌন্দর্য, বিশুদ্ধ তথ্যসূত্র থেকে এমন সব তথ্যের সমাহার রয়েছে সীরাত বিষয়ক বৃহৎ কলেবরে গ্রন্থেও পাওয়া দুষ্কর। হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর অন্যতম খলীফা ডা. আব্দুল হাই আরেফী বলেন, সাহিত্যে আঙ্গিকে লেখা এটি এক অনন্য বই। বিস্ময়কর সাহিত্য-কর্ম। সীরাত সাহিত্যের উপমা বিরল। পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির ধর্ম অনুষদের বিভাগীয় প্রধান ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ ওয়ালী রাজী এমন এক বিস্ময়কর বই লিখেছেন, যা ইতোপূর্বে কেউ লেখেনি। লেখক ঘটনা বর্ণনার বিশুদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন। এই উপমহাদেশের বাদশাহ আকবরের যুগে আবুল ফয়েজ ফয়জী কোরআন কারীমের এক তাফসির লেখেন নুকতামুক্ত হরফ দ্বারা। সাওয়াতিউল ইলহাম নামের এই তাফসির পৃথিবীর এক বিস্ময়কর কাজ। মুহাম্মদ ওয়ালী রাজী বিশ্বময় সীরাতে রাসুলের ওপর রচিত কিতাবগুলোর তালিকায় বিরল সাহিত্য-কর্ম দ্বারা নবীপ্রেম প্রকাশ করেছেন। বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘অ্যা মহজ আল্লাহ তাআলা কি হ্যায়’। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সম্ভব হয়েছে এ কাজ।

সন্ত্রাসের কবলে পৃথিবীবাসীর মুক্তির পথ হলো সীরাতে রাসুলের পথ। নবীজির আদর্শই মুক্ত করতে পারে হতাশার সাগরে ডুবন্ত মানব ও মানবতাকে। ওয়ালী রাজীর পথ ধরে লেখকরা ছবি দেবে মুহাম্মদ নামের ফুলের সুঘ্রাণ। সুরোভিত হবে পৃথিবী। মাতোয়ারা হবে দুনিয়া সেই খুশবুতে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ